আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কসবায় সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে শক্তির মহড়া, ভাংচুর ও লুটপাট

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান দু’গ্রুপের মধ্যে শক্তির মহড়া প্রদর্শিত হয়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার ( ১৬ নভেম্বর ) রাতে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তাসরেক আলম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো.শরিফুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে ছাত্রলীগের নামধারী একটি গ্রুপ। এ ঘটনা নিয়ে কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আইনমন্ত্রী অস্বস্তিতে ভূগছেন। অপরদিকে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়; সাবেক সহসভাপতি তাসরেক আলমের মধ্যে রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মতবিরোধ চলে আসছিলো। গত বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কসবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির প্রস্তুতি সভা চলা অবস্থায় চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন রিমন ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সহসভাপতি তাসরেক আলমের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষনিক ঝামেলা মিটিয়ে দিলেও পরক্ষনেই শরীফের নেতৃত্বে একদল লোক এসে বর্তমানে ফুটপাতে গড়ে উঠা ছাত্রলীগের অফিসে চেয়ার ভাংচুর করে। এসময় আইনমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব ও কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন তাদের নিবৃত্ত করে সরিয়ে দেয়। এ খবর শুনে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মনির হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আফজাল হোসেন রিমনের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ দা, লাঠি নিয়ে কসবা পুরাতন বাজারে মহড়া দেয়। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে দোকান পাট বন্ধ করে দিক বিদিক পালায়। এ সময় আইনমন্ত্রীর এপিএস ও অপর যুগ্ন আহ্বায়ক এমজি হাক্কানী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। পরে কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ আবদুল মালেক ও সহকারী কমিশনার (ভৃমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোবাইদা আক্তার ৩০/৩৫ জন পুলিশ সহ কসবা পুরাতন বাজারে অবস্থান নেন। এ সময় কসবার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দলীয় নেতা কর্মীরা কসবা সুপার মার্কেট প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। রাত ১০টার পর পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সকলকে এলাকা ত্যাগ করার কথা বলেন।
এদিকে চড়লান গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী রহমত উল্লাহ (২৪) ও মেহেদী হাসান বাবু (২০) সাংবাদিকদের জানান; তাসরেক ও শরীফ ডাকবাংলোতে গত শুক্রবার সকালে মারধোর করে। তাই আমাদের গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে রাতে তাদের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যায়। এ বিষয়ে তাসরেক ও শরীফের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তারা জানান; এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সবই বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের সাজানো। আমরা মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয়ের কর্মী। আইনমন্ত্রী মহোদয় আমাদের ভালোবাসেন এটাই তাদের প্রতিহিংসার কারন।
ভাংচুৃরের শিকার শরীফের মা মমিনা বেগম (৪৫) জানান, হামলাকারীরা, গত শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে ৮টায় হঠাৎ করে ৩০/৩৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল রামদা ও লাঠি নিয়ে আতর্কিত হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটতরাজ চালায়। ঘর থেকে ২লাখ টাকা ও ২ভড়ি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারীরা আমার ছেলের মালিকানাধীন শরীফ ফার্নিচার নাম দোকানটি ভাংচুর করেছে। আমার নাতনী পঞ্চম শ্রেনীর সমাপনী পরিক্ষার্থী । সে এ ঘটনা দেখে বেহুশ হয়ে যায়। আমরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা এই ঘটনার জন্য আইনমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই। অপরদিকে তাসরেক আলমের মা শামীমা রশিদ (৫০) জানায়; হামলাকারীরা শরীফদের বাড়ি থেকে এসেই আমাদের বাড়ির দুটি বৈদ্যুতিক মিটার ভেংগে ফেলে। তারা বাড়ির প্রধান দরজা ভাংগার জন্য ব্যাপক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অন্যান্য দরজা -জানালা ও বাইরের সীমানা বেড়া ক্ষয়ক্ষতি করে। ্্্্এ সময় আমার মেয়ে ও পুত্রবধূদের আর্তচিৎকারে পুরো পাড়া প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিলো। আমরা আওয়ামী লীগ পরিবার। আওয়ামী লীগের লোকজন দ্বারা এভাবে নির্যাতিত হবো কোনদিন ভাবতে পারিনি।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব এডভোকেট রাশেদুল কায়সার ভূইয়া জীবন বলেন, আধিপত্য নিয়ে এটা তাদের পূর্ব বিরোধ। এই হামলার সাথে বিএনপি- জামাত বা দলীয় সংক্ষুব্দ ব্যাক্তিদের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি। ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে যে পূর্ব বিরোধ চলছে তা আমরা সাংগঠনিকভাবে সমাধান করবো।
উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো.মনির হোসেন জানান, তাসরেক ও শরীফ বিএনপি’র সাথে আতাঁত করে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে একটি অডিও রয়েছে। অপরদিকে তাসরেক ও শরীফ সাংবাদিকদের জানায়; আমাদের রাস্তাঘাটে ও বাড়িতে হামলা করেছে ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক আফজাল হোসেন রিমনের সমর্থিত ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের লোকেরা।
এ বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ কসবা থানা মো.আবদুল মালেক সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মাঝে এ ঘটনাটি তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি আরো বলেন এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.