আশরাফ কন্যা রীমা স্থায়ীভাবেই দেশে ফিরবেন

প্রশান্তি ডেক্স॥ মা শীলা ইসলাম ও বাবা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে তোলা সেলফিতে রীমা ইসলাম। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে হারিয়েছেন মা-বাবা দু’জনকেই হারিয়েছেন সৈয়দা রীমা ইসলাম। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সদ্যপ্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একমাত্র সন্তান তিনি। কীভাবে রীমা এ শোক সইবেন এ প্রশ্ন স্বজনসহ সকলের মনে। তবে লন্ডনপ্রবাসী রীমা দেখেছেন তার বাবার প্রতি দেশের মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এ থেকেই দেশে ফিরে আসার কথা ভাবছেন। মনকে শক্ত করে কাটিয়ে উঠতে চান শোক। লন্ডনের কর্মস্থলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছে তাঁর পারিবারিক সূত্র।asraf konna esthy babe dese
২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মা শীলা ইসলামকে হারান রীমা। জীবনের প্রথম সেই ধাক্কাটি সামলে উঠেছিলেন বাবা সৈয়দ আশরাফের স্নেহের স্পর্শে। কিন্তু বছর পেরোতে না পেরোতেই শেষ আশ্রয় বাবাকেও হারালেন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফ ৩ জানুয়ারি ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে জন্ম নেয়া রীমা সেখানেই বেড়ে ওঠেছেন। সেখানেই এমবিএ শেষ করে এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করছেন। ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গত বছরের ৩ জুলাই সৈয়দ আশরাফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ বাবার শুশ্রষার জন্য কর্মস্থল ছেড়ে ব্যাংককে ছুটে আসেন রীমা। আশা ছিল উন্নত চিকিৎসায় অচিরেই পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার তার বাবা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগের মতোই ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে অনন্তের পথে পাড়ি জমান সৈয়দ আশরাফ।
সৈয়দ আশরাফের পরিবারের সদস্যরা জানান, রীমা জানতেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার বাবা একজন জনপ্রিয় মানুষ। কিন্তু এতটা জনপ্রিয় ছিলেন, তা কখনও ভাবেননি। ব্যাংকক থেকে বাবার মরদেহ নিয়ে ঢাকায় অবতরণের পর শোকার্ত হাজারো নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের আহাজারি দেখে রীমার চোখে জমেছিল শোক-বিহ্বল গবের অশ্রুবিন্দু। জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় প্রথম জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে দ্বিতীয় জানাজায় তিন লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি এবং ময়মনসিংহ শহরে তৃতীয় জানাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণ দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি রীমা। এমন একজন বাবার সন্তান হতে পেরে যুগপৎ গৌরব ও অহঙ্কারও অনুভব করেন।
কর্তব্যের টানে গত মঙ্গলবার বাবার শেষ চিকিৎসাস্থল ব্যাংকক গেছেন তিনি। সেখানে হাসপাতালের বকেয়া দেনা ও বকেয়া বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে ফিরে যাবেন নিজের কর্মস্থল লন্ডনে।
রীমা ইসলামের চাচা (সৈয়দ আশরাফের চাচাতো ভাই) সৈয়দ তারেকুল ইসলাম ভিক্টর জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আপামর মানুষের ভালোবাসা দেখে এবং পিতার প্রতি জনগণের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা দেখে রীমা অচিরেই দেশে ফিরে আসার চিন্তা করছেন। লন্ডনে চাকরি ছাড়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সহসাই তার ফিরে আসার কথা রয়েছে।
বাবার মতোই মৃদুভাষী, শান্ত ও ধৈর্যশীল তরুণী রীমা। শোলাকিয়া মাঠে বাবার জানাজার সময় পাশেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন তিনি। এ সময় তাকে দেখে আগামীর সম্ভাবনার ইঙ্গিত খুঁজে পান উপস্থিত মানুষ। কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে রীমা তার বাবার উত্তরসূরি হতে পারেন- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে। তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, সৈয়দা রীমা ইসলামই হতে পারেন কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের যোগ্য উত্তরসূরি। তার মধ্যে প্রয়াত পিতার ব্যক্তিত্ব এবং দেশপ্রেম স্পষ্ট। যা আগামীর স্বচ্ছ রাজনীতিকে আরও বিকশিত করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.