ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুরাতন জেলহানাকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুগর করা হউক

প্রশান্তি ডেক্স॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুরান জেলা কারাগার পরিদর্শন করে অশ্রুসিক্ত হলেন দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। মুক্তিযুদ্ধকালীন এই কারাগারে পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী ছিলেন গুণী এই সঙ্গীতশিল্পী।bramon bareya ka porno jelkhana ka
স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২ অক্টোবর আগরতলা থেকে খড়মপুর হয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের আখাউড়ার তন্তর এলাকায় পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্থান লক্ষ্য করতে আসেন। একপর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে আটক হন। এর পর তাকে পাক সৈন্যরা প্রথমে পিয়ারা মিয়ার টর্চার সেলে এক দিন এবং পরে দানা মিয়ার টর্চার সেলে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করে। এর পর তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
নন্দিত এই সঙ্গীতকার আরও জানান, এ সময় জেলা কারাগারে তার সঙ্গে আরও ৪৯ জন ছিলেন।
প্রায় প্রতিদিনই মুক্তিযোদ্ধাদের কারাগারের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে বিভিন্ন টর্চার সেলে অকথ্য নির্যাতন করা হতো। রোজার মাসের ২৭ তারিখে পাকিস্তানী সৈন্যরা জেলা কারাগার থেকে একসঙ্গে ৪২ জনকে বের করে নিয়ে হত্যা করে। এদিন ৪২ জনের কান্না ও জিকিরে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কারাগার। তাদের সঙ্গে কারাগারে থাকা অন্যদের কান্না ও জিকিরে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় সেদিন। পরদিন আবারও এসে তাকেসহ কয়েকজনকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, মাহবুব, মানিক, খোকা জীবনের মায়া ত্যাগ করে সৈন্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। এক সময় সৈন্যদের কাবু করে তারা কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানী সৈন্যরা ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় শহীদ নজরুল একটি সিগারেটের টুকরো, শহীদ বাতেন তার লুঙ্গি, শহীদ শিরু মিয়া তার গায়ের চাদর আমাকে দিয়ে যান, আমি যেন এ সব তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিই।
তিনি আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগার এলাকা থেকে পালিয়ে নদীপথে নৌকার মাঝি সেজে নৌকা চালিয়ে ঢাকায় পৌঁছে আবারও সদরঘাটে পাকিস্তানীদের হাতে ধরা পড়ে যাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়ে এক শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুরান জেলা কারাগার দেখতে যান আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এ সময় তিনি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুরান কারাগার পরিদর্শনকালে সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে ছিলেন তার একমাত্র সন্তান সামির ইমতিয়াজ, গীতিকার জালাল মুন্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সাংবাদিক সমিতির আহ্বায়ক দীপক চৌধুরী বাপ্পী, তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের পরিচালক মো. মনির হোসেন ও সঙ্গীতশিল্পী হৃদয় কামাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.