প্রশান্তি ডেক্স॥ বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি নেয়ায় মাদরাসার পরিচালক কর্তৃক প্রকাশ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হলে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। অনেকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছেন। মঙ্গলবারের এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার সালমা বেগম বাদী হয়ে গত বুধবার ফয়জুল উলুম নামে ওই মাদরাসার পরিচালক শামশুল হুদাসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে আলীকদম থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ফয়জুল উলুম মাদরাসায় একটি টিউবওয়েল আছে। যেখান থেকে প্রতিদিন এলাকাবাসী খাবার পানি নিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার সকালে সালমা বেগমের বড় ছেলে আলম কলসি নিয়ে মাদরাসায় পানি আনতে গেলে তাকে বাধা দেয়া হয়। এর প্রতিবাদ করলে মাদরাসার পরিচালক শামশুল হুদা মসজিদের ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে আলমের ডান হাতে, ডান কান ও পিঠে জখম করে। পরে সালমা বেগমের মেঝ ছেলে রফিক তার বড় ভাইকে মারার কারণ জানতে চাইলে তাকেও শামশুল হুদার নির্দেশে কিল-ঘুষি মেরে মাদরাসা থেকে বের করে দেয়া হয়।
খবর পেয়ে সালমা বেগম ও তার মেয়ে মাদরাসার সামনে এলে শামশুল হুদা সালমা বেগমকে গলা চেপে ধরে মাদরাসার দেয়ালে সজোরে ধাক্কা মারে। তাকে ইটের টুকরো দিয়ে আঘাত করা হয়। সামলা বেগম এতে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং ঘটনাস্থলে পড়ে যান।
স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায় এবং বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।
ঘটনার পর উল্টো সালমা বেগম ও তাহার ছেলেদের মারধরসহ মামলায় জড়ানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন শামশুল হুদা। এ বিষয়ে আলীকদমের ফয়জুল উলুম মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মুফতি শফিউল আলম বলেন, ইসলামী শরিয়ত মতে একজন নারীর গায়ে হাততোলা চরম অপরাধ, এটা অন্যায়। এটা চরম লজ্জারও।
মাদরাসার কাজের বুয়া আম্বিয়া খাতুন বলেন, মাহফিল উপলক্ষে সবাইকে পানি না দিতে মাদরাসার পরিচালক নিষেধ করেন, তাই আমি সালমা বেগমের
ছেলেকে পানি নিতে বাধা দিই, কিন্তু সে গালাগালি করে। পরে হুজুর (শামশুল হুদা) আসলে তাকে বিষয়টি জানাই এবং হুজুর ঝাড়ু দিয়ে আলমকে আঘাত করে এবং মাদরাসা থেকে বের করে দেয়।
ফয়জুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক তৌফিক বলেন, আলীকদম থানা থেকে এএসআই খালেদসহ কয়েকজন পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরে দুই পক্ষকে থানায় যেতে বলেন। সেখানে আলীকদম থানার ওসি রফিক উল্লাহ ঘরোয়াভাবে দুই পক্ষকে আলাদাভাবে বুঝিয়ে মীমাংসা করেন এবং সালমা বেগম ও তার ছেলের চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ বহন করার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
সালমা বেগমের ছেলে মো. রফিক বলেন, তিনি (হুজুর) আমাদের মারতে পারেন কিন্তু একজন মহিলার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। ওসি স্যার বলার পর আমরা সমাধানে আসছি কিন্তু মাদরাসার পরিচালকের হুমকি প্রদান আরও বেড়ে যায়।
আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক রনি কর্মকার জানান, সালমা বেগমের কোমরে প্রচুর ব্যথা হচ্ছে তাই শারীরিক পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় সালমা বেগম পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দুই-তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।