পাঁচ যুগ পর বিমান নামলো লালমনিরহাট বিমানবন্দরে

প্রশান্তি ডেক্স॥ পাঁচ যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর লালমনিরহাট বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন ও অবতরণ করানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে বিমান বাহিনীর দুইটি ফিক্সড উইং উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।5 jog por
গত বুধবার বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এ বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসবেন বলে জানা গেছে।
লালমনিরহাট বিমান বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য বিমান বাহিনীর নিজস্ব একটি টিম পর্যাবেক্ষণ শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে টিমটি লালমনিরহাট বিমান বন্দরের রানওয়ে, আকাশসীমা, অফিস কক্ষের জায়গা পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার মহেন্দনগর ও হারাটি ইউনিয়নের এক হাজার ১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৯৩১ সালে এ বিমান ঘাঁটি তৈরি করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটি অব্যবহৃত হিসেবে জৌলুস হারাতে বসে। তবে ১৯৫৮ সালে স্বল্পপরিসরে বিমান সার্ভিস চালু হলেও তা বেশিদিন আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয়রা মনে করেন, বিমানবন্দরটি চালু হলে রংপুর অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। সুযোগ তৈরি হবে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। ভারতের সেভেন সিস্টার হিসেবে পরিচিত সাত রাজ্যসহ আশপাশের আরও কয়েকটি রাজ্য, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ তৈরির একটা অন্যতম মাধ্যম হতে পারে লালমনিরহাট বিমানবন্দর। এটি চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বাংলাদেশের উত্তরের জনপদ।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজ সরকারকে তথা তৎকালীন ভারতবর্ষকে রক্ষার একটি প্রধান বিমান ঘাঁটি। এই বিমানবন্দরের কারণেই ব্রিটিশরা ওই সময় ঠেকিয়ে দিয়েছিল নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’র অগ্রযাত্রাকে।
লালমনিরহাটকে তখন বলা হতো ‘গেটওয়ে টু নর্থ-ইস্ট’ এবং ‘মাউথ অব আসাম’; ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তখনকার বিশাল প্রদেশ বৃহত্তম আসামে প্রবেশের একমাত্র পথ ছিল লালমনিরহাট। রেলপথে ‘লালমনিরহাট জংশন’ এবং বিমান পথে ‘লালমনিরহাট জাহাজ ঘাঁটি’। ভারত ভাগ না হলে লালমনিরহাট তার এই যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বের জন্য আপন মহিমায় হয়ে উঠত ‘দ্বিতীয় কলকাতা’।
কিন্তু লালমনিরহাট বিমানবন্দরের সেই গৌরবময় অতীত এখন শুধুই ইতিহাস। ‘মঙ্গা’র দুর্নাম ঘুঁচিয়ে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলে এখন লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। উন্নয়নের ফলে দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাটের জনগণেরও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এ অবস্থায় লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি যাত্রী পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেত। এছাড়া এতে এলাকারও উন্নয়ন হতো, জনগণও লাভবান হত।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক সফিউল আরিফ বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিমান বাহিনীর নিজস্ব বিমান চলাচল শুরু করছে। পর্যাবেক্ষণ চলছে, খুব দ্রুত চালু হবে বলে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.