বাংলাদেশে নির্বাচন এসেছিল, এসেছে এবং আসবে। কিন্তু সব নির্বাচনেরই আনন্দঘন পরিবেশ ছিল। কারণ ভোটার ভোট দিতে স্বতস্ফুতভাবেই ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিল। যখনই নির্বাচন আসে তখনই ভোটারের মনে আনন্দ আসে বিভিন্ন কারণে; আর সেই আনন্দের বহিপ্রকাশ ঘটান ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বাংলাদেশের অতীতের নির্বাচনগুলোকে ছাপিয়ে বর্তমানের এই নির্বাচন। এই নির্বাচনের গুরুত্ব অসীম। এই নির্বাচনই বাংলাদেশকে দিবে দিশা। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের এবং এই ভুখন্ডের মাঝে বসবাসকারী মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই মানুষ ফিরে পাবে স্বাধীনতার সুফল এবং স্বাধীকার আন্দোলনের স্বার্থকতা। মানুষের মৌলিক অধিকার এবং মানুষ হিসেবে মাথা উচু করে জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে আগামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নিয়ে পথ চলার উন্মুক্ত বিচরনালয়।
অতীতের নির্বাচনগুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে কখনো কখনো প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এবং আগামীতেও হবে। কারণ আমরা মানুষ এবং এই মানুষিক ও মাংসিক চাহিদাই আমাদেরকে বিভিন্ন রূপে রূপায়ন হতে সাহায্য করে। কখনো ভালোর বা আলোর পথের আবার কখনো কখনো মন্দের বা অন্ধকারের। অতীতের বিশ্লেষনাত্বক বর্ণনায় নাই গেলাম কিন্তু বর্তমানের বর্ননার ইতিবাচক দিকগুলোর শুধু দেখার অবতারনা করলাম।
আনন্দঘর পরিবেশে নির্বাচন হওয়ার সকল আয়োজনই সম্পন্ন হয়েছে। দেশ বিদেশের সংবাদকর্মীরাও এসেছে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য। দল মত নির্বিশেষে মানুষ ভোট ভোট খেলায় মেতেছে। জয় পরাজয়তো রয়েছেই। তারপর আবার মিথ্যার ফুলঝুড়িও আওড়াচ্ছেন কতিপয় চিহ্নিত মুখ। কেউ কেউ ধমকে ধমকে বেফাস বুলিও আওড়াচ্ছেন। সবই যেন একটি আমেজের বিভিন্ন রূপ মাত্র। তবে জনগন এবার খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। মানুষের মুখে মুখে প্রকাশিত হয়েছিল একটি আওয়াজ যা উন্নয়নের পক্ষে, অগ্রগামীতার পক্ষে। বিচক্ষনতার এবং সৃজণশীলতার পক্ষে, চলমান ধারাবাহিকতার পক্ষে, শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে, ন্যায় নীতির পক্ষে, সাম্যের মেলবন্ধনের লক্ষ্যে।
এবারই প্রথম মানুষ দল ও মতের উদ্ধে উঠে উন্নয়ন ধারাবাহিকতাকে বেছে নিয়েছে। একটি মার্কাকে বেছে নিয়েছে। একটি প্রজ্জ্বলিত দ্বীপশিখাকে বেছে নিয়েছে। যে দ্বীপশিখা পৃথিবীর অন্ধকারকে কঠোর হস্তে দূরভূত করতে দিশা দেখিয়ে যাচ্ছে। সেই দ্বীপশিখা আর কেউ নন তিনি আমাদের গর্বের ধন খোদার পরের শেখ ভরসা শেখ হাসিনা। তাঁর দুরদর্শীতাই দূরভূত হচ্ছে বাংলার আকাশের জমাট বাধা ঘোমট আকারের কালো মেঘ। তাঁর ঐকান্তিক নিরলস প্রচেষ্টায়ই আগামী ৩০ তারিখের বিজয় সুনিশ্চিত হচ্ছে। শত্রু শিবিরের হুংকার ও গর্জত গঙ্গাজলে বিসর্জনে যাচ্ছে। কিছু কিছু বিধৌত হয়ে আবার ফিরে আসছে মঙ্গলের ছায়াতলে। জনতার যে রেসিও পুর্বে ছিল (৬০%৪০%) তা অতিক্রান্ত হয়েছে সরেঙ্গা নৌকার নৌকা বাইছের দ্রুত লয়ে এগুচ্ছে যা জনগণের প্রত্যাশার বাইরে।
নির্বাচনী আমেজে মিশতে পারছেন না ঐ তথাকথিত বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর জ্ঞানপাপীদের ঐক্যফ্রন্ট কারণ তারা নিজেদেরকে এই স্রোতের বাইরে রেখে পুরোনো ধ্যান ধারনা এবং বহি শক্তির প্রচ্ছন্ন সহযোগীতায় এগিয়ে থেকে পিছিয়ে পড়ে এখন শুধু মিডিয়ার সামনে গুমরে মরছে। কিই বা করার ছিল তাদের। জনতা কর্তৃক প্রত্যাখাত হয়ে এখন ঘরকুনো অবস্থানে। মানুষ যার যার মত প্রকাশ করছে আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনে বল প্রয়োগের ব্যস্থা থাকবেই। প্রতিটি খেলাতেই বল প্রয়োগ হয় অতিগোপনে। যাতে রেফারী আচ করতে না পারে। আর এই নির্বাচনের ক্ষেত্রেও হচ্ছে তাই। কর্তৃপক্ষ দেখা ও জানার আগেই খোলোয়ারগণ যার যার শক্তি পরিক্ষা করে নেই এবং কেউ ধরা পরে আবার কেউ ধরাছোয়ার বাইরে থাকে। এটাই খেলা এবং খেলোয়ারের অলিখিত হাজার বছরের নিয়ম। এই নিয়মের কাছেও আজ ঐক্যফ্রন্ট পরাজিত হয়েছে। বুদ্ধির খেলার, কৌশলের খেলায়, পরিকল্পনার খেলায়, আশা জাগানোর খেলায়, ভরসা করার খেলায় এমনকি সকল অবস্থানেই যেন বয়সের ভারে নূয্য হয়ে নেতিয়ে পড়েছে মাত্র।
তবে তাদের মনে যে আনন্দ নেই তা বলা যাবে না। কারণ মিডিয়াতে মাঝে মাঝে তাদেরকে সবাইকে একসাথে আনন্দিত হতে দেখা যায়, হাসতে দেখা যায়, টেবিল চাপড়াতেও দেখা যায়; মাঝে মাঝে প্রথিতঝসা হাততালিও চোখে পড়ে। তবে যেসকল অভিযোগ করছেন তার বেশিরভাগই মিথ্যা এবং ছলনায় ভরপুর। তাদের মিথ্যা ও ছলনার ছলে তুলে ধরা অভিযোগের আড়ালে পিষ্ট হচ্ছে সত্য অভিযোগগুলো। যার জন্য তারা পরাজিত হচ্ছে। মিথ্যার অবরণে তারা আজ পর্যদুস্ত এবং সর্বশান্তের পথে। ৩০ তারিখ জনগণ তাদেরকে ৯০ভাগ প্রত্যাখ্যানও করে তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ তারা তাদের রচিত নাটকে ঠিকভাবে অভিনয় করতে পারছেন না; আর যতটুকু করছেন তাও আবার জনগণের ইচ্ছা ও আখাঙ্খার বিপরীতে গিয়ে। বাসট্রার্ড থেকে খামোশ এবং এর পরের সংযোজন হলো জানোয়ার। কিসব অদ্ভুদ আচরণ তাদের। কিভাবে সম্ভব এই আচরণ সভ্য সমাজে সভ্যতার আড়ালে প্রকাশ করার। মানুষ মানুষকে এভাবে ভদ্রচিত উচ্চু পর্যায়ের সভাতে এমন আচরণ কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার বিপরিতাত্ত্বকই বটে। এতে করে সকল ইতিবাচক অর্জন ধ্বংস হয়ে নিজেদের ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে বিনাস হওয়ার সামিল মাত্র।
আর যারা বিজয়ের আনন্দের জন্য মহোল্লাসে তাদেরকে বলছি সতর্ক অবস্থানে থাকুন। সাপের মত সতর্ক হউন এবং কবুতরের মত চালাক হউন। নিজেদেরকে আরো সংযত রাখুন এবং জনগনের দেয়া দায়িত্ব সযতনে লালন ও পালন করুন এবং আগামীর জন্য আরো বিশাল দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হউন। ঐ বেসামাল মানুষের আচরনের সঙ্গে নিজেদেরকে জড়াবেন না এবং দায়িত্বে থেকে দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে যতœশীল হউন। কর্মী ও সমর্থকদের উত্তেজনায় বরফ ঢালতে থাকুন নতুবা জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন আচরণে সাবধান থাকুন এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকুন। আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনী আমেজে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিন যাতে অন্যরা এর স্বাদ ও আনন্দ উভয়ই ভোগ করতে পারে এবং ইতিহাসে একটি সার্বভৌম সার্বজনীন দৃষ্টান্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ আকারে দৃশ্যমান থাকে। যা দেখে আগামী প্রজন্ম আরো সৃজনশীল মননে শান্তীর পতাকাতলে জড়ো হয়ে দেশের সমৃদ্ধিকে গতিশীলতা দিয়ে চলমান রাখবে।
নির্বাচনী আমেজের জয় হউক এই বিজয়ের মাসের শেষ লগ্নে নতুন বছরের শুরুতে। সবাইকে ইংরেজী নব বর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির এবং উন্নয়নের জয় নিশ্চিত হউক। সকলে মিলেই এই জয়কে উপভোগ করুক আগামীর মঙ্গলার্থে। এই কামনা রেখেই শুভ কল্যাণের কামনায় নতুন ভোর ও নতুন সুর্য উদীত হউক নতুন বছরে শুভ সুচনা মঙ্গলালোকে পূর্ণ হউক।