কথা দিয়ে কথা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা কোরআন ও হাদিছে এমনকি সমস্ত কিতাবে স্বীকৃত। ওয়াদা বরখেলাফকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাই এই গর্হিত খোদাবিরোধী, বেরাজী বা নারাজী কাজটুকু করা থেকে বিরত থাকা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। পাপের কোন রকম ফের নেই; পাপ পাপই, এতে ছোট বা বড়র কোন মাপকাঠি নেই। ছোট পাপও পাপ এবং বড় পাপও পাপ। তাই কোন পাপই করা যাবে না। কারণ পাপের শাস্তি একই। কিন্তু দূভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের সমাজে, পরিবারে এবং রাষ্ট্রের স্তম্ভে এখন কথা দিয়ে কথা না রাখার প্রক্রিয়ার আক্রান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে এগুচ্ছে। এই দোষে দোষীর দায়ে এখন পাপাক্রান্ত গোটা সমাজ ব্যবস্থা। কোনখানে নেই এই পাপের ছোয়া?! বরং এর প্রকোপে আক্রান্ত হয়ে হিতাহীত জ্ঞানশুন্য দশা দৃশ্যমান।
সমাজের সম্মানীত এবং পুজনীয় ব্যক্তিরা এবং পরিবারের ছোট বড় সকলেই এই পাপের পরিণতির স্বীকার। শুধু তাই নয় প্রশাসন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ইমাম, শিক্ষকসহ সকলেই এই কথা দিয়ে কথা না রাখার দায়ে পাপাক্রান্ত। তাই গবেষণা এবং বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এই পাপাক্রান্ত স্বভাব বা কথা দিয়ে কথা না রাখার চলমান ধারাবাহিকতা দীর্ঘদিনের এবং এর চর্চার বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে এখন। আমরা কথা দিয়ে থাকি সদাহাসোজ্জ্বল প্রকাশের মাধ্যমে কিন্তু কথা রাখার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে নেই কোন প্রতিক্রিয়া বা প্রতিশ্রুতি এমনকি কথা দেয়ার কথাও মনের রাখার প্রয়োজনীয়তার অভাব। কথা দিয়েছিলাম এবং এর জন্য কাজ করতে হবে তা ভাবনাতেও থাকেনা এমনকি স্বরন করিয়ে দিলেও তা আর কাজে আসে না। যা অহরহ দৃশ্যমান হচ্ছে। এতে করে সমাজে এখন বিশ্বাসের জায়গায় নতুন কোন এক মানদন্ড প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। আর বিশ্বাসবিহীন জীবন হতাশা ও নেতিবাচকতায় ভরপুর। যেখানে শয়তানের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে যেন তেন কাজ করে পাপের পুর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়ে অন্যকেও সক্ষম করে তোলে। ন্যায়-অন্যায়ের মানকাঠি ধ্বংস হয়ে অন্যায়ের সা¤্রাজ্য বিস্তার লাভ করে।
আগে দেখেছি কথা দিয়ে কথা না রাখার প্রবণতা ছিল শুধু বাটপার, টাউট এমনকি প্রতারকদের দখলে। আর কেউ প্রতারিত হলে বা বাটপারির স্বীকার হলে অথবা টাউটারির কবলে পড়লে অন্যেরা বলত ঐ টাউট, বাটপার, প্রতারকের কাছে কেন গেলি বা ওর খপ্পরে কেন পড়লি। ঐ চিহ্নিত শ্রেণী মাঝে মাঝে ভাল কাজও করতো যেন ঐ নেতিবাচক কাজকে ধোপে টিকানো যায় এবং চলমান রাখা যায়। তবে ঐ চিহ্নিত শ্রেণীর সঙ্গে আবার নতুন করে কেউ কেউ যুক্ত হতো যাতে করে ঐ অচেনাদের ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়া মুশকিল হয়ে যেতো। তবে কেউ সর্বশান্ত হতো আবার কেউ কেউ কোন রকমে জীবনে বেঁচে থাকার সংগ্রামে টিকে যেত। গ্রাম থেকে শহরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঐ অবস্থার বিরাজমান ছিল এবং আছে ও থাকবে। কিন্তু বর্তমানে যুক্ত হয়েছে নতুন সংযোজন যা খুবই ভয়াবহতম।
মানুষের আশ্রয় এবং আশার জায়গাগুলো এমনকি মানুষ যাদেরকে অনুসরণ করে এবং করবে ঐসকল মানুষগুলি এখন যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে এবং নেতিবাচকতার সঙ্গে আপস করেছে ও কথা দিয়ে কথা না রাখার প্রবণতার সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করে ফেলেছে। কি ঘটছে তা বলার কোন সুযোগ নেই তবে এতে করে অনুসরণকারীরাও এখন বিভ্রান্ত এবং তাদের কেউ কেউ এই গড্ডালিকা প্রবাহে গ্যা ভাসিয়ে দিচ্ছে আবার কেউ কেউ নতুন কোন সূত্র বা উপায় বের করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে এমনকি নিরব থেকে ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিতে ভুগছে।
কি কারণ লুকিয়ে আছে ঐ মহান ব্যক্তিদের কথা না রাখার ক্ষেত্রে? তা সাধারণে চিন্তা ও ধ্যান-জ্ঞানের বাইরে। তবে সাধারণ ও অতি ক্ষুদ্র তবে সুক্ষ চিন্তার আলোকে বলা যায় যে, ঐ সর্বশ্রদ্ধেয় মহান ব্যক্তিরা বা অনুসরণীয়, অনুকরণীয়, পুজনীয় ব্যক্তিরা কি কথা দেয়ার কথা কাজের চাপে ভুলে যান অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুলে যান, বা শুধু পরিস্থিতি ও মন রক্ষার প্রয়োজনে কথা দিয়ে থাকেন নাকি অন্য কিছু? আর অন্য কিছুটাই বা কি? ঐ মহান মানুষদের সহকারীর তো অভাব নেই; সেই সহকারীরাও কি মনে রাখতে পারেন না এবং সর্বশ্রদ্ধেয়দের স্মরণ করিয়ে দিতে পারেনা না, নাকি তারা ইচ্ছা করেই ভুলে যেতে সাহায্য করেন। এই ভুলে যাওয়ার জন্য সমাজের, পরিবারের, দেশের অথবা আগামী প্রজন্মের কি অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে এবং হবে তাকি ভেবে দেখার কোন সুযোগের অবকাশ নেই। আর যদি থেকে থাকে তাহলে এখনই সময় গুরুত্ব দিয়ে আগামির বিশ্বাস, ভরসা এবং শ্রদ্ধার ও অনুসরণ/ অনুকরণের জায়গাটুকু অটুট রাখার জন্য একযোগে ঐক্যের সমন্বয়ে কাজ করার। নতুবা নতুন কোন অজানা শঙ্কা আমাদের জীবনে ছোবল আনতে পারে।
আমাদের শ্রদ্ধার মানুষগুলো যেন সকল অবস্থায় শ্রদ্ধার জায়গায় থাকে এবং সকলে মিলে শ্রদ্ধা ও ভালবাসাটুকু অব্যাহত রাখতে পারি সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে। সেই চেষ্টার মাঝে যেন কোন কিন্তু না থাকে বা কোন কথা না রাখার দায় না থাকে। সকলে মিলে নি:শর্ত ও নি:স্বার্থ ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অব্যাহত রেখে সকল ভালগুলির চর্চা চালিয়ে যেতে হবে এবং ইতিবাচক মনোভাবের জাগ্রত রূপ প্রকাশ করতে হবে। আরো বলতে চাই ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সামগ্রীক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নিরলস কাজ করতে হবে। নিজের ক্ষতি হলেও অন্যের উপকারের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে এবং অমংগল কারীর উপকারে নিয়োজিত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাও তাই। আমরা সবাই মিলে মিশে এই সমাজ বিনির্মানে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার বাস্তবায়নকে কার্যে পরিণত করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত ক্ষমতা ও সম্পদকে তাঁর সৃষ্টির কল্যাণের তরে ব্যবহার করতে হবে। নিজের কৃতকর্মের দিকে দিষ্টিপাত করতে হবে এবং অনুশোচনায় খুজে বের করতে হবে ভাল এবং মন্দের দিকগুলি। সেই আলোকে আগামীর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে মানব কল্যাণের তরে। যারা আমরা দায়িত্ব পেয়েছি মানব কল্যাণের নিমিত্তে কাজ করার তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে যেন মানব কল্যানের নিমিত্তেই কাজ সম্পন্ন হয়। কথা দেয়ার ক্ষেত্রে রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ এই মহান দায়িত্ব আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। অংহকার এবং ঘৃণা ও ক্রোধ পোষে রাখা যাবে না বরং এই তিনের বিনাশ সাধনে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঘৃণা ও ক্রোধের বশবতি হয়ে কারো ক্ষতি করা যাবে না বরং ক্ষমাশীল দৃষ্টি দিয়ে ক্ষমার বহি:প্রকাশ ঘটাতে হবে। যাতে খোদা প্রদত্ত দায়িত্ব খোদায়ী স্ববাভের আলোকে পালিত হয় এবং এই দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মানব কল্যানের দৃষ্টান্ত বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়ায় ও প্রকাশিত হয়। যার উৎসাহ আগামীর দায়িত্ব পালনকারীদের জন্য অনুকরণ, অনুসরন এবং উদাহরনস্বরূপ বিরাজমান থাকে।
চারিদিকে যা দেখেছি এবং আমার জীবনে যা ঘটেছে সেই আলোকে এই লিখা। কাউকে আঘাত দেয়ার লক্ষ্যে নয় বরং সকলকে ভালবাসা প্রদর্শন ও আগামীতে একসঙ্গে মানবতার উন্নয়নে এবং কল্যাণের তরে নিখুত কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এমনকি সর্বশ্রদ্ধা ও ভালবাসা অব্যাহত রাখার নিমিত্তে এই লিখা। তারপরও বলব এই লিখায় যদি কেউ আঘাত পান তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন; আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আমার এই লিখা কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য নয় বরং আঘাত মোচনের জন্য। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং যাব; তবে একসঙ্গে কাধে কাধ রেখে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আমাদের সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এবং দেশবাসির কল্যাণের সুনিশ্চয়তা বিধানে অব্যাহত যাত্রা চলমান রেখে। আসুন আমাদের সঙ্গে একই কাতারে একই উদ্দেশ্যে সামিল হই। এই দেশ আমার আপনার সকলের। তাই বিবেধ ভুলে গিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের কল্যাণে এবং মানবতার কল্যানে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করি।
আমরা একে অন্যের ভাই এবং পরিপুরক। একজন অন্যজনকে ছাড়া আমাদের পরিপূর্ণতা আসে না তাই বিবাদে জড়িয়ে আমাদের মাঝখানে শয়তানকে সুযোগ না দিয়ে বরং নিজেরা সমৃদ্ধ হই এবং সকল নেতিবাচকতার অবসান ঘটাই। নিজের প্রয়োজনে অন্যকে ব্যবহার থেকে বিরত থাকি; অন্যকে ফাসিয়ে নিজে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে না যায়। কারণ সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন ন্যায় বিচারের দায়িত্ব নিয়ে আর তিনিই একমাত্র সকল বিচারকের বিচারক এবং সকল ক্ষমতার উর্ধ্বে। তাই তার কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে আর তা হবে একমাত্র দরিদ্র হালাতেই। কোন মানুষেরই প্রত্যাবর্তনে আভিজাত্য, জ্ঞান-গরিমা এমনকি সম্পদ/ ক্ষমতা কাজে আসে না। পৃথিবীর সকল মানুষই একই নিয়মে পৃথিবীতে আসে এবং ঐ একই নিয়মেই আবার ফিরে যায়। তাই এই অল্প দিনের জন্য আমরা আর নিজেদের ক্ষতিটুকু না করি। বরং অন্যের উপকার করে নিজেদের উপকার বয়ে আনি। ক্ষমা করার প্রবণতা বৃদ্ধি করি কারণ সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের ক্ষমা তাই আমরা ক্ষমা করে সেই ক্ষমার পথ প্রসস্থ করি। আমাদেরকে আল্লাহ আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাক তার সকল কিছু দিয়ে যাতে আমরা খুজে ফিরে পাই সৃষ্টিকর্তার সেই সন্তুষ্টি; যেখানেই নিহিত রয়েছে আমাদের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ।
লেখাটির সঙ্গে সামগ্রীক বাস্তবতার মিল খুজলে আশা করি সকল কিছুই পরিস্কার হবে এবং নিজেকে সুধরাতে কাজে লাগবে ও আগামীর কল্যাণের তরে নিজেদেরকে আরো স্বচ্ছভাবে নিয়োজিত করতে পারবো। আমাদের এই পথচলায় আগামীর প্রয়োজনে সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ এবং তাঁর সৃষ্টির সহযোগীতা অব্যাহত প্রয়োজন। আমরা আশা করব যে, সকল নেতিবাচকতা এবং ক্ষমতার দাম্বিকতা ও অন্যায়ের ষড়যন্ত্র এই চৈত্রের খড়তাপে পুড়ে ছাই হবে এবং ন্যায় ও নীতি এবং আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়ীত হবে। জয় হউক আমাদের অগ্রযাত্রার এবং আগামীর কল্যানের কান্ডারীদের স্থায়ীত্ব দীর্ঘায়িত হউক এবং শয়তানের বহুরূপী ব্যবহার চিরতরে নির্মূল হউক এই প্রিয় মার্তৃভূমি বাংদেশ থেকে। আসুন আমরা কথা দিয়ে কথা রাখার চেষ্টায় লিপ্ত হই এবং পুরাতনকে ক্ষমার আদলে মাফ করে নতুনকে আকরিয়ে আগামীর উন্নয়ন সংগ্রামে দ্বিগুণ বলে বলিয়ান হই।