মোবাইল ফোনঃ নীরব ঘাতক

mobil fone nerobডাঃ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (সাইফ)॥ মোবাইল ফোন বিজ্ঞানের এক অভিনব ও অত্যাশর্য আবিষ্কার। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এবং সভ্যতার বিকাশে মোবাইলের ব্যবহার এবং এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ১৯৮৩ সাক থেকে মোবাইল ফোন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ২০০৫ সালে যেখানে ২.১৪ বিলিয়ন ব্যবহারকারী ছিল তা ২০১০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ বিলিয়ন এ। মোবাইল ফোন তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের মাধ্যমে সিগন্যাল আদান প্রদান করে। গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশান (জিএসএম) হচ্ছে অত্যাধুনিক এবং সবচেয়ে বড় যা ৯০০ থেকে ১৮০০ মেগাহার্টয কম্পাংক ব্যবহার করে। যদিও এই কম্পাংকের রেডিয়েশন সহনীয় মাত্রায় রয়েছে, তবুও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর জন্য হুমকিস্বরূপ। কানের বিশেষকরে অন্তঃকর্ণের শ্রনণকোষের বিশেষ ক্ষতিসাধিত হয়। অর্গান অব কর্টি (যা মানুষ সহ অন্যান্যপ্রানীর শ্রবনেন্দ্রিয়) র শ্রবণ কোষ (হেয়ার সেল) গুলো একবার ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা পুনরায় কর্মক্ষম থাকে না। তাই উচ্চ মাত্রায় মোবাইল ফোনের শব্দ এবং তড়িৎ চুম্বকীয় যুগপৎ ভাবে কানের স্থায়ি ক্ষতি করতে পারে। এমনকি বধিরতা এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধি ও হয়ে যেতে পারে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ২০-৪৫ বছর বয়সী মানুষের ২০ ডেসিবেল শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পায়। দীর্ঘমেয়াদী মোবাইল ফোন ব্যবহারের মারাত্তক স্বাস্থ ঝুকি রয়েছে। ব্রেন টিউমার এর সাথে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা নিয়েও গভেষনা চলছে।
শুধু মোবাইল ফোন ব্যবহারই নয় , মোবাইল টাউয়ারের বিকিরিন বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ ঝুকির কারন।
বর্তমানে স্মার্টফোনের ব্যবহার শিশুদেরকেও ঝুকির দিকে ঠেলছে। বিভিন্ন প্রকার গেমস ও উচ্চমাত্রার রিংটোন বা শব্দ শিশুদের দেখার শক্তি ও শ্রবণশক্তির উপর মারাত্তক প্রভাব ফেলে। শিশুদের মানষিক বিকাশ ব্যহত হয়। পরিবার থেকে সম্পূর্ন একটি আলাদা পরিবেশে শিশুরা বেড়ে উঠছে যার ফলে বিষন্নতা, স্নায়ুরোগ, খাবার গ্রহনে অনিহা , মাথা ব্যাথা, এমনকি আত্যহত্যার প্রবনতা ও প্রকট আকারে ধারণ করছে। সাম্প্রতিক কালে ব্লুহোয়েল গেমের কথা প্রাণিধাণযোগ্য।
ব্যস্তনগর জীবনে মানুষ ছুটছে অফুরন্ত। রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফনে কথা বলতে গিয়ে প্রান হারাচ্ছেন অনেকেই। মোবাইল ফোন চার্যে দিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রান হারাচ্ছেন অনেকেই আর পংগুত্ব বড়ন করেছেন আর অনেকজন।
বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ
বাস্তবতার নিরীখে এই কথাটি বর্তমানের সভ্যতার যুগে শতভাগ খাপ খায়। আজকাল কোন জায়গায় কিংবা পারিবারিক কোন জমায়েতে দেখা যেয় সবাই মগ্ন হয়ে আছেন মোবাইল ফোনের পর্দায়। কেউবা ফেইসবুক, কেউবা ভাইবার, আর অন্যরা হয়ত হোয়াটস এ্যপ আর টুইটারের মত কোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ।
মোবাইলের বিভিন্ন টেকনোলজি উন্নতির সাথে সাথে অনেক প্রযুক্তির এর সাথে যুক্ত হচ্ছে। “সেলফি” নামক বহুল ব্যবহ্রত প্রযুক্তির কারণে প্রাণ গেছে কত শত জনের তার ইয়াত্তা নেই।
আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য সেটি হলো মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট এর ব্যবহার পর্ণোগ্রাফীর ভয়াল থাবা গ্রাস করছে আমাদের যুবসমাজকে। যারা নিজেদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে ব্যস্ত রাখছে এই নিষিদ্ধ জগতে এবং জরিয়ে পরছে ঘ্রিণ্য ও অসামাজিক কার্যকলাপে। পারিবারিক কলহ এবং সর্বোপরি মানবিক মূল্যবোধহীন একটি সমাজ ব্যবস্থা ।
এমনিভাবে মোবাইল ফোন তার উপকারী ব্যবহারের সাথে সাথে প্রানঘাতি একটি উপকরণ হয়ে দারিয়েছে। সময় এসেছে এর লাগাম ধরার। সীমিত এবং প্রয়জনীয় ব্যবহার বিধিই কেবল আমাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত ও সুসংযত হতে হবে। তাহলেই আমরা পাব সুস্থ্য, মেধাবি , জ্ঞান পিপাসু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং পরিচ্ছন্ন পারিবারিক বন্ধনের গঠনমূলক সমাজ।
ডাঃ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (সাইফ)
এম.বি.বি.এস(ডি.এম.সি)বি.সি.এস
এম এস, এম সি পি এস (ইএনটি)
কনসালটেন্ট
সদর হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published.