প্রশান্তি ডেক্স॥ বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আদালতে মামলা করায় বাদীর হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে বিবাদীরা।
একই সঙ্গে মামলার বাদী হুমায়ুন সরদারকে (৫৫) মারধরের পর গলায় জুতার মালা পরিয়ে মাথায় ও মুখে আলকাতরা মেখে বাজারে ঘোরানো হয়েছে। পরে আহত অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়। এমনকি চিকিৎসা নিতেও বাধা দেয়া হয়। পরে স্বজনদের অনেক অনুরোধে হুমায়ুন সরদারকে উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অমানবিক এ নির্যাতনের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন হুমায়ুন সরদার। অপমান ও লজ্জায় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। বর্তমানে উজিরপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। হুমায়ুন সরদার উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের জয়শ্রী গ্রামের মৃত আনসার উদ্দিন সরদারের ছেলে।
হুমায়ুন সরদারের স্বজনরা জানান, একই এলাকার প্রভাবশালী মানিক সরদারসহ তার স্বজনদের সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল হুমায়ুন সরদারের। মানিক সরদার এ ঘটনায় হুমায়ুন সরদারকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। জমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হুমায়ুন সরদারও আদালতে মামলা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মানিক সরদারসহ তার লোকজন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হুমায়ুন সরদার বরিশাল আদালতে মামলার হাজিরা দিয়ে এলাকায় এসে মসজিদে নামাজ আদায় শেষে ঘরে
ফিরছিলেন। এ সময় মানিক সরদার, দেলোয়ার সরদার, সামসুল হক সরদার, জাহাঙ্গীর সরদার, আ. হক হাওলাদার, সোহেল সরদার, সজীব সরদার, সাইফুল সরদার, রেজাউল সরদার, ফায়জুল সরদার, হাফিজুল সরদার, জুলহাস সরদার, পিয়ারা বেগম, আছিয়া বেগম, আকলিমা বেগম, ফিরোজা বেগম, ফাতেমা বেগম, তাছলিমা বেগম, নাসিমা বেগম, জাহানারা বেগম, লাইজু বেগম ও লাবনী বেগমসহ আরো কয়েকজন হুমায়ুনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত করেন।
এ সময় চিৎকার করলে ক্ষিপ্ত হয়ে হুমায়ুন সরদারকে সবাই মিলে জুতার মালা গলায় পরিয়ে দেন। পুরো শরীরে আলকাতরা ঢেলে দিয়ে জয়শ্রী তেলের পাম্প থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন সড়কে হুমায়ুনকে ঘোরানো হয়।
এতেও ক্ষান্ত হয়নি মানিক সরদার ও তার স্বজনরা। হুমায়ুন সরদারকে গাছের সঙ্গে বেঁধে জুতার মালা পরে থাকা অবস্থায় মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন করা হয়। পরে আহত অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়। ঘটনার পর লোকলজ্জা ও হামলাকারীদের হুমকির মুখে এই অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা কাউকে জানাতে চাচ্ছেন না হুমায়ুন সরদার ও তার স্বজনরা।
উজিরপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুমায়ুন সরদারের কাছে সাংবাদিকরা ঘটনার কথা জানতে চাইলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, মামলা করার অপরাধে তারা আমাকে মারধর, গলায় জুতার মালা ও শরীরে আলকাতরা দিয়ে ঘুরিয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করলে আমাদের এলাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দিয়েছে তারা।
এ সময় ছবি তুলতে চাইলে হুমায়ুন বলেন, জুতার মালা ও আলকাতরা দিয়ে তারা আমায় চরম অপমান করেছে। আপনারা আমার ছবি ছাপিয়ে অপমানের মাত্রা আর বাড়িয়ে দিয়েন না।
এদিকে, হুমায়ুন সরদারকে অপমান-লাঞ্ছিত করার ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উজিরপুর থানা পুলিশের ওসি শিশির কুমার পাল বলেন, বিষয়টি শুনে হুমায়ুন সরদারের সঙ্গে দেখা করেছি। এ ঘটনায় আজ রাতেই মামলা হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।