আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলকে পূনরায় নির্বাচিত করার জন্য দেশবাসীর কাছে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিযয়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, যাতে করে পুণরায় আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই।’ তাঁর ভাষণে বলেন, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, আজকে স্বাধীনতা পেয়েছে। এ সময় তাঁর নির্বাচনী মহাজোটের উল্লেখ করে যেসব স্থানে মহাজোটের প্রার্থী রয়েছে সেসব আসনের জনগণকে মহাজোটের প্রার্থীকেও ভোট প্রদানের আহবান জানান।
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ: ২১ বিশেষ অঙ্গীকার নিয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহার
‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ‘২১টি বিশেষ অঙ্গীকার’ বাস্তবায়ন করবে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে যে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল, মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদয় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা- লক্ষ্য যান্ত্রিকিকরণ, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু ইকোনোমি- সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
তিন বছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে পৌঁছাবেঃ প্রধানমন্ত্রী
জাপানের গণমাধ্যম নিকে এশিয়ান রিভিউকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী তিন বছরের মধ্যে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। নিকে এশিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা গত প্রায় এক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ হয়েছে। গত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ক্রমাগত এ হার আরও বাড়তে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নারীর ক্ষমতায়নে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা
যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। লেবার পাটির সিনিয়র এমপি জিম ফিটজপ্যাট্রিকস বলেন, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উন্নয়নের রোলমডেল। বিভিন্ন খাতে সম্প্রতি বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘গোল্ডেন ডেভেলপমেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
নারীর ক্ষমতায়নঃ নেতৃত্বে বাংলাদেশ
সকল আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করার পথে রয়েছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানো, দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী উদ্যোক্তা ও কর্মজীবীর সংখ্যা বাড়ানো, নারীর সামাজিক নিরাপত্তা এবং নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের আগেই নারী-পুরুষ সমতা অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৪ অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
অভাবনীয় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এক দশক
গত দশ বছরে নিম্ন আয়ের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য কমেছে। দশ বছরের ব্যবধানে বাজেটের আকার ৮৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এসময় মাথাপিছু আয় ৭৫৯ ডলার থেকে বেড়ে ১,৭৫২ ডলার হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি ৭. ৮৬% অর্জিত হয়; টানা ৩ বছর ধরে ৭% -এর বেশি প্রবৃদ্ধি দেখেছে দেশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩২.২ বিলিয়ন ডলার এবং বিদেশি বিনিয়োগ ৯৬১ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৪৫৪.৮ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। এখন দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের তথ্য মতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ও ২০৫০ এ হবে ২৩ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
নিশ্চিত হবে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা
বিগত এক দশকে বাংলাদেশের শিক্ষা খাত অনেকদূর এগিয়ে গেছে। নানামূখী উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারন শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সময়কালে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার একটি সময়োপযোগী জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে এবং এরই মধ্যে তা কার্যকর করা হয়েছে।
টেকসই উন্নয়নে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ কিছু বৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবে রূপ দেওয়া হচ্ছে, এবং এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগুলোর মূল ভাবনা, সূচনা ও বাস্তবায়নের অগ্রগতি তদারকি করছেন। এর ফলে দীর্ঘদিনের বঞ্চিত নানা অঞ্চলে জীবনমানের পরিবর্তন হচ্ছে, দ্রুত গড়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগসুবিধা, চাকরি-বাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, আর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়ছে, এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে আরও উদ্দীপনার সঞ্চার করছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে মানুষের ক্ষমতায়ন ও ভাগ্য উন্নয়ন
গত এক দশকে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণাটি বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। এসময়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাপক আধুনিকায়ন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা, ইন্টারনেট সংযোগ, মোবাইল ফোন ব্যবহার, আইটি পণ্য রপ্তানি, আইটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ -এসব বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ কীভাবে মানুষের ক্ষমতায়ন ও ভাগ্য উন্নয়নে সহায়তা করেছে তার চিত্র ফুটে উঠেছে।
সম্প্রসারিত হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী
বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য আর্থিক বরাদ্দ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে এগুলোর ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সমাজের দরিদ্র-পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যস্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তাও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা এবং কর্মসৃজন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্ভব হয়েছে। বয়স্ক, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারী, প্রতিবন্ধী, দুস্থ ও দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী, চা বাগানের শ্রমিক, হিজড়া, দলিত ও ভবঘুরে সম্প্রদায় এবং মুক্তিযোদ্ধারা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সহায়তা পাচ্ছে।
নির্মূলের পথে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ
জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা মোকাবেলা করে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের দায়বদ্ধতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ববান ও সক্রিয় সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃড় নেতৃত্ব ও শূন্য-সহনশীলতা নীতির উপর ভর করে জঙ্গি ও সহিংস চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মভিত্তিক শিক্ষা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, চরমপন্থীদের হুমকির মুখে থাকা মানুষদের মূলধারায় নিয়ে আসা ইত্যাদি নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।