প্রশান্তি ডেক্স॥ বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছেই বেশিরভাগ ক্ষমতা রয়েছে। গত বুধবার (১৩ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর প্রকাশিত ২০১৮ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না বলেও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া গুম, নির্যাতনসহ সরকারের সমালোচনাকারী গণমাধ্যমগুলো নেতিবাচক চাপের সমালোচনাও করা হয়েছে এতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে অকল্পনীয় একপেশে সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর মেয়াদে টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। জাল ভোট দেয়া, বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নির্বাচনের আগেও বিরোধী পক্ষ মিছিল-সমাবেশ ও স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালাতে পারেনি বলে
বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনার মতো প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনুমতিপত্র ও ভিসা দেয়নি বাংলাদেশ। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২২টি এনজিওর মধ্যে মাত্র ৭টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দেয়া হয়।
এবারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ওপর বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা নিপীড়নের ঘটনায় দায়মুক্তির অসংখ্য তথ্য রয়েছে। তবে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি হত্যা ও নিপীড়নের মামলার তদন্ত ও বিচারে কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদন্ডের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরও অনেক বিরোধী রাজনীতিকের নামে মামলা রয়েছে। নির্বাচনের আগে পুলিশ প্রায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার বিএনপি সদস্যের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে অন্তত ৮৬টি মামলা আছে। এসব মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সরকারের সমালোচনাকারী গণমাধ্যমগুলো নেতিবাচক চাপের শিকার হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা বিজ্ঞাপন হারিয়েছে। ফলে অনেকে স্বেচ্ছায় সেন্সরশিপ করেছে। টেলিভিশনগুলোর সম্পাদকীয় নীতিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে সরকার।
প্রতিবেদনের সারমর্ম অংশে বলা হয়েছে, বেআইনি বা বিনা বিচারে হত্যা, গুম, নির্যাতন, সরকার বা তার পক্ষে বেআইনি বা পরোয়ানা ছাড়া আটক, কঠোর ও জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ কারাগার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বন্দি, ব্যক্তিগত বিষয়ে বেআইনি হস্তক্ষেপ, সেন্সরশিপ, সাইট ব্লক ও আপত্তিকর বিবৃতি এবং এনজিওগুলোর কর্মকান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ, শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়া ও সংগঠন করার অধিকারের ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হস্তক্ষেপ করছে সরকার। এছাড়া স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়ার ওপর বিধিনিষেধ, অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রকৃত নির্বাচন না হওয়া, দুর্নীতি, মানবপাচার, সমকামীদের ওপর সহিংসতা, সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, স্বতন্ত্র শ্রমিক সংগঠনগুলোর ও শ্রমিকদের অধিকারের ওপর বিধিনিষেধ এভং ভয়ংকর মাত্রায় শিশুশ্রম বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যুগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।