প্রশান্তি ডেক্স॥ অবশেষে তারেকের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য যে আবেদন করা হয়েছে, সেই আবেদনে পাঁচটি যুক্তি উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের সরকারের এই আবেদন এবং যুক্তিগুলোর ব্যাপারে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর তদন্ত শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি বাংলাদেশ সরকারের উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যতা খতিয়ে দেখছে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল এবং তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার পক্ষে পাঁচটি যুক্তি উত্থাপন করে ব্রিটিশ সরকারের কাছে একটি আবেদন দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে একটা শুনানি করেছিল। সেই শুনানিতে তারেক জিয়া ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত না হয়ে, তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক জিয়া কেন রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নন, তাঁর পক্ষে আবার পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়। এখন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই সাব কমিটি দুই পক্ষের বক্তব্যের আলোকে সত্যাসত্য যাচাই করবে। সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর যে রিপোর্ট দিবে, সেই রিপোটের উপর ভিত্তি করেই তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয় এবং যুক্তরাজ্যে থাকা না থাকা নিভর করবে। এটা নিয়ে লন্ডন বিএনপিতে তোলপাড়।
উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তারেক জিয়া চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। ২০১৩ সালে তারেক জিয়া যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দেন। শুধু তারেক জিয়াই নন, তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা জাইমা রহমানও পাসপোর্ট জমা দেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে প্রথম তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ওই আবেদনকে আমলে নেয়নি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য পুন:আবেদন করা হয়। এবং এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত বছর যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক কেন রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের যোগ্য নন এ ব্যাপারে ৫ টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। যে যুক্তিতে তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার দাবি করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে:
১। তারেক একজন দন্ডিত অপরাধী। কাজেই কোন দন্ডিত অপরাধী যুক্তরাজ্যে থাকতে পারেন না।
২। তারেক রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য যে তথ্য দিয়েছেন তা অসত্য। মিথ্যে তথ্য দেওয়ার জন্য তার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করে দেওয়া উচিত।
৩। তারেক জিয়া জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসবাদীদের মদদদাতা। লন্ডনে থেকে সে জঙ্গী এবং সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
৪। তারেক জিয়া ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেডের খাতায় লাল তালিকাভূক্ত আসামী এবং বাংলাদেশ থেকে পলাতক। কাজেই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন।
৫। তারেক জিয়া লন্ডনে বসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত করছে। কাজেই বাংলাদেশ বা কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী ব্রিটেনে আশ্রয় লাভের যোগ্যতা রাখে না। উল্লেখ্য তারেক জিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয়ের যে আবেদন। সেই আবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশে তার প্রাননাশের আশংকা রয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুটি মামলার রায় হয়েছে। দুটির কোনটিতেই তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়নি। এই দুই মামলায় তার সাত বছরের দন্ড দিয়েছে উচ্চ আদালত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে নিম্ন আদালত। সরকার তার আবেদনে বলেছে যে, তারেক জিয়ার এই মামলাগুলো উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির জন্য এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য তার দেশে ফিরে আসার প্রয়োজন। সরকার এটাও আবেদনে বলেছে যে, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে সর্বোচ্চ ন্যায় বিচারের সুযোগ দেওয়া হবে। এই প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তি যাচাই বাছাই করে দেখছে এবং সাধারণত তারা ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করে এবং এই নিষ্পত্তির পরেই বোঝা যাবে যে তারেক জিয়ার ফেরার ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রগতি হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারীতে ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা স্বাক্ষর হলে তারেক জিয়ার বাংলাদেশে ফেরার পথে সকল বাধা দূর হয়ে যাবে। সরকার জোর কূটনৈতিক চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে আগামী মাসেই বন্দি বিনিময় চুক্তিটি সই হয়।
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, উন্নয়নের বাতিঘর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর