বা আ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও শীর্ষ কয়েকজন নেতার সম্পদের খোঁজখবর নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎপরতার খবরে উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই। দুদকের চলমান অভিযান ও নানামুখী তৎপরতা দেখে নানা স্তরের আওয়ামী লীগ নেতারাও রয়েছেন ভয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা দেশ বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জনপ্রিয় করতে এবার প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের নেতাদেরও রেহাই দেবেন না বলে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। তাই দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবেন তিনি। দলের কোনো নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তাকেও আসতে হবে আইনের আওতায়। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, না হলে জনগণের কাছে এ অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।
এসব নেতা বলেন, বিষয়টি অনুধাবনে নিয়ে শেখ হাসিনাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রেখে সফল সরকারপ্রধান হিসেবে জনপ্রিয় হতে চান এবার। ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমন্ডলীর দুই নেতা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অর্থবহ করতে দলীয় নেতারা সন্দেহের বাইরে থাকবেন না। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত এক ডজন নেতা এ অভিযানে শিকার হতে পারেন।
ওই দুই নেতা বলছেন, শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগেই ঠিক করে রাখেন ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি নির্মূল করাই হবে তার অন্যতম কাজ। কারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলেই কেবল দল ও সরকারকে সহজে জনগণের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে পারবেন তিনি। এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তর হোমওয়ার্ক করে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাই এখানে নিজের দল আর অন্য দল বিবেচনায় নেওয়া হবে না। শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে সভাপতিম-লীর ওই দুই সদস্য বলেন, সেক্টরভিত্তিক কিছু দুর্নীতি চলছে। এসব দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। তারা ভেবে নিচ্ছে তাদের কিছু হবে না। এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সম্পাদকম-লীর কয়েকজন সদস্য বলেন, শেখ হাসিনার লক্ষ্য এ পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার মধ্য দিয়ে তিনি দলকে জনপ্রিয় করে তুলতে চান। ওই নেতারা বলেন, শেখ হাসিনা হোমওয়ার্ক করে দেখেছেন, দল ও সরকারকে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। তাই নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন; সুশাসনের ওপর জোর দিয়েছেন। নিজের দলের মধ্যে কেউ যদি দুর্নীতির দায়ে অপরাধী হন তাকেও কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার দুর্নীতি ও সুশাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশে দুর্নীতি-সুশাসনে কিছুটা হলেও দুর্বলতা থাকে। আমাদের দেশেও দুর্নীতি-সুশাসনের ঘাটতি একেবারেই ছিল না তা বলব না। বিভিন্ন স্তরে আইনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে একটি মহল দুর্নীতির সুযোগ নেয়, নিয়েছে। আবদুর রহমান বলেন, পাবলিক পারসেপশনও আছে দুর্নীতি ছিল। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, দলের কেউ দুর্নীতির দায়ে অপরাধী হলে নিশ্চয়ই মাফ পাবেন না। কারণ, দলের বিবেচনা করে কাউকে ক্ষমা করে দেওয়া হলে দুর্নীতির অভিযান সফল হবে না।
সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, আগামী দিনগুলোতে এমনভাবে সরকার পরিচালনা করা হবে যাতে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ে, জনপ্রিয়তাও আরও বাড়ে। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবার ব্যাপারে সমান মনোভাব থাকবে। তিনি বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগকে জনগণের মনের ভেতরে ঢুকতে হলে দুর্নীতি রোধ ও সুশাসনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, দেশের মানুষ মনে করে, আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে বদলাতে। দুর্নীতি ও সুশাসন চায় জনগণ। তারা মনে করে, শেখ হাসিনাই পারবেন দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে। জনগণের এই চাওয়া শেখ হাসিনা বুঝতে পেরে এবার ক্ষমতায় এসে এ দুটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এ অভিযানে দল বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে এক প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই এ প্রসঙ্গে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রশংসা করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আশরাফের দুটি গুণ ছিল। এর একটি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা, আরেকটি কম কথা বলা। আমি প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে একজন করে সৈয়দ আশরাফ চাই।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে দুদক। এতে দুর্নীতির অনেক বড় বড় ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। দুদক আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ কাজী সালাউদ্দিনের সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। এছাড়া দুর্নীতির মামলায় সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক এই সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের জমি বেআইনিভাবে বিক্রির মাধ্যমে সরকারের ৪০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে।