আর কোনো জটিলতা নেই পদ্মাসেতুর পিলারের নকশায়

প্রশান্তি ডেক্স॥ পদ্মা সেতুর নকশা নিয়ে জটিলতার সমাধান হয়েছে। ফলে একটি পাইল বাড়িয়ে পদ্মা সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে সংশোধিত নকশা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।podda sato
গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম এ অনুমোদন দেন। ফলে এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই দুটি পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
পদ্মা সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের পরিবর্তন ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আগে ৬টি পাইলের সাহায্যে একটি মূল পিলার স্থাপন করা হতো। ৬ ও ৭ নং পিলার একইভাবে তৈরির নকশা থাকলেও তা স্থাপনে সমস্যা মনে হওয়ায় নকশায় পরিবর্তন এনে ৭টি পাইলে করা হবে।
দেওয়ান আব্দুল কাদের আরও বলেন, ‘নকশা পরিবর্তন করে সেতুর প্রকল্প পরিচালক ৬ ও ৭ নম্বর পিলার স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন। এখন স্কিন গ্রাউন্টিং তথা বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিলার দুটি স্থাপন করা হবে।’
জানা গেছে, নকশা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারের মধ্যে ২০টির সমাধান আগেই হয়েছিল। শুধু আটকে ছিল ৬ ও ৭ নম্বর পিলার। গত মঙ্গলবার এ দুটি পিলারের সংশোধিত নকশাও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হলো।
অথচ পদ্মা সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কাজের সূচনাই হয়েছিল মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলার দিয়ে। তবে বাস্তবে কাজ শুরুর সময়ে সেখানে ভয়াবহ জটিলতা দেখা দেয়। এ অংশে নদীর তলদেশের মাটির গঠনের কারণে কিছুতেই পিলার বসানো সম্ভব হচ্ছিল না।
পরে কাজ সরিয়ে নেয়া হয় জাজিরা প্রান্তে। সেখানে নদীর তলদেশের মাটিতে সমস্যা না থাকায় একের পর এক বসানো হয় পিলার ও স্প্যান। একইসঙ্গে কাজ চলে মাওয়া প্রান্তের নকশা জটিলতা সমাধানের। দীর্ঘ এক বছর পর সে প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখল।
এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নকশার সময়ে পাওয়া সব সয়েল টেস্ট করা হয়নি। পরে যখন সব টেস্ট করা হলো, দেখা গেল প্রায় ২২টা পিয়ারে ভিন্ন সয়েল পাচ্ছি। এটা করতে গিয়ে কিছু টেস্ট করতে হলো, যাতে প্রায় বছরখানেক সময় লাগল।’
সংশোধিত নকশায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার ফলে বাকি কাজ দ্রুত শেষ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মাওয়া প্রান্তে নকশার সমাধান হলেও এ প্রান্তে স্প্যান দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কয়েক মাস। কারণ, ধারাবাহিকতা রাখতে এ মাসের শেষ সপ্তাহে সেতুর ষষ্ঠ স্প্যানটি বসানো হবে জাজিরা প্রান্তে আগের ৫টির সঙ্গেই।
উল্লেখ্য, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। এর আগে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে ২০০৭ সালে একনেকে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
২০১২ সালের জুনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। যদিও দুদকের তদন্তে বাংলাদেশে বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
এরপর ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’র মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। সংযোগ সেতু (ভায়াডাক্ট) ৩.১৮ কিলোমিটর। সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হবে ৬টি। মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৬৪টি। দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতুটি কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে। এর ডিজাইন করেছে নিউজল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি এইকম। ২০১৪ সালের ১৮ জুনে প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। নদী শাসনের কাজ করছে চায়নিজ সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। সংযোগ সড়কসহ বাকি কাজ করছে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি।
পুরো প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার জনবল কাজ করছে। এর মধ্যে দেশীয় ৩ হাজার ও চীনের ৯০০।

Leave a Reply

Your email address will not be published.