বা আ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সবচাইতে যেটা বেশি প্রয়োজন সেটা হলো বিদ্যুৎ। আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আর বিদ্যুতের উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
গত বুধবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ৬টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত নতুন ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্র, সন্দ্বীপ উপজেলায় বিশেষায়িত বিদ্যুতায়ন এবং ১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যত হচ্ছে, মানুষের মাথাপিছু আয় তত বৃদ্ধি পাচ্ছে।সেই সঙ্গে নতুন নতুন চাহিদার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। সেই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি।
সিরাজগঞ্জ, ভোলা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও রাজবাড়ীতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্দ্বীপের মানুষের দাবি ছিল সেখানে যেন আমরা একটা গ্রিড প্যানেল দেই। সেখানে গ্রিডলাইন দেয়া বেশ কষ্টকর। নতুন টেকনোলজি অনুযায়ী সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে লাইন নিয়ে সন্দ্বীপে গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আজ সেই বিদ্যুৎ উদ্বোধন করলাম। এর ফলে সেখানে বিনিয়োগ হবে, উৎপাদন হবে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠবে। এ ছাড়া সেখানে গড়ে উঠবে বন্টু ইকোনমি। এখানে অত্যন্ত চমৎকার একটি পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং মানুষের উন্নয়ন ঘটানোই ছিল তার মূল লক্ষ্য। যে বাংলাদেশ শোষিত বঞ্চিত ছিল, দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত ছিল, সেই বাংলাদেশের মানুষকে একটু উন্নতজীবন দেবেন, এটি ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার সংগ্রামের ইতিহাস আপনারা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এবং কারাগারের রোজনামচাতে পাবেন।
‘পাশাপাশি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যে সমস্ত রিপোর্ট লিখত ১৯৪৮ সাল থেকে একাত্তর সাল পর্যন্ত সেই রিপোর্টগুলো আমি বই আকারে প্রকাশ করা শুরু করেছি। সেখান থেকে জানা যায় যে, বঙ্গবন্ধু কীভাবে সংগ্রাম করেছেন, সেই সংগ্রাম থেকে ধাপে ধাপে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়। তার লক্ষ্য ছিল যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, কিন্তু তা তিনি করে যেতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে পুরো পরিবারকে প্রাণ দিতে হয়েছে। শুধু তাকেই হারায়নি, স্বাধীনতার চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও বাংলার মানুষ হারিয়ে ফেলে’,- বলেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করার পর থেকেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য স্থির করে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ভাগ্যোন্নয়েনে কাজ করে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। আমাদের উন্নয়নের ফলে মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বেলেছিল কিন্তু সে আলো নিভে যায় ২০০১ সালে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরে অগ্নি সন্ত্রাস বোমা হামলা, মানুষ হত্যা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার নির্যাতন করা, এটাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালায়। এরপর ২০০৯ সালে আমরা পুনরায় ক্ষমতায় আসি। সেই থেকে টানা দশ বছর আমরা দেশ পরিচালনা করেছি। বাংলাদেশকে আজ আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ২০১৮ সালে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ দোয়ায় আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।