প্রশান্তি ডেক্স॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোনো অবস্থাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করবে না বলে জানিয়েছেন জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গত শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন প্রাঙ্গণে আয়োজিত আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন।
বিএনপিসহ অন্যান্য শরিকদের উদ্দেশ্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, একবার বয়কট করে ভুল করেছি। আর নির্বাচন বয়কট করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকে লড়ে যেতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা করে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনে ওরা ‘আওয়ামী’ লীগ যত রকম ১০ নম্বরি করার করুক, আমরা ভোট দেবো, ভোটে থাকব। হাজারে হাজারে ভোট দেবো। সবাই ভোট কেন্দ্রে থাকব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকার সংবিধানের কথা বললে আমার হাসি পায়। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকাই অসাংবিধানিক। সকাল, দুপুর, রাত সংবিধান লঙ্ঘন করছে। কোথায় লেখা আছে, ঘোষণা দিয়ে এমপি ‘সংসদ সদস্য’ হওয়া যায়। এই সরকারে বেশির ভাগ এমপি বিনা ভোটে নির্বাচিত। ‘ অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ক্ষমতা নয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন করছে। ওইখানেই নিহিত আছে গণতন্ত্রের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের যদি কোনো স্বাধীনতা না থাকে তাহলে কোথাও কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।’
ঐক্যফ্রন্টের এ মুখপাত্র বলেন, ‘সরকার ইচ্ছেমতো বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমি বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার জন্য আপনাদের আন্দোলন করার জন্য আহ্বান জানাব। ওই খানেই নিহিত আছে গণতন্ত্রের স্বাধীনতা।
বিচার বিভাগের যদি কোনো স্বাধীনতা না থাকে তাহলে কোথাও কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।’ মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘এই নির্বাচনে যদি গণতন্ত্রকামী মানুষ জয়ী হতে না পারে চিরতরে বিচার ব্যবস্থা চলে যাবে একটা দলের হাতে। গণতন্ত্র চলে যাবে একটা দলের হাতে সেই কথাটি আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, এই মানুষটি সত্য কথা বলেছেন এবং তিনি রায়ও দিয়েছেন সত্যভাবে।
সেজন্য তাঁকে এই সরকার দেশ থেকে জবরদন্তি বের করে দিয়েছে। তাঁকে দেশত্যাগ করতে বলেছে।’ সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নেয়া হবে: জাফরুল্লাহ তবে ফ্রন্টের অন্যতম নেতা একগাদা মামলায় অভিযুক্ত ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন মামলা বা গ্রেপ্তারের ভয়ে পলিয়ে থাকা নয়, ঐক্যবদ্ধ অন্দোলনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নেয়া হবে। বিএনপি লবিং করছে: কাদের ওদিকে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের প্রশ্ন তোলার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি প্রচুর ‘টাকা-পয়সা’ দিয়ে লবিং-এর মাধ্যমে এসব করছে। আজ দুপুরে রাজধানীতে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক অনুষ্ঠান শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের বিষয়টি এখন পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর।
এখানে সরকারের কিছু করার নেই। তফসিল ঘোষণার পর থেকে তা নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে গেছে। গত নরসিংদীতে দলীয় কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, গত তিনজনের মৃত্যু হয়। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে থেকে গ্রামে গ্রামে এই ঘটনা ঘটে আসছে, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। কিছুদিন আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, তখন গণমাধ্যমে সেটাকে রাজনীতিতে জড়ায়নি।
এখন নির্বাচন, তাই কিছু কিছু গণমাধ্যম এটাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াচ্ছে। যুক্তফ্রন্ট নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে আসছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, অসুবিধা তো নাই, জোট হলে যুক্তফ্রন্ট কুলা মার্কা আর জাতীয় পার্টি লাঙ্গল মার্কা- করলে যে মার্কায় করবে আমরা সাপোর্ট দেব।’ তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনে নির্দিষ্ট সময়সীমা অনুযায়ী প্রার্থীরা কে কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসবে, সেটা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।