মারকাযুল ফুরকানের শিক্ষা সফর সমাপ্ত

শেখ কামাল উদ্দিন॥ ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে মতিঝিলের সন্নিকটে মুগদায় অবস্থিত মারকাযুল ফুরকান আইডিয়াল মাদরাসা ও স্কুলের বার্ষিক শিক্ষা সফর ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার পঞ্চবটিতে সুদর্শন ও পরিপাটি এ্যাডব্যাঞ্জার ল্যান্ড পার্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয়। মারকাযুল ফুরকান আইডিয়াল মাদরাসা, মারকাযুল ফুরকান আইডিয়াল স্কুল এবং মারকাযুল ফুরকান আইডিয়াল বালিকা মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সুধিজন অংশ গ্রহণ করেন। সকাল ৭টায় মুগদা সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন কমলাপুর রেলওয়ে ফুট ওভারব্রিজের নিকট হতে ৩টি ডাবল ডেকার (দ্বিতল) বাসযোগে যাত্রা শুরু হয়। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মাওলানা হাফেয মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন মাহমুদের নেতৃত্বে প্রায় সাড়ে তিনশতাধিক লোক এতে অংশ গ্রহণ করেন। পড়ালেখার ধারাবাহিকতার মাঝে একটু আনন্দ আর মুক্ত চলা-বলার এ সুযোগে ক্ষুদে শিক্ষার্থী, ছোট ভাই বন্ধু, সহপাঠি, মা-বাবা কিংবা নিকটাত্মীয়দের ছাড়াও অনেক নতুন মুখের সাথে পরিচিত হওয়া যায় এ আনন্দ ভ্রমণ কিংবা শিক্ষা সফরে। যাদের আত্মীয় স্বজন কিংবা পরিচিত কেউ সাথে নেই তারাও আজ খোশগল্পে মেতে উঠেছিল। অনেকের বুদ্ধিমত্তা আর মেধার স্বাক্ষর দেখে রীতিমত অবাক হতে হয়। কেউ হয়তো পড়ালেখায় এতটুকুন মনযোগী না হয়েও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ প্রশংসনীয়।shekha sofor
ঘোষণা এলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবে কাঙ্খিত ভেন্যুতে। পৌঁছেই বাসের দ্বিতল নীচতল থেকে নেমে পড়ার হুড়োহুড়ি। কিন্তু না। পার্কের প্রাচীর ঘেরা সীমানায় গাড়ী পার্ক করলেই নামার নির্দেশ কর্তৃপক্ষের। তাই হলো। কেউ কেউ মোবাইল সেলফিতে ছবি তোলায় মগ্ন। কেউবা গ্রুপ করে ছবি তোলায় মনযোগ। আবার যারা এতে এতটুকু পটু নয় তারা অপরের মোবাইলে ছবি উঠার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে অপেক্ষা করছিলো। নিতান্তই মজার জন্য এগুলো করা।
এ্যাডভেঞ্জার ল্যান্ড পার্কের উত্তরাংশের মঞ্চটা সেদিন ভাড়া নেয়া হয়েছিল এককভাবে। সেখানে অবস্থান নিয়ে সকলেই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে গেলো। বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হলেন অনেক মা-বাবারা। যাদের সফর সঙ্গী হিসেবে কেউ আসতে পারেননি তাদের সাথে আছেন দায়িত্ববান শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহায়ক ব্যক্তিরা। রান্নার ঝামেলা চুকিয়ে দেয়া হয়েছিল ডেকোরেটর্স সেবক সেবিকাদের কাছে। রান্না করা খাবার পরিবেশন করলেন অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ। শিশুদের অগ্রাধিকার। মেয়েরা তারপর। অত:পর বাকী রইলো বীর পুরুষেরা। ক্রমান্বয়ে সেরে নিলো সকলের খাবার দাবার।
শুরু হলো নির্ধারিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড়, মোরগ লড়াই, বিস্কুট দৌড়, সুঁই সুতা গাঁথা, দড়ি লাফ, বালিশ বদল,

কুরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী সঙ্গীত এবং বয়স্কদের জন্য চেয়ার সেটিংস, হাড়ি ভাঙ্গা, ভলিবল ইত্যাদি প্রতিযোগিতা। ধাঁধা কৌতুকে মেতে ছিল অনেকেই।
অনুষ্ঠানমালার ফাঁকে ফাঁকে অনুপ্রাস শিল্পীগোষ্ঠীর মাওলানা আবদুল আহাদ সালমান, বিশ^বিখ্যাত ক্বারী শোয়াইব আল আযহারীসহ অন্যান্য শিল্পীগণ সুললিত কন্ঠে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন।
জুমার নামাযের বিরতি। ইতোমধ্যে পার্কটি সরগরম হয়ে পড়ে দর্শনার্থীদের পদভারে। সকলের কোলাহলে মধ্যাহ্ন ভোজের পরই শুরু হয় বিভিন্ন রাইড্স উপভোগ করার। ছড়িয়ে পড়লো দলে দলে গ্রুপে গ্রুপে। নেমে পড়ে ওয়াটার পার্ক, বাম্পার কার, দোলনা, হাঁসে চড়া, রেল ভ্রমণ, চরকি আরোহনসহ সকল কিছুতে। অধ্যক্ষ সাহেব সকলকেই স্মরণ করিয়ে দিলেন আনন্দ করতে হবে শরীয়া প্রতিপালন করে। কোনভাবেই শরীয়তের খেলাপ করা যাবে না। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে কারো দ্বারায় সীমা লঙ্ঘন হয় নাই।
শেষ হলো ছালাতুল আসর। এবার বিভিন্ন ইভেন্টে পরিচালিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে ক্রেস্ট বিতরণের পালা। ক্রমান্বয়ে শেষ হলো ক্রেস্ট বিতরণ। এদিকে যে সকল সন্তানদের সাথে অভিভাবক আসতে পারেননি তাদের ফোন রিসিভ করার ব্যস্ততা বেড়ে গেলো দায়িত্বশীল শিক্ষক শিক্ষিকাদের। সংসার গুছিয়ে ফিরতে হবে আপন আবাসনে। এতক্ষণ এ জায়গায় পরিভ্রমণে যে হৃদ্যতার জন্ম নিয়েছে তার বিরহ বেদনায় কেঁদে উঠে প্রাণ। এ আনন্দঘন পরিবেশে প্রাণবন্ত শিক্ষা সফরটি ছেড়ে যেতে কতই না কষ্ট অনুভব হচ্ছে। কিন্তু এর চেয়েও কাছে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছে আরো অনেক অনেক বড় আপনজন। আর বুঝি থাকা যাচ্ছে না। চলে যেতেই হবে——-। চলুন তাহলে। বিআরটিসি বাসের যথাস্থানে বসে গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো সকল শিশু। তাদের এ ক্লান্তি দূর হতে লাগবে দু’তিন দিন। এ নিয়ে গল্প হবে কিছুদিন। আবার শুরু হবে নিজ সন্তানকে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতার শেষ কোথায় কে জানে? সন্তান যদি হয় মানুষের মতো মানুষ, তবেই স্বার্থক এ জীবন। আল্লাহ হাফিজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.