নতুনেই আস্থা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় একঝাঁক নতুন মুখ

বা আ॥ সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুনেই আস্থা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুনদের ওপর আস্থা রেখে যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন তা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নতুন এবং উদ্যমীদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা নিয়েই শেখ হাসিনা পাড়ি দেবেন অথৈ সাগর। পৌঁছে যাবেন অভিষ্ট লক্ষ্যে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সে হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সালকে টার্গেট করে তিনি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলেন। যেখানে রয়েছে শেখ হাসিনার উদ্যমী ও সাহসী একঝাঁক সৈনিক। যারা শেখ হাসিনাকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন। notoner asta skhasena
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গঠনে এসব সৈনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রশান্তি নিউজকে বলেন, নতুনদের মন্ত্রী বানিয়ে শেখ হাসিনা তার ইশতেহারে ঘোষিত চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে চান। এটা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ এবং কালজয়ী সিদ্ধান্ত। যারা আগেও মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আবারও এসেছেন তারা পরীক্ষিত। আর নতুন যাদের আনা হয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেই নেয়া হয়েছে। তারা এর আগে দলের যে দায়িত্বে ছিলেন তাতে তারা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু সংসদে সত্যিকার অর্থে কার্যকর বিরোধী দল নেই, সে কারণে যারা মন্ত্রী হলেন তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে। সংযত থাকতে হবে। দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার ইশতেহারে দুর্নীতির জিরো টরারেন্সের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা যেন বজায় থাকে এ চেষ্টা মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের করতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গভবনে গিয়ে শপথ নিয়ে বাসায় গিয়ে তারা যেন নিজে নিজে আবার শপথ নেন যে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। সোমবার (৭ জানুয়ারি) যারা নতুন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তারা হচ্ছেন, ড. আবদুর রাজ্জাক-, ড. হাছান মাহমুদ, তাজুল ইসলাম, ডা. দীপু মনি, ড. আবদুল মোমেন, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাধন চন্দ্র মজুমদার, টিপু মুনশি, শম রেজাউল করিম, শাহাব উদ্দিন, বীর বাহাদুর উশৈসিং ও নুরুল ইসলাম সুজন। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যারা শপথ নেবেন-কামাল আহমেদ মজুমদার, ইমরান আহমদ, জাহিদ আহসান রাসেল, আশরাফ আলী খান খসরু, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাকির হোসেন, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ফরহাদ হোসেন, স্বপন ভট্টাচার্য, জাহিদ ফারুক, মুরাদ হাসান, শরিফ আহমেদ, কে এম খালিদ, ডা. এনামুর রহমান, মাহবুব আলী ও শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
উপ-মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন-বেগম হাবিবুন নাহার, এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শপথ নিতে যাওয়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপ-মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ ২০১৪ সালের কেবিনেটে ছিলেন। তখন তারা স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে এবারে অধিকাংশই নতুন মন্ত্রী হচ্ছেন। যাদের প্রথমবারের মতো মন্ত্রী করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশেরই ব্যক্তিগত ইমেজ খুব ভালো। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে এ মন্ত্রিপরিষদ সহায়ক হবে বলে অনেকেই মন্তব্য করবেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, তাতে অল্প কয়েকজন বাদে সবই প্রায় নতুন মুখ। গত রোববার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও তাদের দফতর ঘোষণা করেন। ৪৬ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী থাকছেন। ৪৬ জনের মধ্যে ৩১ জনই নতুন। নতুন ২৪ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১২ জন নতুন, ১৯ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ১৬ জন এবং উপমন্ত্রী ৩ জনও নতুন।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নতুন মন্ত্রী:
মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়া নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার; স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, কৃষি মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক ও তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। নতুন প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন যারা:
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এবং ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
নতুন উপমন্ত্রী:
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পবির্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল)। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.