প্রশান্তি ডেক্স॥ বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার এখন মালয়েশিয়ায়। জীবিকার তাগিদে বহু বাংলাদেশি পাড়ি জমাচ্ছেন দেশটিতে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার নিবিড় সু-সম্পর্ক গড়ে উঠলেও দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। ধরপাকড়ের শঙ্কা যেন কাটছেই না।
মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে শিক্ষার্থী, বিনিয়োগকারীরা ভালো থাকলেও ভালো নেই বেশিরভাগ শ্রমিক। তাদের অনেকেই দেশটিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আদম ব্যবসায়ীদের প্রতারণাই এই দূরাবস্থার মূল কারণ বলে মনে করছেন অনেক প্রবাসী।
মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই দেশটিতে অভিবাসীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অবৈধদের পাশাপাশি বৈধরাও যেন শান্তিতে নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় হানা দিচ্ছে। কাগজপত্র চেক করে পরে বৈধদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে আর অবৈধদের জেল জরিমানা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন থেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন আতাউর রহমান। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘এখানকার ইমিগ্রেশন পুলিশ ধরপাকড় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযানে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশিদের আটক করেছেন তারা। তবে শুধু অবৈধ শ্রমিকই নয় বৈধ শ্রমিকরাও রেহায় পাচ্ছে না এই অভিযান থেকে। নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ প্রবাসীদের আটক করার জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশ মালয়েশিয়ার বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অভিযান চালায়। এই সময় তারা বৈধ শ্রমিকদেরও নানা কায়দায় আটক করে নিয়ে যাচ্ছে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে। পরে যাচাই-বাছাই করে বৈধদের ছেড়ে দেয়া হয়। আবার অনেকে ভোগান্তির শিকারও হন।’
এদিকে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী অভিযানে এখনো কোনো বৈধ বাংলাদেশি হয়রানির শিকার হননি বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বৈধ অভিবাসীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
প্রবাসীরা জানান, এ অবস্থায় একদিকে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুণছেন। আর প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে আছেন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এমনটাই দাবি দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভুক্তভোগীদের।
এর আগে, অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি শ্রমিকদের টার্গেট করে গ্রেফতার করা হত। অবৈধভাবে অবস্থান করে বিদেশিরা ব্যবসা বাণিজ্য করছে এমন অভিযোগে সম্প্রতি বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শতাধিক নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাও আবার দেশটির একজন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে।
একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর পাইকারী বাজারে অভিযান চালিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ এ সময় বাংলাদেশিসহ ১১২ জন অবৈধ বিদেশী কর্মীকে গ্রেফতার করে। এ সময় মালয়েশিয়ার ডেপুটি হোম মিনিস্টার দাতুক আজিজ জামমান এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক দাতুক খায়রুল দাজমি দাউদ উপস্থিত ছিলেন।
ধরপাকড় অভিযানে ইমিগ্রেশন পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনও অংশ দেয়। অভিযানে আটক হওয়াদের কাছে বৈধ কাগজ না থাকায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে বলে অভিবাসন সূত্রে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ার ডেপুটি হোম মিনিস্টার দাতুক আজিজ জামমান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, মালয়েশিয়ার নাগরিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েই অভিযান চালানো হয়। অপর দিকে, ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক খায়রুল দাজামি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রবাসী জুয়েল জানান, ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে অবৈধদের পাশাপাশি বৈধ শ্রমিকও আটক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের অনেকেই টাকার অভাবে দেশে ফিরে যেতে পারছে না। ফলে দিনের পর দিন আটকে আছে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পগুলোতে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব।
তিনি জানান, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান না করা গেলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ অনেকাংশে কমে যাবে। ফলে আমাদের দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহেও ঘাটতি দেখা যাবে বলেও মনে করেন অনেকে।
সাধারণ ক্ষমায় অনেক বাংলাদেশি বৈধ হলেও এখনো প্রায় ১ লাখ অবৈধ রয়েছেন বলে জানায় মালয়েশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম। এর আগে, একটি রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস থেকে সাড়ে ৩শ অবৈধ বাংলাদেশি উদ্ধারের তথ্যও প্রকাশ হয়েছে।
প্রবাসী কবি বাশার খাঁন অপূর্ব বলেন, ‘প্রবাসী রেমিট্যান্স আমাদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখায়। উন্নয়নের অংশীদার হয়। সেই রেমিট্যান্সকে বাধা প্রদান করলে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। কোটি প্রবাসী বোবা কান্না আমাদের থামাতে হবে। ওরা মিছিল করতে পারে না। কারণ ওরা প্রবাসে। এজন্য এদের অধিকার আদায় হবে না তাতো হয় না। সরকারকেই ওদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
দেশে উন্নয়নের এই মহাশক্তি রেমিট্যান্স যেমন দেশের জন্য প্রয়োজন ঠিক তেমনি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বাঁচানোও আমাদের সবার দায়িত্ব। ওদের অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই। বরং আমি, আপনি, সরকারকে যৌথভাবে ওদের সমস্যা সমাধান করে এই যোদ্ধাদের আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন মনে করছেন অনেকে।