বা আ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, আন্দোলন করেছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানাতেই ভাষাকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সন্তানরা যেন ভাষা আন্দোলনের সুফল পায় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
গত বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একুশে পদক-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে নিজেদের অস্তিত্বকে রক্ষা করা, আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। আমাদের বাঙালি জাতির যত কিছু অর্জন সবকিছুই আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের ভাষা। সেই বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া জন্য বার বার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের সংস্কৃতিতে বার বার আঘাত হানা হয়েছে।
তিনি বলেন, তৎকালীন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বাঙালিরা, অথচ বাংলাদেশের কোনো অধিকার ছিল না। ভাষা আন্দোলনের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সে বিষয়ে আপনারা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটা পড়লেই সব কিছু জানতে পারবেন। সেই সাথে আমি আর একটা কাজ করছি, তা হলো- ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা যে সমস্ত নোট দিয়েছে তা নিয়ে ১৪ খন্ডের বই প্রকাশ করার। বই প্রকাশের মাধ্যমে এই রিপোর্টগুলো আমরা এখন প্রকাশ করা শুরু করেছি। ৪৮ সাল থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত প্রথম খন্ড এবং ৫১ সাল থেকে ৫২ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় খন্ড বের হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই পরবর্তীটাও প্রকাশ করা হবে। এভাবে আমরা ১৪টি খন্ডে এই বই প্রকাশ করবো। এসব ডকুমেন্টের মধ্য দিয়ে আপনারা জানতে পারবেন ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কী অবদান রয়েছে। এত কিছুর পরও কী দুর্ভাগ্য আমাদের। একটা সময়ে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচিত হয়। তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন কানাডা প্রবাসী সালাম-রফিক বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার জন্য দাবি জানায় জাতিসংঘে। বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা করার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙালি রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। সেই ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার জন্য তারা জাতিসংঘের কাছে দাবি তোলে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে। এজন্য তারা একটি প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ করে। জাতিসংঘে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন প্রস্তাব পাঠালে হয় না। জাতিসংঘের সদস্য দেশ থেকে প্রস্তাব পাঠাতে হয়। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রস্তুতি নেই এবং প্রস্তাব পাঠাই। সেই প্রস্তাব অনুসারে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রূপ লাভ করে। দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।