নীতি, রাজনীতি ও বিবেক

Vector-Smart-Object-1-300x127[1]নীতি ও বিবেক একত্রিতভাবে কাজ করলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে বদলে যাবে তবে এর সঙ্গে যদি রাজনীতিটুকু যুক্ত হয় এবং তিনের মিলে এক হয় তাহলে পৃথিবীতেই বেহেস্তের স্বাদ আস্বাদন করা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে এই তিনের মধ্যে মিলতো নেই-ই বরং চলছে বিভেদ। এই বিভেদের রোষানলে পড়ে পুড়ে ছাড়খার হচ্ছে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ আগামীর জীবন এবং ধ্বংস হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির ভারসাম্য। তাই এখন মৌসুম বলেন আর নাই বলেন সব ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশৃঙ্খলা এবং দৃশ্যমান হচ্ছে বৈরী আচরণ। চিরাচরিত নিয়মের বাইরে গিয়ে এই আচরণ এবং বিশৃঙ্খলা বিরাজমান হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীতে। মানুষ আবার একে কিয়ামতের পূর্বালামতও বলছে। তবে পৃথিবী যে শেষের দিকে এসেছে তা আর বলার অবকাশ রাখে না বরং দ্রুতলয়েই এগিয়ে যাচ্ছে সেই প্রতিক্ষিত ক্ষণের দিকে।
নীতির প্রশ্নে বলা যায় মানুষ একে অপরের পরিপুরক হয়ে কাজ করবে এবং সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত থাকবে এটাই ছিল স্বাভাবিক এবং সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও আমাদের প্রতি তাঁর অভিপ্রায়। কিন্ত আজ এর ব্যতিক্রম ঘটেছে এবং এর বাইরেও অনেক খোদাবিরোধী কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। সমাজে সকলের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন কাম্য নতুবা কথার হ্যা যেন হ্যা হয় আর না যেন না হয়; মর্মবানী বিসর্জিত হবে। তবে মানুষ বলে এক আর প্রকাশ করে এবং কাজ দৃশ্যমান রাখে আরেক বিষয়। দ্বিমুখী বা তৃমূখী আচরণের বেড়াজালে বন্ধি এখন আমাদের নীতি এবং নৈতিকতা। ইমান ও আমল এখন পর্যবসীত হচ্ছে লৌকিকতার ছলনায় আর নিজেকে ঠকানোর প্রতিযোগীতায়। এই ঠকানো কিন্তু জাগতিক নয় বরং পরকালীন যা মানুষের ভাবনা চিন্তার বাইরে।
সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষ মোট কথা ধর্ম-বর্ণ- গোত্র এমনকি উচু -নিচু সকল স্তরেই আজ নীতি পিষ্ট হচ্ছে অনৈতিকার চর্চারত শক্তিশালী ছোবলে। এই ছোবল থেকে রক্ষা করার জন্য এখন অস্ত্র মাত্র একটি আর তা হল পরকালীন জীবনের নিশ্চয়তার বিধানাবলী অবলম্বন ও সুস্পষ্ট চর্চা এবং প্রকাশ্য ব্যবহারোপকারীতা। তাই আসুন আমরা পরিবার থেকে এই চর্চা শুরু করে সমাজ এবং রাষ্ট্রে এর বিস্তার ঘটায়। এখনই সময় এর চর্চাকে প্রসারিত করার নতুবা যা রয়েছে অবশিষ্ট তাও বিলুপ্তির মাধ্যমে নুতন এক অধ্যায়ের সুচনা হওয়ার উপক্রমিক যাত্রারম্ভ মাত্র। ব্যবসায়ী, রাজনীতিক এবং চাকুরীজিবীদের জীবন ও কর্মপ্রবাহে এই নীতিকে খোদায়ী বা সৃষ্টিকর্তার নীতির আলোকে ভিত্তিদিয়ে চর্চায় পরিণত করি। কারণ সকলেরই ইচ্ছা ও আকাঙ্খা এক; আর তা হলো সেবা আর এই সেবার কাজে নেতিবাচক প্রতিযোগীতা পরিহার করে ইতিবাচক প্রতিযোগীতা ও চর্চা শুরু করা অতীব প্রয়োজন। যে যেভাবে এই সেবায় মনোনিবেশ করেছে তার এই সেবার কাজকে দৃশ্যমান রাখতে নিজ নিজ উদ্যোগে কাজে নেমে পড়ার এখনই সুযোগ। প্রতিবন্ধকতা নয় বরং প্রতিযোগীতায় এবং সেবার কাজে সহযোগীতা-ই প্রাধান্য হিসেবে পরিগণিত হউক। সরকার এবং বিরোধী দলের নীতি এমনকি রাজনৈতিক দলের নীতি এক হওয়া উচিত। দ্বিমত পোষনে নীতির যোগসূত্রে অনৈতিকতা বন্ধ হওয়া উচিত। সকলেই সেবক তাই সেবকদের সেবার কাজে বিঘœ সৃষ্টি কাম্য নয়। বরং সেবার কাজে বাধা সৃষ্টি বা বিঘœতা পরিহার কল্পে একযোগে এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবী। বিভিন্ন সময়ে দেখা বৈরী ও প্রতিকুল আবহাওয়া বা পরিস্থিতিও আমাদের শিক্ষা দেয় যে কিভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে হয় এবং এর সুফল কত সুন্দর এমনকি শক্তিশালী ও সুদূরপ্রসারী। এইতো ফনি থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি (কিভাবে শুরু, শক্তি সঞ্চয়, সময় ক্ষেপন, পরিকল্পনা এবং আক্রমন)।
রাজনীতি একটি গুরুত্ব উপাদান এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীতে এই রাজনীতিই মানুষকে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটিয়ে উন্নতির ধারাবাহিক স্তরে স্তরে বিকাশ লাভ করিয়ে আজকের অবস্থানে দার করিয়েছে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দিশা দেখিয়েছে। তবে এই রাজনীতিতে পরস্পর ঘাতমূলক দ্বন্দ পরিলক্ষিত হয়। কখনো কখনো এই সংঘাত জাতিকে ধ্বংস করে দেয় আবার কখনো কখনো এই সংঘাত বা দ্বন্ধ পরিবারকে বিনাশ করে দেয় এমনকি আগামীর সকল সুফলকে বিফলে পরিণত করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এমনকি নিরাপত্তা বিঘিœত করে। এর স্বীকার ও ছোবল সম্পর্কে আমাদের সকলেরই কমবেশী অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা পৃথিবীর ইতিহাসেও এই কলঙ্কিত অধ্যায়ের রচনা দেখতে পাই। কিন্তু এর থেকে শিক্ষা নেয়া হয়েছে খুবই কম। তবে এর বহুমাত্রীক নেতিবাচক ব্যবহারই হয়েছে বেশী। রাজনীতিতে ইদানিংকার কৌশলী আচরণও কাম্য নয় বরং কৌশলী হয়ে ঐ ঘৃণ্যতম নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত থাকাই যুগের দাবি। কেন রাজনীতিতে দ্বন্ধ? মতের অমিল থাকতে পারে কিন্তু রাজনীতির নিতিতো একই। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যওতো এক… তাহলে কেন এই দ্বন্ধ। দ্বন্ধতো অনুসন্ধানে জানতে পারি রাজনীতির নয় বরং প্রকাশ্য ও প্রমানিত হয়েছে ব্যক্তি স্বার্থের। আর এই ব্যক্তি স্বার্থ্য দুরে রেখে সার্বজনীন কল্যানের স্বাথ্য রক্ষায় নিয়োজিত থাকলে ও রাখলে আর দ্বন্ধের কোন অবকাশ থাকে না। তাই রাজনীতিকে ব্যক্তি স্বার্থের উদ্ধের্¦ রাখতে হবে এবং গোষ্ঠিস্বার্থের লোভাতুর বেড়াজাল মুক্ত রাখতে হবে। তাহলে রাজনীতির দ্বন্ধ দূরীভ’ত হবে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়ে নতুন এক উচ্চতায় নিজেকে স্থান করে নিবে।
রাজনীতি নির্ভেজাল এবং এর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য/ আকাঙ্খা ঠিক রেখে একযোগে এগিয়ে যাওয়ার হাতিয়ারে পরিণত হতে দেয়ারও উর্বর সময় এখন। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির যোগসূত্র এক হওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যে কাজ করারও উপযুক্ত সময় এখন। দল মত নির্ভিশেষে রাজনীতিকে সেবার উন্নত এক মানদন্ডে দাঁড় করানো এখন সময়ের দাবি। তাই রাজনীতিতে হানাহানি ও ভেদাভেদ সৃষ্টি না করে বরং সেবার মনোভাব বাড়িয়ে অভিন্ন এক সেবার মনোভাবের ঐক্য সাধন করাই এখন যুক্তিযুক্ত। মুখ দেখাদেখি বন্ধ না করে বরং একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করাই মুখ্য বিষয়। আর এই বিষয়ে যে যত বেশী সেবকের ভ’মিকায় অবত্তির্ণ হতে পারবে ততবেশী সেবা করার দায়িত্ব পাবে। রাজনীতিবিদদের এখন রাজনীতিতে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায় বুঝে এগিয়ে যেতে হবে নতুবা নতুন দিগন্তে আর নতুন সূর্যের দেখা মিলবে না বরং অন্ধকারের আলোয় আধার ভুবনে হাতরিয়ে মরার উপলক্ষ্য সৃষ্টি হয়ে এবং কিয়ামতের ভিভিষিকাময় ভয়াবহতা দৃশ্যমান হবে। সকল ধর্মেরই একটি শেষ সিমা রয়েছে আর সেই সিমার রেশ টেনেই এখন বলা হচ্ছে শেষ সময় বা কিয়ামত সন্নিকটে। তাই কিয়ামতের পুর্বালামতের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই মন পরিবর্তন করে নতুন এক শান্তিময় বিশ্ব ঘড়ার চেষ্টায় নিয়োজিত হতে হবে। সমাজ সংসার এবং দেশ ও বিশ্বকে সাজাতে নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে সাজিয়ে বিলিয়ে দিয়ে আগামীর নতুন চীরস্থায়ী বেহেস্তি রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটাতে এবং দৃশ্যমান রাখতে হবে। আসুন সবাই মিলে এগিয়ে যায় আগামীর শুভ শান্তি ও আনন্দময় নিশ্চিত দিগন্তের আবাসের দিকে।
বিবেকের তাড়নায় মানুষ কতকিছুই না করে থাকে। কিন্তু বিবেক যদি অসাড় হয়ে যায় তাহলেওতো মানুষ মরিয়া হয়ে উঠে নেতিবাচকতার বিস্তার ঘটানোর জন্য। কিন্তু বিবেক জাগ্রত রাখার জন্য এবং বিবেকের ধ্বংশন থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য এখনই সময় উঠে পড়ে লাগার। আমরা বিবেকের ধ্বংসনে এখন নুহ্য হয়ে পড়েছি। তবে এই ধ্বংসন বেশীরভাগ সময়ই নেতিবাচকতার আবরণে। কিন্তু ইতিবাচক বিবেক এখনও জাগ্রত হয়নি। তবে মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে বিবেক আমাদেরকে চেতনা দেয় এবং নেতিবাচকতার সঙ্গে অন্তকলহে লিপ্ত হয়ে উত্তির্ণ হয়ে ভালকিছু উপহার দেয়। সেই উপহারই আমাদেরকে উৎসাহ যোগায় আগামীর প্রয়োজনে কিছু করার। আমরা এখন দেখছিও তাই । তবে তা খুব নগন্য বা সংখ্যায় কম। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বিবেক কেন জাগ্রত হয়না অথবা কেন শান্তি এবং আনন্দের দিকে অগ্রসর হতে উৎসাহি করে তোলে না অথবা কেন নেতিবাচকতার ¯্রােতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
সবই কিন্তু আমাদের মানবিক বিবেকের মনোচিন্তা; আর এই মনোচিন্তাকে জাগ্রত রেখে এগিয়ে যেতে হলে এখনই ঐক্যের শক্তিতে বিবেকের তাড়নাকে ইতিবাচকতায় রূপদিতে ঐক্যবন্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে আগামীর সুন্দর পৃথিবী এমনকি বসবাসপোযোগী বাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত হবে। বিবেক যদি মৃত হয় বা অসাড় হয় তাহলে কোনভাবেই লক্ষৈ পৌঁছা সম্ভব নয়। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা বুঝে এগিয়ে যাওয়র চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হওয়ার সময় এখন। তাই আমরা আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি বিশ্বকে নতুন করে সাজাতে পাপমুক্ত করতে এবং নিস্কলুষ করতে একযোগ্য ঐক্যের ইতিবাচক সূদৃঢ় ভিত্তির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। নীতি+ রাজনীতি+ বিবেক সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। তিনের ঐক্যকে মজবুত ভিত্তির উপর গেঁথে তুলে এগিয়ে যেতে হবে আগামীর তরে। দ্রুত শেষের দিকে এগিয়ে যাওয়া পৃথিবীর লয়ের সঙ্গে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হবে। আগামীর যোগসূত্র হউক এই তিনের। চারিদিকে যে অনায্য এবং নিতিবিহীন বিবেক বিবর্জিত কাজ হচ্ছে এবং তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাজনীতি; এই দৃষ্টিকটু খারাপ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে সকল নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচকতা সংযোজন করে এর ধারাবাহিক চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনের সমন্বয়ে এক এর যাত্রা শুরু করে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীর সুন্দর, শান্তি ও স্থিতিশীল নিশ্চিতকে উপভোগ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সকল প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
শুরু হউক না আমাদের অভিন্ন অগ্রযাত্রা এবং সার্বজনীন উপভোগের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আসছে রমজান হউক আমাদের চেতনার ধারক ও বাহক এবং এর তাৎপর্যকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়া হউক সৃষ্টিকর্তার অভিন্ন এক স্বর্গময় রাজ্যের বিরাজমান দৃশ্যময় আলোকবর্তীকার চমকপ্রদ ব্যবহারোপযোগী বাসস্থানের দিকে। এই হউক আমাদের আকাঙ্খার এবং সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের দৃশ্যমান রূপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.