যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে হতাশ বাংলাদেশ

প্রশান্তি ডেক্স॥ বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওই বিবৃতি নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এর আগে ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত বাতিল করে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল)। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে ভিসা না দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করে এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করেন।jokto rasto banglades hotas
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওপর। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ বিদেশি নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাচ্ছে। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইচ্ছুক বিভিন্ন পর্যবেক্ষক দল কিংবা সংস্থা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল আইন ও নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য। এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৭৫ বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সংস্থার বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদেশি নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আনফ্রেলের আসার বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন স্থানীয় ১১৮টি নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ও ২৫ হাজার ৯২০ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিবন্ধন করেছে। তবে হঠাৎ করেই আনফ্রেল বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি বাতিল করেছে। তবে তাদের প্রায় অর্ধেকের মতো সদস্য ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছেন আর বাকিদের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করছে, তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা অধিকার আনফ্রেলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। অধিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা সামঞ্জস্যহীন ও পক্ষপাতমূলকভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। চলতি বছরের অক্টোবর ও ডিসেম্বরে সংস্থাটি প্রকাশিত দুটি নিবন্ধে যা স্পষ্টভাবে চোখে পড়ার মতো। যাই হোক অধিকার নামের ওই সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করেছিল, যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক হিসেবে অধিকার ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অযোগ্যতাকেই প্রতিষ্ঠিত করে।
কেননা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ১৯৭২ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৯১ অনুচ্ছেদের (সি-১) অধীনে নির্বাচন কমিশন ‘এমন একজন ব্যক্তিকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন দিতে পারে, যে ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনে প্রতিদ্বনদ্বী করা কোনো প্রার্থীর সঙ্গে যুক্ত বা সংশ্লিষ্ট নয়। এছাড়াও কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় আচরণ বা কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠান, উদ্দেশ্য বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো কিছুর জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহানুভূতিশীল নয়।’
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো যেকোনো ধরনের গঠনমূলক সমালোচনা করুক বাংলাদেশ তা প্রত্যাশা করে ও স্বাগত জানায়। মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে পুনরায় আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা হয় যে, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ যোগ্য যেকোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল কিংবা সংস্থার আবেদনের অনুমোদন অব্যাহত রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.