মনোনয়ন বাণিজ্যের ৭৫০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার

সাবিনা॥ এবার নির্বাচনে বিএনপিতে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্যের সিংহভাগ টাকাই বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপিতে মনোনয়ন বঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন পাবার জন্য তারা লন্ডন, সিঙ্গাপুর, দুবাই এবং মালয়েশিয়াতে টাকা পাঠিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, ‘এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।’mononayan banejja 750 kote taka
বিএনপির একাধিক মনোনয়ন বঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তারা তারেক জিয়া বা তাঁরন্যের প্রতিনিধিদের টাকা দিয়েছেন। গত বছর জুন থেকে বিএনপিতে মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু হয় বলেও বঞ্চিতরা জানিয়েছেন। যারা টাকা দিয়েছেন তারা স্বীকার করেছেন যে, টাকা দেওয়ার আগে অন্তত একবার তারা লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তারেক জিয়া তাঁদের যাকে যেভাবে এবং যেখানে টাকা পাঠাতে বলেছেন, সেখানেই টাকা পাঠিয়েছেন। কেউ কেউ একবারে আবার কেউ কেউ একাধিক বার টাকা পাঠিয়েছেন। তারেক জিয়া ছাড়াও বিএনপিতে তারেক ঘনিষ্ঠ অন্তরঙ্গ দু’জন নেতা তারেক জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
মনোনয়ন বঞ্চিত বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নূন্যতম ১০ কোটি থেকে কোথাও কোথাও ১০০ কোটি টাকাতেও মনোনয়ন বিক্রি করেছে। চাঁদপুরের একটি আসনে মালয়েশিয়া প্রবাসী একজন ১০০ কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন কিনেছেন। জানা গেছে, সব টাকা তিনি সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছেন। মানিকগঞ্জের একজন প্রার্থী ২০ কোটি টাকা দিয়ে মনোনয়ন পেলেও তা পরে প্রত্যাহার করা হয়।
টাকা উদ্ধারের জন্য তিনি এখন তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জের একটি আসন বিক্রি হয়েছে ২০ কোটি টাকায়। ঐ আসনে দুজন প্রার্থীর কাছ থেকেই মনোনয়নের জন্য টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও বঞ্চিতদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার একটি আসনে একজন মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী আজ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করেন।
তিনি হুন্ডির মাধ্যমে চার দফায় লন্ডনে ৭ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন। বিএনপি মহাসচিব এখন দলের স্বার্থে এসব নিয়ে ঝামেলা না করার পরামর্শ দেন। মির্জা ফখরুল আশ্বাস দেন, নির্বাচনের পর এসব বিষয় দেখা হবে। সিলেটে মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দাকে প্রথমে ৭০ লাখ, পরে ৫০ লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠান।
সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়রের মাধ্যমে ঐ মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. জোবায়দার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু এখন তিনি ডা. জোবায়দার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না। কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিও চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহের দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর কাছে নগদ টাকা নেন। দুবার দেশে এসে তিনি এই টাকা নেন। কিন্তু এখন সিঁথিকেও পাচ্ছেন না তারা। জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারাই এখন মনোনয়ন বাণিজ্যের বহর দেখে হতবাক। তারা নিজেরাই এ নিয়ে বিব্র্রত বলে জানিয়েছেন দলের এক শীর্ষ নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.