প্রশান্তি ডেক্স॥ দীর্ঘদিন ধরেই কারখানা শ্রমিক ভাবি হাসনা আক্তারের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন দেবর কমরউদ্দিন (২৫)। একসময় ভাবি হাসনা আক্তার বিয়ের জন্য দেবরের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। আর এতেই দেবর হয়ে ওঠেন ঘাতক। গত রোববার রাতে শ্বাসরোধ করে ভাবিকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখেন কমরউদ্দিন।
সোমবার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মুঠোফোনের সূত্র ধরে গত সোমবার রাতে ঘাতক কমরউদ্দিনকে উপজেলার পেলাইদ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার কমরউদ্দিন শ্রীপুরের জাম্বুরীর টেক গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। আর নিহত হাসনা আক্তার কমরউদ্দিনের বড় ভাই কফিলউদ্দিনের স্ত্রী। হাসনা-কফিল উদ্দিন দম্পতির ছয় বছর বয়সী এক কন্যাসন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় গত সোমবার রাতেই হাসনা আক্তারের বাবা সোনাকর গ্রামের নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিব কুমার সাহা জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে শ্রীপুরের গাড়ারণ এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশ থেকে গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গলায় ওড়না পেঁচানো হাসনা আক্তারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ঝুলন্ত মরদেহের পা মাটিতে লেগে থাকায় ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর পর এসআই রাজীব কুমার সাহার নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। মরদেহের সঙ্গে একটি মুঠোফোনও উদ্ধার করা হয়। পরে মুঠোফোনের কথাবার্তার সূত্র ধরে সোমবার রাত ১২টার দিকে মোবাইল ট্র্যাকিং করে পেলাইদ এলাকা থেকে কমরউদ্দিনকে আটক করা হয়। পরে তাকে মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কমরউদ্দিনের বরাত দিয়ে রাজিব কুমার সাহা জানান, দীর্ঘ আট বছর আগে কমরউদ্দিনের বড় ভাই কফিলউদ্দিনের সঙ্গে হাসনা আক্তারের বিয়ে হয়। তার ভাই
একজন রিকশাচালক। বিয়ের পর তাদের সংসারে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে হাসনা আক্তারের সঙ্গে তার স্বামীর বনিবনা হচ্ছিল না। এর জের ধরেই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে হাসনা আক্তার দুই বছর আগে শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামে এক বাসা ভাড়া নিয়ে স্থানীয় পারটেক্স গ্রুপের কারখানায় অপারেটরের
কাজ নেন। আর হাসনা আক্তারের মেয়ে তার বাবার সঙ্গে বাড়িতেই থাকত। একসময় বড় ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন কমরউদ্দিন। পরে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই হাসনা আক্তারের স্বামী কফিলউদ্দিন স্ত্রীকে পূর্বের তিক্ত সম্পর্ক ভুলে গিয়ে নতুনভাবে সংসার শুরু করার জন্য নিজ বাড়িতে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। আর হাসনা আক্তার স্বামীর আপন ভাইকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। ঘটনার দিন রোববার বিকেল থেকেই হাসনা আক্তার দেবর কমরউদ্দিনকে দেখা করার জন্য অনুনয়-বিনয় করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ মুঠোফোনে কথাবার্তাও হয়।
পরে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাড়ারণ এলাকায় একটি সেতুর পাশে দেখা করেন। হাসনা আক্তার সে রাতেই তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু দেবর কমরউদ্দিন এতে সাড়া না দেয়ায় উভয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এরই একপর্যায়ে হাসনা আক্তারের গলায় থাকা ওড়না পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে ঘটনাস্থলেই হত্যা করেন দেবর কমরউদ্দিন।
পরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য দেবর তার ভাবির মরদেহ ঝোপের আড়ালে একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। পরদিন স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শ্রীপুর থানা পুলিশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।