এক ছোট বালকের জীবন গল্প

আনোয়ার হোসেন॥ ছেলেটাকে রোজ ‘হাউস বিল্ডিং’ ফুটওভারে পত্রিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদিক দিয়ে যেই যায় তার কাছেই সে দৌঁড়ে যায়, আর করুন সুরে বলে “স্যার,একটা পত্রিকা নেন না,স্যার।”কেউ নেয় আর কেউ তাকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। গত দুইদিন ছেলেটাকে দেখতে পেলাম না। তবে যাওয়া-আসার সময় তাকে খুঁজতাম। আজ যখন যাচ্ছি, দেখি ছেলেটা পত্রিকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই তার সামনে দিয়ে যায়-আসে কিন্তু সব কয়টি দিনের মতো সে আর মানুষের পিছনে ছুটছে না। কাউকে বলছেও না স্যার,পত্রিকাটা নেন।ak choto baloker golpo
আমি কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু তার এই অদ্ভুত আচরন আমাকে আর সামনে যেতে দিলো না। ছেলেটির সামনে গিয়ে দেখলাম কোনো এক অজানা ধ্যানে সে মগ্ন,সঙ্গে চোখের কোনায় দু-এক ফোঁটা জল আমি তার গায়ে হাত রাখতেই সে চমকে গিয়ে বলে ওঠলো স্যার, পত্রিকা!
আজ তার পত্রিকা বিক্রির কোনো আগ্রহ দেখছি না। সে যেনো সব হারিয়ে ফেলেছে। তার কন্ঠে বিষাদের একটা আর্তনাদ। তাকে একটু সামনে ডেকে নিলাম। দুজনে একটা চায়ের দোকানে বসি, তখনো তার চলনে যে বাঁধা, আমি তা বুঝতে পারি।
তাকে জিঙ্গাস করি, কি হয়েছে তোর?
সে চুপ করে আছে, কিছু বলছে না,
আবার জিঙ্গেস করায় সে বললো দুই দিন আগে তার মা মারা গেলো, যার চিকিৎসার জন্যে সে মানুষের হাতে পায়ে ধরে দু-একটা পত্রিকা

বিক্রি করতো পাগলের মতো ছুটতো সে, একটা পত্রিকা বেশি বিক্রি করতে পারলে মায়ের জন্য ওষুধের সাথে একটা প্রান বা জুস নিতে পারবে। মা তার শেষ সময়ে অনেক দধি খেতে চাইলো কিন্তু হতভাগা সস্তান পারলো না তার মাকে এক চামচ দধি খাওয়াতে। এসব কথা সে ধীরে ধীরে বলে যাচ্ছে আর আমি শুনছি। কোনো এক অজানা মায়ার চোখের কোনে আমারো একফোঁটা জল চলে এলো।
আজ তার পত্রিকা বেঁচার কোনো তাড়া নাই। পেটে খুদা নাই, নেই দুটা টাকা রোজগারের কোনো আগ্রহ। তার একটাই প্রলাপ, আজ আর পত্রিকা বেঁচে কি হবে? টাকা দিয়ে কি করবে সে? মা যে নেই। কে আজ তাকে রাতে একমুঠো খাইয়ে দিবে ! কাকে জড়িয়ে ধরে সে ঘুমাবে ? মা যে আর ফিরবেনা। একটুপর ছেলেটি বলে ওঠলো, আচ্ছা স্যার আমার আম্মা বেহেশতে যাবে তো ? আমি তার কাঁধের উপর হাত দিয়ে বললাম তোর মতো একটা সন্তান যে মা জন্ম দিয়ে গেলো,সে কি করে বেহেশতে না যায়, অবশ্যই যাবে। তোর মায়ের কোনো কষ্ট হবে না, একটুও না। ছেলেটি জোর করে আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। মা বাবা কত বড় যে নিয়ামত,হয়তো উপলব্ধি হয় না আমাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.