ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড, ভারতকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ শেখ হাসিনার

বা আ॥ চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে’ বাংলাদেশের যোগ দেয়া নিয়ে ভারতের চিন্তিত হবার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, চীনের এই উদ্যোগের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা বা কানেক্টিভিটির অগ্রগতি হবে এবং তার ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে সবকটি দেশ। এই পরিকল্পনায় ভারতেরও যুক্ত হওয়া উচিত। এই মুহূর্তে সবার জন্যই অর্থনৈতিক দিকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।1 balt 1 rot
সম্প্রতি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন নিউজ এইটিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ মিনিট দীর্ঘ ওই বিশেষ সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গোটা পৃথিবী এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তাই কানেক্টিভিটি বাড়ানো প্রয়োজন, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি চুক্তি করেছে, যেটি বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর বা বিসিআইএম-ইসি নামে পরিচিত।
ওই চুক্তির পর ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই চুক্তির পর আমি মনে করি এই করিডোর নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এই প্রকল্পে যুক্ত হলে সবারই ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে এবং তার ফলে সব দেশই উপকৃত হবে। যে কারণে ভারতেরও এখানে যোগ দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। শেখ হাসিনার মতে, ভারত একটি বড় অর্থনীতির দেশ, তার এ নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত নয়।
প্রধানমন্ত্রী একথাও বলেছেন যে, ভারতের যদি বিষয়টি (ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড) নিয়ে আপত্তি থাকে, তাহলে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো ইস্য সমাধান হতে পারে।
‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ আসলে কী
২০১৩ সালে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামে একটি উন্নয়ন কৌশল ও কাঠামো উপস্থাপন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের ৬০টি দেশের সঙ্গে চীনের মূল ভূখন্ডকে সংযুক্ত করা। এই পরিকল্পনার অংশ মূলত দুটি-সড়কপথে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত হবে চীন। এই সড়কপথের সঙ্গে রেলপথ ও তেলের পাইপলাইনও রয়েছে।
সেই সঙ্গে সমুদ্রপথেও, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হবে চীন। বলা হয়ে থাকে প্রাচীন সিল্ক রুটের আধুনিক সংস্করণ এটি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ যোগ দেয়।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী চীন দুটি ‘ইকোনমিক করিডর’ তৈরি করছে। একটি কুনমিং থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ। আর দ্বিতীয়টি হলো চীনের জিনজিয়াং থেকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের সমুদ্রবন্দর গাওদার পর্যন্ত রেল ও সড়কপথ। তবে এই করিডরের ব্যাপারে ভারতের আপত্তি রয়েছে।
ভারতের আপত্তির কারণ:
ভারতের প্রথম আপত্তির কারণ হলো, চীন যে দুটি ‘ইকোনমিক করিডর’ পরিকল্পনা করেছে, তার একটি পাকিস্তানশাসিত কাশ্মিরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ভারত কয়েক বছর আগেই এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ ছাড়া গত দশ বছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে যে উন্নতি হয়েছে, এ প্রকল্পে যুক্ত হবার পর বাংলাদেশ চীনের প্রভাব বলয়ে ঢুকে যেতে পারে-এমন একটি শঙ্কাও রয়েছে ভারতের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে যে বার্তা দিলেন:
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিএনএন নিউজ এইটিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে তার নিজের দেশের অগ্রাধিকারের ব্যাপারটাই আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক ভালো, তবে একই সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার দেশ চীন।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা চীনের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চীন বাংলাদেশকে ২,৪০০ কোটি ডলারের ঋণ দেবে, যার বেশিরভাগই অবকাঠামো খাতে। বর্তমানে চীন বাংলাদেশে পদ্মা সেতুসহ নানা অবকাঠামো প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে আপত্তি-নিষ্পত্তির কথা বলে এই বার্তাও দিয়েছেন যে, হয়তো এ প্রশ্নে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published.