ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভূয়া দলিল সৃজন করে প্রায় ৭ একর ভূমি দখলের পায়তারা করছে মাহবুবুল আলম দুলাল ভূইয়া নামের এক ভূমিদস্যু। প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে কসবা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। পরিবারটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণীর প্রতিকারও চেয়েছেন পরিবারের অভিভাবক মো. ফরিদ মিয়া ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. ফরিদ মিয়া। তিনি বলেন, তার পিতা সৈয়দ আলী ভারত থেকে ১৮ একর ২৬ শতক ভূমির বিনিময় সুত্রে কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের গৌরাঙ্গলা মৌজার সস্তাপুর গ্রামে আসেন। ওই সম্পত্তি ১৯৯৪ সনে ২৪ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকারের পক্ষে ৪১৭৬/৬৮-৬৯ ও ৪১৭৭/৬৮-৬৯ রেজিষ্ট্রি করে দেন।
ওই সম্পত্তির সৈয়দ আলীর নামেই বাংলাদেশ জরিপের সময় মাঠের খতিয়ানে রেকর্ড ভূক্ত হয়। এতে কসবা উপজেলার গৌরঙ্গলা গ্রামের মাহবুবুল আলম দুলাল ভূইয়া কসবা সেটেলম্যান্টে ৩০ ধারায় আবেদন করলে তা বাতিল করে দেন। ২০০১ সনে সৈয়দ আলী মারা যান। পরে ২০০৪ সনে আবারও ৩১ ধারায় আপিল করেন মাহবুবুল আলম দুলাল ভূইয়া। এ সময় সৈয়দ আলীর ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে তিনি ১৯৬৮ সনের একটি ভূয়া দলিল দেখিয়ে তাঁর নামে প্রায় ৬ একর ৬৬ শতাংশ ভূমি বিএস খতিয়ান করে নেয়।
তারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা সংগ্রামের যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী কসবা সাব-রেজিষ্টার কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এতে করে ১৯৬৮ সন থেকে ১৯৭১ সনের দলিলের প্রমাণপত্র পুড়ে যায়। দুলাল ভূইয়া ভূয়া দলিল তৈরী করে বিএস খতিয়ান করেন।
ওই খতিয়ানের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মোকদ্দমা করেছেন মৃত সৈয়দ আলী ছেলে ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। অপরদিকে সৈযদ আলীর জীবদ্দশায় মাহবুবুল আলম দুলাল ভূইয়ার সাথে ২১৮ দাগের ৯৬ শতাংশ ভূমির বিনিময়ে ২২১ দাগের ৭২ শতাংশ ভূমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার কথা। কিন্তু সৈয়দ আলী রেজিষ্ট্রি করে দিলেও দুলাল ভূইয়া রেজিষ্ট্রি করে দেননি।
সৈয়দ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জোর পূর্বক দুলাল ভূইয়া ও তার পরিবারের লোকজন ভূয়া দলিলের মাধ্যমে জোরপূর্বক তাদের সম্পত্তি দখল করতে চায়। বাঁধা দিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। তিনি বলেন, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ৩টি ফৌজদারী মামলা চলমান রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে ক্ষতিগ্রস্থ মো. জাহাঙ্গীর আলম, বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. হারুন মিয়া, মো. সেলিম মিয়া, গৌরাঙ্গলা গ্রামের আবু তাহের, মো. রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ বাপ্পী ও মো. খোরশেদ আলম।
বায়েক্ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. হারুন মিয়া বলেন, সৈয়দ আলীর জীবদ্দশায় মাহবুবুল আলম দুলাল ভূইয়ার সাথে জমি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু কোন সময়ই ১৯৬৮ সনে দলিল রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছেন কোন দিনও দেখাননি। সৈয়দ আলীর মৃত্যুর কয়েক বছর পর তিনি বলছেন ১৯৬৮ সনে তিনি সৈয়দ আলীর কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন তবে তিনি কোন দলিলের মুল কপি দেখাতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, মাহবুবুল আলম দুলাল ভূইয়া জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তাঁর বয়স ১৯৬৮ সনে ১৩ বছর তিনি কিভাবে জায়গা কিনলেন এবং উপরোক্ত সভাগুলোতে আমি উপস্থিত ছিলাম।
কসবা থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) ফারুক হোসেন বলেন, বিষয়টি মিমাংসার জন্য কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কোন সুরাহা হয়নি। দুলাল ভূইয়া ১৯৬৮ সনের মুল দলিল উপস্থাপন করেন নাই।
বাংলাদেশ সপ্রীম কোর্টের জৈষ্ঠ আইনজীবি ড. মোহাম্মদ ইদ্রিছ ভূইয়া বলেন, ১৯৯৪ সনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকারের পক্ষে ৪১৭৬/৬৮-৬৯ ও ৪১৭৭/৬৮-৬৯ সৈয়দ আলীর নামের নিবন্ধিত দলিলে উল্লেখ রয়েছে বিনিময় দলিলের শর্ত ও ভূমি হস্তান্তর আইন ভূমি রেজিষ্ট্রিশনের পূর্বে জমি নিয়া কোন নাফকবলা দলিল করে দেবার আইনগত অধিকার দেয় নাই।