আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো দেশের মানুষ শেখ হাসিনার পক্ষে নিজেদের রায় দিল। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। এই জয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী সরকার প্রধানদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। শুধু মেয়াদের হিসেবেই নয়, জনপ্রিয়তার দিক থেকেও শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ার অন্যতম সেরা সরকার প্রধান।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চি’কে এক সময় এশিয়ার জনপ্রিয় রাজনীতিক মনে করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোহিঙ্গা ইস্যসহ নানা কারণে তিনি ব্যাপকভাবে নিন্দিত। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তো বটেই, নিজ দেশেও তাঁর জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। দেশের মানুষের মাঝে তাঁর প্রভাবও তলানিতে এসে ঠেকেছে। অং সান সুচি ২০১৫ সালে ফোর্বসের সেরা ১০০ ক্ষমতাধর নারীদের তালিকার ২৬ তম স্থানে ছিলেন। তবে এরপর থেকেই তাঁর অবনমন হতে শুরু করে। ২০১৬ সালের তালিকায় তিনি সাত ধাপ পিছিয়ে যান। আর এ বছরের সেরা ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় স্থানই হয়নি তাঁর। বছরজুড়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক খেতাবও হারিয়েছেন সু চি। একসময় যাকে গণতন্ত্রের দূত ভাবা হতো, সেই সু চি এখন সেনা বাহিনীর হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছেন।
ভারতের রাজনীতিক নরেন্দ্র মোদি বিপুল ভোটে জয় পেয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু অর্ধেক মেয়াদ শেষ হতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটার টান শুরু হয়। আগামী নির্বাচনে তার জয় পাওয়াটা অনেকটাই অনিশ্চিত। সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনেও মোদি ম্যাজিক স্মান হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, নিজ দল বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার মতো যথেষ্ট জনপ্রিয়তা মোদির একার নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর বর্তমান ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়কেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তুলনায় কিছুটা নবীনই বলা চলে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত জুনে ক্ষমতায় এসেছেন। নিজ দেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার রনিল বিক্রমাসিংহে মাস দুয়েকের টাল মাটাল অবস্থার পর গত ১৬ ডিসেম্বর নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন। মালদ্বীপ, নেপাল কিংবা আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানদের কেউই খুব একটা শক্তিশালী অবস্থানে নেই।
মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নিঃসন্দেহে একজন জনপ্রিয় নেতা। ১৯৮১ সাল থেকে টানা ২২ বছর দেশ শাসন করেছেন তিনি। তাঁর শাসনামলে মালয়েশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। মাহাথিরের বিরুদ্ধে বিরোধীপক্ষকে কঠোর হাতে দমন করার অভিযোগ থাকলেও অর্থনৈতিক সাফল্য তাকে মালয়েশিয়ার অবিসংবাদিত নেতার আসনে বসায়। অবসর ভেঙে এ বছর আবারও জনতার ভোটে জয় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছেন ৯২ বছর বয়সী মাহাথির। তবে এবারের নির্বাচনে জয়ের কৃতিত্ব তার একার নয়। মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে জোট গড়ে তিনি এবার ক্ষমতায় এসেছেন। দুই বছর পর তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলেও জানিয়েছেন।
এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দুজন নেতা হলেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান।সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংও প্রভাবশালী একজন নেতা। তবে এদের কেউই দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশকে রাতারাতি অর্থনৈতিক বিস্ময়ে পরিনত করতে পারেননি। এদিক থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নেতাদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর দশ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনেছে বিশ্ব। যেই দেশটিকে একসময় দুর্নীতি, মন্দা আর দারিদ্রের কারণে তাচ্ছিল্য করতো সবাই, সেই দেশটিকেই এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রায় সব নেতাকেই পেছনে ফেলেছেন তা হলো, নিজের জনপ্রিয়তার মাধ্যমে বারবার ক্ষমতায় আসছেন তিনি। এক্ষেত্রে কাউকে তোষামোদ বা কোনো ষড়যন্ত্রের আশ্রায় নেননি শেখ হাসিনা। শুধুমাত্র জনগণের ভালোবাসায় নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। দল মত সবকিছুর উর্ধ্বে থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।