প্রশান্তি ডেক্স॥ কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় নির্মমভাবে পিঠায় মসজিদের ইমামকে। ইমামকে প্রকাশ্যে-রাতভর মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারীরা।
৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ টেকপাড়া গ্রামে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত হাফেজ মাওলানা আবদুর রশিদ একই ইউনিয়নের টেকপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ’র ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক ও চিহ্নিত মাদক কারবারী নুরুচ্ছবি এবং জাফর আলম ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছে। হামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে মামলার প্রস্তুতি ও বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষনা দেন হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াছিন হাবিব।
৯ এপ্রিল গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা। সংবাদ সম্মেলনে আহত হাফেজ মাওলানা আবদুর রশিদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন-মাদক ব্যবসা ও সেবনের কুফল সম্পর্কে মসজিদে আলেমদের সচেতনতামুলক বক্তব্য দিতে অনুরোধ জানান প্রশাসন। প্রশাসনের নির্দেশনা মতে মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিরুদ্ধে আলোচনা করেন ইমাম মাওলানা আবদুর রশিদ। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা ইমামের উপর নির্যাতন চালায়। এলাকার মুসল্লি ও সাধারণ মানুষের সামনে একজন আলেমকে চরম অপমানিত করে। তাতে পুরো এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে।
ভিকটিম হাফেজ আবদুর রশিদ জানান, মাদকের কারণে এলাকার করুণ অবস্থা। ছোট বড় সব বয়সের মানুষ ভয়ানক পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই নামাজ শেষে ও বিভিন্ন আলোচনায় মাদকের কুফল তুলে ধরেন তিনি। তাতে মাদক কারবারীরা নাখোশ। আবার অনেকেই মাদক ব্যবসা ও সেবন থেকে ফিরে এসেছে। ইতিপুর্বে আমাকে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য না দিতে বিভিন্ন সময় হুমকিও দেয়। অবশেষে ৭ এপ্রিল রাতে আমাকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে প্রথমে নুরুচ্ছবির বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেধে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক এর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানসহ ভোর ৪ টা পর্যন্ত নির্যাতন চালায়। হামলার সময় ইমামের ৬ সন্তান ও স্ত্রী গেলেও তাদের সামনে আরো মারতে থাকে। এ হামলা দেখে ইমামের বড় মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে সকালে স্থানীয় মেম্বার আবদুর রাজ্জাক খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঈদগাঁওর’র একটি বেসরকারী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভিকটিম হাফেজ মাওলানা আবদুর রশিদ আরো বলেন-হামলার দিন রাত সাড়ে ১০ টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত হাত-পা বেধে হামলা চালিয়ে তা ভিডিও ধারন করে চেয়ারম্যান পুত্র ইমরুল কায়েস তার ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে চেয়ারম্যান আমার থেকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় ও এ কথা কাউকে না বলতে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
হেফাজত নেতা মাওলানা ইয়াছিন হাবিব বলেন-নির্যাতনকারী ইসলামাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক ও তার লালিত সন্ত্রাসী নুরুচ্ছবি, জাফর আলমকে আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর র্সবস্তরের জনগণ ও আলেম-উলামাকে নিয়ে আন্দোলন করা হবে। তিনি আরো বলেন-জাতীয় গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে সরকারের সহযোগি হিসেবে কাজ করছে আলেম সমাজ। এর অংশ হিসেবে সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে মুসল্লিদেরকে সচেতন করছিলেন ভিকটিম মাওলানা আবদুর রশিদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগি চেয়ারম্যান উক্ত ন্যাক্কারজনক কান্ড ঘটায়।
তিনি আরো বলেন-মাদক, মদ, জুয়া-বেহায়পনার বিরুদ্ধে মসজিদে বক্তব্য দেয়ার কারনে এভাবে হামলার শিকার হতে হয় তাহলে আর কোথায় যাবো আমরা। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন-অবশ্যই এই বিতর্কিত চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক ও তার লালিত সন্ত্রাসী নুরুচ্ছবি এবং জাফর আলমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় কক্সবাজারে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে। তিনি আরো বলেন-অভিযুক্ত চেয়ারম্যান একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী তাই মসজিদে সামাজিক আন্দোলন স্বরূপ ইমাম সাহেব নামাজ শেষে মাদকের বিরুদ্ধে বয়ান করেন। সেই মাদক বিরোধী বয়ান উক্ত চেয়ারম্যান সহ্য না করতে পেরে এ ন্যাক্করজনক হামলা চালিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন-হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ, সদস্য মাওলানা আখতার কামাল, হাফেজ মো: শাহজাহান ও আহত ইমাম আব্দুর রশিদের শাশুড় হাজী ফজল করিমসহ অসখ্য হেফাজত নেতা উপস্থিত ছিলেন।