বা আ॥ ১৯৭১ সালে যখন স্বল্পোন্নত দেশের ধারণার উদ্ভব ঘটে, তখন শুরুতে ২৪টি দেশ ছিল এই তালিকায়। যা পরে সর্বোচ্চ ৫২ টিতে দাঁড়ায়। এই দেশগুলোর তালিকা থেকে মাত্র পাঁচটি দেশ বের হতে পেরেছে। যে দেশগুলো বের হয়েছে, তা খুব ছোট ছোট দেশ, ভূ-আবদ্ধ বা দ্বীপরাষ্ট্র। সেসব দেশের হয় প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে নয়তো পর্যটনের স্থান হিসেবে খুবই আকর্ষণীয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য অর্থনীতির আকার ও জনসংখ্যার বিচারে একমাত্র বাংলাদেশই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, প্রাসঙ্গিক তিনটি সূচকের মধ্য দুটি সূচকে নির্ধারিত মাত্রা পূরণ করলেই আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য বিবেচনাযোগ্য হতাম, কিন্তু আমরাই প্রথম দেশ যে তিনটি সূচকেই লক্ষ্য পূরণ করেছি। সূচক তিনটি হচ্ছে মাথাপিছু জাতীয় আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩২ বা তার কম স্কোর। কিন্তু বাংলাদেশের ২৫ অর্জন করেছে। মানব সম্পদ সূচকে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬৬, সেখানে বাংলাদেশের অর্জন ৭৩.২। মাথাপিছু গড় আয়ে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১২৩০ ডলার, সেখানে বাংলাদেশ আয় করেছে ১৭৫২ ডলার।
বাংলাদেশের এই অর্জনের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালে। কিন্তু তার ৩ বছর আগে ২০১৮ সালেই সবকটি সূচক পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশের তালিকায় পৌছাতে বাংলাদেশ লক্ষ্য ধরেছে ২০৪১ সাল। কিন্তু এই সূচক বলছে তা আরও আগেই পূরণ করতে সমর্থ্য হবে বাংলাদেশ। তার জন্য চাই সরকারের ধারাবাহিকতা। আর আজকের শিক্ষিত জনগন যা অস্বীকার করতে পারেনি। ভোটের মাঠে নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষিত প্রজন্মের বড় ভূমিকা ছিল একচেটিয়া আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে।
একসময় আমরা ঠিক করেছিলাম যে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। কিন্তু ২০১৫ সালেই আমরা সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি। এখন যেটা নতুন সরকারের কাছে আমরা আশা করতে পারি। আমরা তো ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এটা কতটুকু বাস্তবসম্মত? চীন, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো এখনো উন্নয়নশীল দেশের কাতারে রয়ে গেছে।
২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে (যাকে উন্নত দেশ বলে) পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের দুটি দিক আছে। একটি অর্থনৈতিক বাস্তবতা, অন্যটি রাজনৈতিক উদ্যম। অর্থনৈতিক রূপান্তর এবং মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি সমুন্নত রাখা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে (মাথাপিছু জাতীয় আয় সাড়ে ১২ হাজার মার্কিন ডলার) পরিণত হতে হলে বাংলাদেশের বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির হারকে আরও বেগবান করে আগামী ২৪ বছর ধরে রাখতে হবে। আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে আমরা ভালো করছি-এ রকম একটা স্বীকৃতি আমরা দেশি ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে পেয়েছি। একে কাজে লাগিয়ে যদি নতুন বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ সমাবেশ করতে পারি, কম সুদে বৈদেশিক ঋণ নিতে পারি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারি, অভ্যন্তরীণ কর আদায় বাড়াতে পারি, তাহলে একটা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ হয়। বিকাশমান মধ্যবিত্তের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা তৈরি করতে পারি, যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সংকট নিরসন করতে পারি এবং আয় ও সম্পদবৈষম্যকে আটকাতে পারি, তাহলে ইতিহাসের ধারা বদলানো সম্ভব। জাতীয় স্পৃহা, গণ-উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব-এসব কিছু মিলিত হলেই তো ইতিহাসের ধারা বদলায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। আমরা এখন উচ্চ আয়ের দেশের স্বপ্ন দেখতেই পারি। আর এটা যদি সম্ভব হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যদি বাংলাদেশ চলতে পারে আরো দুই মেয়াদে। তাহলে এই স্বপ্ন বাস্তব অসম্ভব নয়। তাহলে শেখ হাসিনা এক বিরল ইতিহাস গড়বেন। তিনি যে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের তা মোকাবেলা করতে হয় না।