বা আ॥ দেশ-জাতি-ভাষার মর্যাদায় একুশে পদকপ্রাপ্তদের অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পদকজয়ীদের অনুসরণ করে আমাদের আগামী প্রজন্ম নিজেদের গড়ে তুলবে।’ বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘একুশে পদক প্রদান-২০১৯’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, তিনি একুশে পদকপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার, সম্মাননাপত্র ও চেক তুলে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা একুশে পদক পেয়েছেন, তারা গুণীজন। তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান। দেশ-জাতি-ভাষায় তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা সবসময় আমরা স্মরণ করি। ’ তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এই সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আজ যেসব গুণীজন পুরস্কৃত হয়েছেন, তাদের প্রতিও আন্তরিক অভিনন্দন। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালি জাতি, বাংলাদের আমাদের দেশ। বাংলা আমাদের ভাষা। জাতির পিতা এ কথা বারবার বলেছেন। আর সেই দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই, বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদার যেন বাংলাদেশ অধিষ্ঠিত হয়। বাঙালি জাতি যেন বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এটুকুই চাই। ’
মহান একুশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। আমরা আবার সরকারে আসি। সরকারে আসার পর সেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণ করি, সেখানে এখন গবেষণা চলছে। পৃথিবীর বিভিন্ন মাতৃভাষার নমুনা, এমনকি হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষার নমুনা সংগ্রহেরও কাজ চলছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের ভাষা বা পৃথিবীর অন্যান্য দেশেরও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার নমুনা সংগ্রহ করা এবং গবেষণা করার কাজ আমরা অব্যাহত রেখেছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বাধীনতার পর জাতিসংঘে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তিনি কিন্তু বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। আমি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সরকার প্রধান হিসাবে যতবার ভাষণ দিয়েছি, প্রতিবারই বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টি—এটাকে রক্ষা করা, চর্চা করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা, এটা আমাদেরেই কর্তব্য। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অর্জন করেছি, তার সুফলটা যেন আমাদের আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে। তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমরা চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৪৭ সালে করাচিতে এক শিক্ষা সম্মেলনে ঘোষণা করা হলো, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত উর্দু। এই খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ করে। খাজা নাজিমুদ্দিন তখন মুখ্যমন্ত্রী। তার বাড়ির সামনে প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই প্রতিবাদ থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরপর আমরা দেখেছি যে, বারবার আমাদের সংস্কৃতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান নামে যে রাষ্ট্রটি হয়েছিল, সেখানে তখন লোকসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আমরা। অথচ বাঙালিদের অধিকার ছিল না। ভাষা আন্দোলনের যে যাত্রা শুরু, সে বিষয়ে আপনারা নিজেরা জানতে পারবেন যদি জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীটা যদি পড়েন। সেখানেই জানতে পারবেন, কীভাবে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল।’
পাশাপাশি সিক্রেটস অব ডকুমেন্টের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই ডকুমেন্টের মধ্য দিয়ে আপনারা জানতে পারবেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কী অবদান রয়েছে ভাষা আন্দোলনে। দুভার্গ্য আমাদের, একটা সময় ছিল, যখন ইতিহাস থেকে তার যে অবদান সেটা মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এই ডকুমেন্টগুলো পাওয়ার পর থেকে এবং তার আত্মজীবনী প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সেকথাগুলো আজকে আমাদের সামনে এসেছে।’ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্তদের একটি সোনার মেডেল ওই দুই লাখ টাকার চেক দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম।