হারুন হত্যার ৫৭ দিন পর মামলা রেকর্ড করলো পুলিশ

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ হত্যার ৫৭ দিন পর কসবার বহুল আলোচিত সিআইডি সোর্স হারুন খুনের মামলাটি রেকর্ড করলো আখাউড়া থানা জিআরপি পুলিশ। গত ৬ নভেম্বর আখাউড়া জিআরপি থানা ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলা নিতে আরো ২৭ দিন অতিবাহিত করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হারুনের স্ত্রী হাসিনা আক্তারের দাবী কুমিল্লায় সিআইডি দারোগা আলী আজম ও কতিপয় চোরাচালানী তার স্বামী সিআইডি সোর্স হারুনকে হত্যা করেছে।
প্রকাশ সিআইডি সোর্স হারুন (৫০) কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী ধজনগরের মৃত সুলতান মিয়ার পুত্র। স্ত্রী সন্তান নিয়ে হারুন কসবা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে স্ত্রীর নামে ক্রয় করা বাড়িতে বসবাস করতো। সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার সোর্সের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে তার সাথে চোরাচালানিদের শত্রুতা বেড়ে গিয়েছিলো। ধজনগর গ্রামে তার পৈত্রিক ভিটেমাটি দখল করে রাখে ওখানকার কিছু চোরাকারবারী। অপরদিকে কসবা পৌর এলাকার হাকড় গ্রামে মৃত শশুরের জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে অনেক মামলায় জড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে একটি চেকের মামলার স্বাক্ষী হওয়ার কারণেও হারুনসহ তার পরিবারটি শত্রুতার শিকার হয়।
হারুনের স্ত্রী জানায় গত ৫ সেপ্টেম্বর তার স্বামীকে আলী আজম ডেকে নিয়ে চকবস্তা এলাকায় চোরাকারবারী ইউছুফ মেম্বার, বাছির, কামাল, মোসলেম, আউয়াল, জাহিদ, শাহআলমসহ ১৪/১৫ জনের একটি দল হত্যা করে ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে ধাক্কা লেগেছে বলে প্রচার করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়। এই চক্রের নেতা আলী আজম সাংবাদিকদেরও অনুরোধ করে ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে ধাক্কা লেগে হারুন নিহত হয়েছে প্রচার করতে। হারুনের লাশটি বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইলে সিআইডি আজম ও সাঙ্গপাঙ্গরা লাশ আনতে দেয়নি। চক্রটি ওই রাতে রেলওয়ে পুলিশ না আসা পর্যন্ত লাশ নেয়া যাবে না বলে লাশটি আটকে রাখে। স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে থাকাবস্থায় রাত ১১টা পর্যন্ত রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। ফলে সাংবাদিকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ চলে গেলে রাত সাড়ে এগারটায় রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিআইডি পুলিশ আলী আজমের কথামত সুরুতহাল রিপোর্ট করে নিহত হারুনের আত্মীয় সজন থেকে স্বাক্ষর নেয়।
এবিষয়ে আখাউরা থানায় নিহত হারুনের স্ত্রী মামলা দিলে পুলিশ ওই মামলা আমলে না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করে বাদীকে নিরুৎসাহিত করে এবং দারোগা জহিরও দাবী করে হারুন গাড়ীর ইঞ্জিনের সাথে ধ্বাক্কা লেগে নিহত হয়। পরে বাধ্য হয়ে হারুনের স্ত্রী হাসিনা আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করে। বিজ্ঞ আদালত এ বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট পাঠাতে বললেও কসবা থানা দায় সারাভাবে বিজ্ঞ আদালতকে অনুরোধ করে রিপোর্ট পাঠায় আদালত যেন এ বিষয়ে আখাউরা রেলওয়ে থানাকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। অথচ কসবা থানা রিপোর্ট প্রেরণের পূর্বেই হারুনকে হত্যা করা হয়েছে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল ময়না তদন্ত টিম রিপোর্ট প্রকাশ করে। ফলে হারুনের স্ত্রী হাসিনা আক্তারের লিখিত অভিযোগটি আখাউরা জিআরপি ওসি শ্যামল কান্তি রেকর্ড করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানায়। এদিকে মামলার অন্যতম আসামী আবদুল আউয়ালকে কসবা থানা উপ-পরিদর্শক গত ৫ ডিসেম্বর গ্রেফতার করেছে। তাকে আখাউরা থানা রিমান্ডে নেয়ার জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রার্থনা জানাবেন বলে রেলওয়ে পুলিশ সাংবাদিকদের জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.