প্রশান্তি ডেক্স॥ টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: অর্ধযুগের বেশি সময় অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম ও আইনি লড়াইয়ের পর নিবন্ধন পেলো গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ)।
শ্রম অধিদপ্তরের শ্রম মহাপরিচালক গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সংগঠনটির কাছে এই নিবন্ধনপত্র হস্তান্তর করেন।
এসময় ইউনিয়নটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা মো. ওমর ফারুক, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. শফিকুর রহমান মাসুদসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামীণফোনের ভেতরে এবং বাইরে থেকেও নানা রকম চাপ মোকাবেলা শেষে এই নিবন্ধন মিললো তাদের।
মিয়া মো. শফিকুর রহমান মাসুদ টেকশহর ডটকমকে জানান, গণতান্ত্রিকভাবে চলা সংগঠনের জয় আসবেই। অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। এমনকি নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিতে আদালতের রায়ের পরও এক বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে শ্রম অধিদপ্তর হতে নিবন্ধন পেতে।
টেলিকম খাতে দেশের সবচেয়ে বড় ও সক্রিয় শ্রমিক অধিকার সংগঠন জিপিইইউ। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির লড়াইয়ের পাশাপাশি জন্ম নিয়েই জিপিইইউ অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেমে যায়। কর্মীদের অধিকার আদায়ে সব সময় সরব ছিল তারা।
শ্রম আইন অনুয়ায়ী কোম্পানির লভ্যাংশ হতে ৫ শতাংশ করে কর্মীদের প্রদানের দাবি আদায় সংগঠনটির অন্যতম সফলতা।
২০১৩ সালে ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়নের ফ্রিডম ফ্রম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পায় সংগঠনটি। ২০১৫ সালে সংগঠনের অগ্রগতি ও সদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে
ইউরোপভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়নের বেস্ট অর্গানাজিং অ্যাওয়ার্ডও পায় জিপিইইউ।
২০১২ সালের মে মাসে অন্তত ২৫০ কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গ্রামীণফোন। তখন এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে এর কর্মীরা। আর সে সময়ই জন্ম হয় জিপিইইউ নামে এই সংগঠনের।
জিপিইইউ গঠন হয় ২০১২ সালের ১৪ জুন। ২৩ জুন নিবন্ধনের জন্য শ্রম পরিচালকের কাছে আবেদন করে সংগঠনটি। শ্রম পরিচালক আবেদন বাতিল করে দেন ২৯ জুলাই। এর বিরুদ্ধে একই বছরের ২৬ আগস্ট ২ নং শ্রম আদালতে আপিল করে ইউনিয়ন।
এর পর আপিলের শুনানীতে বিব্রত বোধ করায় ২০১৪ সালের শেষে নাগাদ বিচারক মামলাটি শ্রম আপিল ট্রাইবুনালের পঠিয়ে দেন। সেখানে আবেদন করা হয় শুনানীরর জন্য। ২০১৫ সালের শুরুরে দিকে ইউনিয়ন নিজেদের পক্ষে রায় পায়।
এতে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্ট তা আবার ট্রাইবুনালে অন্য বিচারকের আদালতে ফেরত পাঠায়। ট্রাইবুনাল হতে এটি যায় ১ নং শ্রম আদালতে। সেখানে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের পক্ষে রায় দেন শ্রম আদালত।
এর পর এই রায় নিয়ে ইউনিয়ন আপিল ট্রাইবুনালে আবেদন করে। মামলাটিতে জিপিইইউ এর পক্ষে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মিয়া মাসুদ এবং বিপক্ষ শ্রম পরিচালক। গ্রামীনফোন আপীল মামলা নং- ৪৩/২০১৫।
২০১৬ সালের জুনে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের(জিপিইইউ) নিবন্ধনের আপিল মঞ্জুর করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দ্বৈত বেঞ্চের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুল হুদা এবং সদস্য বিচারক গোলাম রব্বানি জিপিইইউ এর পক্ষে রায় দেন। আদালত ইউনিয়নের নিবন্ধন চাওয়ার আবেদন গ্রহণ করে শ্রম পরিচালককে নিবন্ধন দিতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু এই রায়ের নকল পেতে তাদের প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় লেগে যায়। রায়ের সার্টিফাইড কপি পেতে জিপিইইউয়ের পক্ষে ৬ বারের বেশি আবেদন করলেও তারা কোনো কপি পাননি।
শেষে জিপিইইউয়ের পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করা হয় (১৭১৯৭/২০১৭)। রিটের শুনানি শেষে আদালত এক মাসের মধ্যে রায়ের কপি প্রদানের জন্য শ্রম আপিল ট্রাইবুনালকে নির্দেশ দেন।
অবশেষে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়রি রায়ের কপি মেলে। এরপর ১০ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়নের কাছে রেজিস্ট্রেশন প্রদানের জন্য আবেদন করে সংগঠনটি।
এরপর ৭ দিনের মধ্যে নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিতে আদালতের রায় থাকা প্রায় এক মাস সময় গেলেও শ্রম অধিদপ্তর হতে নিবন্ধন পাচ্ছিল না তারা। এবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইবুনালে আদালত অবমাননার মামলা (১/২০১৮) করেন তারা।
শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের মার্চের ৭ তারিখে কাঙ্খিত নিবন্ধনপত্র হাত পায় জিপিইইউ।
জিপিইইউ এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।