সচেতনতা এবং জনসচেতনতা এখন এককাতারে বসেছে। আগের দিনে সচেতন এবং সচেতনতার জন্য মুরুব্বীশ্রেণী এমনকি পরিবারের প্রাধান্য বিরাজমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে ঐ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং একটি একটি শ্লোগানে পরিণত হয়েছে মাত্র। চর্চার প্রয়োগের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। নতুন করে সচেতনতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জনসচেতনতা। এই দুইয়ের সংমিশ্রনে সমাজ ও সংস্কৃতি এবং দেশ এখন শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত। কিন্তু বাস্তবতা এবং এর কার্যকারিতা শ্লোগানের আওয়াজের সঙ্গে বিতারিত।
বিবেক হলো বড় আদালত এবং মানুষ ও সৃষ্টিকর্তার মধ্যে সম্পর্ক মাপার একটি দন্ড। কিন্তু এই বিবেক এখন অসাড় আবার তাও হয়েছে আমাদের অতিরঞ্জিত ব্যবহারিত চাপের কারণে। সময়ে অসময়ে/ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এই বিবেক নামক মানদন্ডকে দংশন করতে করতে এখন ঐ বিবেক অনুভ’তিহীন হয়েছে মাত্র। হয়ত কিছুকাল পরে ঐ অনুভ’তিহীন অবস্থান হারিয়ে বিলুপ্ত ঘটবে। তবে আমরা যেভাবে বিবেক কে কষ্ট দিচ্ছি আর চেতনা ফিরানোর চেষ্টা করছি তার কোনটিই এখন আর কার্যকর নই। নতুন করে ভাবতে হবে এবং নতুন করে নতুন আঙ্গিকে হারানে মানিক খুজে পেতে চেষ্টা চালাতে হবে। যদি ঐ চেষ্টায় কার্যরত থাকা যায় তাহলে ঐ বিবেক পুনরায় অনুভ’তি ফিরে পেয়ে পুর্বের হারানো ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গেলে আগামীর সমূহ সম্ভাবনা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে যাবে এবং সকল দৃশ্যমান অপতৎপরতা; অপশক্তি এবং অদৃশ্য ও দৃশ্যমান নেতিবাচক সকল কিছু বন্ধ হবে।
আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু বলা একটি ব্যাধি এবং এই ব্যাধিতে আক্রান্ত এখন প্রায় সকলেই। কারন সবাই বলেন এবং বলতে ভালবাসেন। কিন্তু বলা ও করার সমন্বয় ঘটাতে ভালবাসেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলুন আর চায়ের দোকানের আড্ডায় বলুন সবই যেন এক নৈমত্তিক অভ্যাসের বৈসাদৃশ্য মাত্র। তবে পরিবারের আলোচনায়ও এখন ঐ অভ্যাস চর্চা হচ্ছে এবং আগামীর জন্য এগিয়ে যাচ্ছে এক যমজ ভয়ানক পরিনতির দিকে। সমাজকে, পরিবারকে, দেশকে এবং দেশের সকল চর্চার কেন্দ্রগুলিকে পাশাপাশি যাতায়তের স্থানগুলিকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে নতুবা ঐ প্রলয়ঙ্করী ছোবল আগামী আর ঠেকানো যাবে না।
আমরা নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ভাবি এবং অন্যকে বোকা ভাবতে পছন্দ করি। সময়ের প্রয়োজনে আমরা নিজের আত্মতুষ্টির জন্য বা অন্যকোন ইচ্ছার বহি:প্রকাশের জন্য অনেক অনৈতিক অন্যায্য ও নেতিবাচক কাজ করে থাকি। আর ঐ সকল কাজের জন্য সচেতনতা বা জনসচেতনতা এমনকি বিবেক কোন কাজে লাগে না। তাই এই তিনের কম্বিনেশনকে পৃথক পৃথকভাবে কাজে লাগাতে এগিয়ে আসুন। নতুবা মানব সভ্যতার ক্রমন্নোতিতে এবং চলমান অগ্রসরতার ধারাবাহিকতাতে যেন কোন ছেদাচ্ছন্ন না হয় বা ঘটে সেইদিকে দৃষ্টিদেয়া অতি আবশ্যক। আমাদের এই বিষয়ে বিশেষ বিবেচনায় এগিয়ে যেতে পারদর্শী হতে হবে নতুবা বৈশ্বিক গতির কাজে পরাভ’ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের দেশের মানুষ এখনও হুজুগে ফুসে উঠে এবং চরম দু:খের ঘটনাকেও ভুলে যেতে পারে যাতে কোন সময় নেয়নি। ভুল, দু:খ এবং দূ:দর্শা থেকে শেখেওনি, সতর্কতাও অবলম্বন করেনি। এই আমাদের হালচাল। এইতো কিছুদিন আগেই বিশ্ব দেখল একই অরাজনৈতিক ফলপ্রসু আন্দোলন। যা রাজনৈতিক নেতারা কখনো করতে পারেনি এবং পারবেও না। তবে ছাত্রদের ঐ আন্দোলন থেকে আমরা কেউই শিক্ষা নিয়েছি এবং আভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করেছি বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। কারন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। না সতর্ক হচ্ছে পথচারী; না সতর্ক হচ্ছে ড্রাইভার। সুতরাং মৃত্যুর ভয়ানক ফাঁদ কেঁড়ে নিচ্ছে আমাদের আগামীর সোনালী ভবিষ্যতকে। একটির পর একটি ঘটনা যেন আমাদেরকে তাড়া করেই বেড়াচ্ছে। পুরান ঢাকার ঘটনাটিও একই আদলে নতুন ফাঁদ মাত্র। অর্থই – – কি আমাদের জীবনের সব? অর্থ দিয়েই কি সবকিছুকে অতিক্রম করা যায়। হ্যা হয়ত তাই কিন্তু একটি জায়গায় ঐ অর্থও পরাভৃত। আর সেই জায়গাটি হলো শেষ বিচার বা কিয়ামতের দিনের ব্যবস্থা। তাই সবাই চলুন অর্থকে বা দুনিয়াবী কামীয়াবী বা জেতার মনোভাবকে পরাভৃত করি এবং আখেরী জেতার মনোভাবকে জাগ্রত করে অগ্রসর হয়। তাহলে দুই-ই রক্ষা পাবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ থাকবে পরিবারে, সমাজে এবং দেশে।
মাদক এর ছোবল থেকে তরুন প্রজন্মকে রক্ষায় এখন আমরা সবাই মরিয়া কিন্তু এই আমরাইতো ঐ মাদক ব্যবসায় নিয়োজিত। তরুন সমাজেতো আমাদেরই সন্তানেরা বসবাস করছে। তাই নিজ সন্তানের জীবন রক্ষায় কেন এগিয়ে আসছেন না? কারন ঐ জনসচেতনা বা সচেতনতা এখন আর কাজ করছে না বরং অসাড় বিবেক শুধু অসাড় বস্তুতে বিলীন হয়ে সকল কিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। তাই আসুন আমরা আমাদের নিজের বিবেক কে জাগ্রত করি এবং অসাড়তা থেকে বের হয়ে আসি। নিজে সচেতনতার চর্চা করি। বিবেক জাগ্রত রাখার জন্য প্রতিনিয়ত চর্চা অব্যাহত রাখি। আমার বিশ্বাস এই চর্চায় পারে আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তার তৃপ্তির অতি উত্তম অবস্থানে পিরিয়ে নিতে। কথায় নয় চর্চায়; কথায় নয় কাজে; চিন্তা, কথা এবং কাজ এই তিনের সমন্বয় ঘটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নতুবা স্লোগান, ব্যানার, ফেষ্টুন, কর্মসূচী, কর্মশালা, সেমিনার, লিখা-পড়া সবই বৃথায় পরিণত হবে।
আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে মানুষ এত উন্নত এবং শিক্ষিত ছিলনা। কিন্তু তখন বিবেক, সচেতনতা ছিল, ভালবাসা, মহব্বত ছিল, ক্ষমা ছিল, একে অন্যের পরিপূরক হওয়ার রেওয়াজ চর্চায় জাগ্রত ছিল। কিন্তু এখন যান্ত্রিক জীবনে, শহুরে জীবনে, শিক্ষায় শিক্ষীত জীবনে, অর্থের মাপকাঠিতে উদীয়মান জীবনে, মোট কথা সকল অগ্রসরতায় পিছিয়ে- ক্ষমায়, ভালবাসায়, সচেতনতায় (চর্চায়), শ্রদ্ধাবোধে, একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করায়, সামাজিক যোগসূত্রের নি:শর্ত বন্ধনের, বিপদে পাশে থাকার। কোথায় আমাদের সিমাবদ্ধতা এবং কিসের অভাব? কেন আমরা দিন দিন ঐতিহ্য বা শিকড়কে হাড়াচ্ছি এবং গতিশীলতা নিয়ে নতুন এক অভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করছি? ভেবে দেখবেন কি? আমাদের এই দুর্দশার জন্য কে দায়ী? কিভাবে আমরা পুনরায় ঐ সুন্দর মুহুর্ত্বগুলিকে ফিরিয়ে আনতে পারি এবং আলিঙ্গনে জড়াতে পারি। “আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টি কাজ শেষ করে সকল সৃষ্টিকে দেখেছেন এবং দেখা শেষে একটি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন; আর তা হল (“চমৎকার”)। কোথায় আজ সেই চমৎকারিত্ব? অতি উত্তম। কেন আমরা সেই অতি উত্তম এবং চমৎকারিত্ব হারিয়েছি ? ভেবে দেখবেন কি? আসুন আমরা আমাদের নয় আমার জীবন নিয়ে ভাবি এবং কাজ করি যাতে করে চমৎকারিত্ব ও অতি উত্তম অবস্থার পুনরুদ্ধারে এগিয়ে যেতে পারি। যদি আমি আমার অতি উত্তম অবস্থা এবং চমৎতকারিত্বকে খুজে পেতে পারি তাহলেই পরিবার, সমাজ এবং দেশ ফিরে পাবে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিশ্চয়তা। সচল হবে আমাদের সচেতনতা এবং বিবেক।
নির্বাচনী সহিংসতা, গাড়ি দুর্ঘটনা, হয়রানী, দূর্নীতি, বিৃশৃঙ্খলতা, ক্ষমতার লোভসহ সকল চলমান মহামাড়ি বিতারিত হবে এই দেশ, পরিবেশ, পরিবার, সমাজ থেকে। আমরাই হবো বেহেস্তের পুর্বাবাসের নমুনাস্বরূপ বসবাসোপযোগী বেহেস্তরূপী অভয়ারন্য। আর তার প্রমান অসংখ্যবার সৃষ্টিকর্তা তাঁর কালামের মাধ্যমে আমাদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ রেখেছেন। যাতে আমরা সেই পথে এগিয়ে যেতে পারি এবং দৃষ্টান্তস্বরূপ পৃথিবীবাসীকে দেখাতেও পারি। আসুন আমরা অগ্রসর হই সেই পথে, যে পথে এখনও কেউ গন্তর্ব্যে পৌঁছতে পারেনি। আমরাই পারি এবং পারব এই বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে আমাদের জীবনে ব্যবহার করে বাস্তবে দৃশ্যমান করি বেহেস্তি আমোঘ এবং চির শান্তির মহামিলনস্থল আমাদের এই প্রীয় আবাসভ’মিতে। জয় হউক আমাদের সকলের চলমান অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং সরকারের নেয়া আগামীর সকল সফল ভাবনা।