এক সময়ের কোটিপতি আজ রাস্তার পাগল

প্রশান্তি ডেক্স॥ ভিখারি হতে কোটিপতি হওয়ার গল্প আমরা প্রায় সময় শুনে থাকি। কিন্তু আজ একটু ব্যতিক্রমি কাহিনী রয়েছে। আর তা হলো এক কোটিপতি আজ ভিখারি। শুধু তা নয়, সড়কের পাগল, ১০ টাকা পেলেই মহা খুশী। দারিদ্র্যকে জয় করে জীবনে সফলতা অর্জন করা মানুষের সংখ্যা আমাদের সমাজে কম নয়। দারিদ্রকে জয় করা ব্যক্তিদের দেখে অনুপ্রাণিত হয় অনেকেই। তবে পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের অতীতে প্রচুর প্রাচুর্যের অধিকারী ছিলো তবে এখন দু’বেলা খাবার জোটে না তার।
একেই বলে নিয়তি! সৃষ্টিকর্তা কখনো কখনো কাউকে ধনী বানান। আবার কখনো রাস্তার ফকির বানান। তার কারিশমা বুঝা খুব মুশকিল। সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা করলেই যে মানুষকে কোটিপতি থেকে রাস্তার ফকির বানাতে পারেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ মহাম্মদ আজিম। বছর চারেক আগেও মহাম্মদ আজিম ছিলেন রামু উপজেলার তেচ্ছিপুল এলাকার অন্যতম ধনী ও কোটিপতি। akshomy kotepoteরামুর মিলিয়নারদের মধ্যে একজন। আর পাঁচটা ধনবানদের মতোই বিলাসবহুল জীবন ছিল তাঁর। টাকা খরচ করতেন পানির মতো। বিলাসবহুল বাড়ি। বিদেশি গাড়ি। দামি স্মার্টফোন।
সব মিলিয়ে আজিমের জীবনে বিলাসিতার অভাব ছিল না। স্ত্রীরকে কিনে দিয়েছিলেন দামি ফোন। সেই মানুষটাই এখন রামু-কক্সবাজারের সড়ক-মহাসড়কের পগল ও ভিখারী। দিন খুব ভালো হলে রোজগার হয় ২০ থেকে ৪০ টাকা। তা পেলে সে মহাখুশী। স্ত্রী-সন্তান তো দূর-অস্ত, খরচ না পেয়ে পরিবারটি এখন ছিন্ন-ভিন্ন। হ্যাঁ, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রামু তেচ্ছিপুলের মহাম্মদ আজিম এখন ফুটপাতের পাগল।
হাইস্কুল ড্রপ-আউট আজিম ছিলেন রামু তেচ্ছিপুলের মিলিয়নিয়ার। মাত্র ১৭ বছর বয়সে কাজ শুরু করেছিলেন। তিন বছরেই হয়ে যান কোটিপতি। ভাগ্য নাকি কর্ম? কোন অশান্তিই তাঁকে ক্ষমতার গজদন্ত মিনার থেকে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়েছে রাজপথে। এক সময় ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজারের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন আজিম। কয়েক হাজার মানুষের মতো আজিমও রামু-কক্সবাজারের সফল ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে ওঠেন অচিরেই। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পান, শুঁটকি ইত্যাদি পাঠানো হত। এই ব্যবসায় রাতারাতি ধনী হয়ে যান মহাম্মদ আজিম।
কিন্তু সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ভাগ্য নাকি অভিশাপ। নিয়তির হানায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে আজিমের জীবন। গত এক বছরে রাস্তার পাগল। অনেকে বলছে, অভিশাপ ও অহংকার এবং মিথ্যাচারের জীবন যুদ্ধের জেরেই আজিমের সঙ্গে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিধাতা। একে একে বিক্রি করেছেন সব কিছু। গাড়ি, বাড়ি, স্মার্টফোন, কম্পিউটার- সব কিছু। আজ তিনি নিঃস্ব।
শুধু আজিমই নন, জীবনযুদ্ধে বিধ্বস্ত রামু-কক্সবাজারে এখন একসময়ের বহু ধনী ব্যক্তিরই পেশা চা, কফি, আইসক্রিম, খবরের কাগজ বিক্রি। কেউ কেউ তো দায়ে পড়ে পরিবারের লোকেদের যৌন ব্যবসাতেও নামাতে বাধ্য হচ্ছেন। মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে শিশুরা বেছে নিচ্ছে দেহ ব্যবসা।
পেটের জ্বালা, বড় জ্বালা। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ আজিমের আর্তনাদ, ‘পতন’ তার ক্ষমতা দিয়ে আজিমদের গ্যাস ঢেলে তো মেরে ফেলতে পারে। এভাবে আর বাঁচিয়ে রেখে লাভ কী? পাগল আজিম খিদের পেটে নিজের পায়খানা খাচ্ছে। এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে! ভাগ্যের প্রভাবে যে কারো জীবন যে, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তেমনই একজন মানুষ আজিম।
কোটিপতি থেকে পথের ভিখারি হয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তির আশা ও উদারতা দেখে যদি আপনি কিছু শিখতে চান তাহলে এই লোকটির জীবন আপনার জন্য বড় উদাহরণ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.