শীতের কষ্ট না দিয়েই শীথ বিদায় নিল

আনোয়ার হোসেন॥ দূর গগনে বালিহাঁসেরা যেমন করে নিরবে-নিস্তব্ধে মিলে যায়, শীতও গেল ঠিক তেমন করেই। তবে বালুচরে নিভৃতে পড়ে থাকা পালকেরা ওড়ে যাওয়া বালিহাঁসের কথা বললেও এবারে শীত যেন কোনো সাক্ষী-ই রেখে গেল না।shet galo shet na bareya
খনার বচনে শীত নিয়ে বলা হয়েছে ‘ঊনো বর্ষায় দুনো শীত’। অর্থাৎ যে বছর বৃষ্টি কম, সেইবার শীত বেশি হওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এবারে বর্ষায় বৃষ্টির আধিক্য কম ছিল। যেটুকু বন্যা হয়েছিল, তা মূলত উত্তরের পাহাড়ী ঢল থেকে।
সঙ্গত কারণে মনে করা হয়েছিল, এবারে হাড়হাঁপানো শীত নামবে। কিন্তু হাড়কাঁপানো তো পরের কথা, কুয়াশার দেখাও যেন মিলল না প্রায়। অতিশীতে নিদারুণ কষ্টের অন্ত থাকে না বটে। তথাপি ‘শীত’ উপভোগ্য কী ভোলার মতো! উত্তরের হিমেল ‘হাওয়া’ উষ্ণ মননে পরশে পরশে আনন্দদুয়ার খুলে দেয়। খুলে দেয় প্রেমের দুয়ারও। এবেলায় দু’তিনবার শৈত্যপ্রবাহের দেখা মিলবে, তা অপ্রত্যাশিত থাকলেও অপেক্ষা তো করতেই হয়।

অথচ মাঘ চলে যাচ্ছে আর ভারী শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিল না। প্রবাদ আছে ‘মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে’। প্রকৃতি যেন উল্টো পথে বিশ্বাসী এখন। প্রকৃতির হেয়ালিপনায় বুমেরাং হচ্ছে মানুষের ধ্যান-ধারণাও। এবার মাঘের শীত বাঘ তো দূরের কথা, মানুষকেও কাঁপাতেও পারেনি।
শীত চলে যাচ্ছে রিক্ত হস্তেই। প্রকৃতিতে শূন্যতা দিয়েছে বটে, তবে তাতে শীতের আমেজ যৎসামান্যই ছিল। এবারে মাঘের মধ্য সময় থেকেই ফাগুন হাওয়া বইছে। সে হাওয়ায় শেষ দিকে তাপ ছড়াচ্ছে। রাত পেরোলেই বসন্ত। শিমুল-পলাশে রঙ ধরেছে আরও আগেই। কোকিলের ডাকেও মন ভরেছে বেশ আগে থেকেই। এখন শুধু বসন্ত বরণের পালা। এ বছর শীতহীন শীত যে ক্ষরণ এঁকেছে হৃদয়পটে, সে হৃদয় উদাস বনে যাক বসন্ত বাতাসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.