আমরা যে ধর্মের অনুসারীই হই না কেন আমাদের প্রত্যেকের ঈমান, আমল এবং নৈতিকতা ধর্মীয় আবরণে আবদ্ধ। নৈতিকতা এবং ধর্ম উৎপ্রোতভাবে জড়িত। সিয়াম সাধনা যে শুধু ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের-ই তা কিন্তু নয় বরং সকল ধর্মের অনুসারীরাই কিন্তু সিয়াম সাধনা করে থাকেন। স্ব স্ব ধর্মের নিয়মানুযায়ী এই সিয়াম পালন করা হয়। যেমনিরূপে এখন পালন করা হচ্ছে ইসলাম ধর্মানুসারীরা। সিয়াম সাধনা মানে সংযম করা। কিন্তু সংযম কি হচ্ছে নাকি কথায় সংযম শব্দটিকে ব্যবহার করে বাহারী রকমের অর্থনৈতিক কামিয়াবী হাসিল হচ্ছে… তা এখন ভেবে দেখার বিষয়।
রমজান আসলে মুসলীম বিশ্ব তথা অমুসলীম বিশ্বেও এর রেস বা ছোয়া লক্ষ করা যায়। রমজানে বহিবিশ্বে রোজদারদের সম্মানে বিভিন্ন ছাড় এবং সম্মানের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এর উল্টোটা বিরাজমান। যেন প্রতিযোগীতার মাঠে রমজান একটা উপলক্ষ মাত্র। যে যার মত করে অর্থনৈতিক কামিয়াবী হাছিলে নিয়োজিত। রমজান তিনভাগে বিভক্ত এবং এই তিনভাগেই মানুষ আখেরাতের চেয়ে দুনিয়াবী কামীয়াবিতে বেশী ব্যতিব্যস্ত যা আমাদের নিরীক্ষায় প্রতিয়মান হচ্ছে। কি করে এই মানবকুলকে রমজানের মাহাত্¦ বুঝানো যাবে তা ভেবে কুলকিনারা পাওয়া দুরহ কঠিন।
এই রমজানে খাবার থেকে শুরু করে পোশাক এমনকি অফিস আদালতের কাজেও বাড়তি আয়ের পসরা সাজিয়েছে। কেউ কেউ আবার রমজান উপলক্ষে সকল ক্ষেত্রে রমজানের উত্তাপ দাহে পুড়ে খাটি হওয়ার পরিবর্তে বিনাশ হয়ে যাচ্ছে এমনকি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অনৈতিকতাকে ধর্মীয় আবরণে সুদ্ধিতা দান করে যাচ্ছে এবং রমজানের পবিত্রতা বা তাৎপর্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে। এই প্রশ্নবিদ্যতা দিনে দিনে গতি বাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এখন যদি লাগাম টেনে না ধরা হয় তাহলে আগামীর কল্যাণের স্থলে অকল্যানই বেশী দৃশ্যমান হবে। সকল ক্ষেত্রেই রমজানের পবিত্রতা এবং মাহত্ব বা তাৎপর্য বাস্তবায়নার্থে ধর্মীয় রীতি নীতি ও আমল আকিদা সঠিকভাবে দৃশ্যমান রাখতে হবে।
চোখের সংযম, কথার সংযম, চিন্তার সংযম, কর্মের সংযম এবং শারিরীক সংযমসহ সকল ক্ষেত্রে এই ধারা বিরাজমান রাখতে হবে। পারিবারিক সম্পর্কেও সংযমের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও সংযমের বিকল্প নেই। সংযম ধারাবাহিকভাবে অগ্রসরমান রেখে এগিতে যেতে হবে এবং এই এগিয়ে যাওয়াতেই আগামীর পথ প্রসস্থ এবং কুসুমাস্তির্ণ হবে। নতুন করে সংযমের হারানো ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করে চলমান সংযমের সঙ্গে সঙ্গদিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং আগামীর সংযম ইতিবাচকতায় পরিপূর্ণতা দেয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতের কল্যান নিহীত হবে।
মিডিয়ায় সংযম এখন ফরজে আইনে পরিণত করতে হবে। কারণ মিডিয়ার মাধ্যমেই সংযমের তাৎপর্য বিনষ্ট হয় এবং এই সংযমকে নিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্য দৃশ্যমান থাকে। তাই এই মিডিয়ায় সংযম বাধ্যতামূলক। মুল্যবোধ জাগ্রত রেখে আগামীর তরে সংযম থেকে শিক্ষা নিয়ে সংযমী আচরণ এবং কল্যানী বাতায়ন ধারাবাহিকভাবে চলামান রাখতে হবে। মানুষের জীবনে সংযমের আভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা, শোনা ও পড়ার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, নফস্রে সংযমের অভাবে বিভিন্ন অন্যায় ও ঘৃণ্য নেতিবাচক কর্মকান্ড চলমান আর এই অবক্ষয় হলো আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়। ঈমানের, আমলের এবং জ্ঞানের অবক্ষয়; ধর্মীয় চর্চার অবক্ষয়; অবাধ্যতার অবক্ষয়; মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন ঘ্রাস করে বসেছে আমাদের সামাজি, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রিয় কাঠামোয় এমনকি কর্মকান্ডে। সুতরাং এই অবক্ষয়কে কাটিয়ে উঠা এমনকি চমৎকারিত্বকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়ে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। অন্যের ঘারে দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার সময় এখন নয় বরং নিজের কাধে দোষ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন।
শিক্ষা ব্যাবস্থায় এমনকি শিক্ষকের অবক্ষয়ে এখন আমরা জর্জরিত। মতিভ্রমে ঘটে যাচ্ছে নানান প্রতিকুল পরিস্থিতি ও নেতিবাচক দৃষ্টিকটু ঘৃণীত দৃষ্টান্ত। অনৈতিকতার চরম পর্যায়ে এসে বিসর্জিত হচ্ছে আমাদের মা-বোন এমনকি সন্তানের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা; সর্বোপরি বিনষ্ট হচ্ছে সত্তিত্বের সতিত্ব ও ঝরে যাচ্ছে অকালে আমাদের আগামির ভবিষ্যত প্রজ¤œগুলো। যাদের ত্যাগ ও দৃষ্টান্ত আমাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে এবং আগামীর জন্য ঘৃণাভরে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকছে। এর থেকে বের হওয়ার পথ এখনই বের করে আগামী প্রজন্মকে সুন্দর ও শান্তিময় নিশ্চিন্ত সম্ভাবনাময় সমাজ রেখে যেতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল অবয়বে সবই প্রকাশিত এবং এই ডিজিটাল প্রকাশেই প্রতিয়মান হচ্ছে অবক্ষয়ের ভয়াবহতা।
ভেজাল একটি কলঙ্কময় অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। এই ভেজাল থেকে আমাদেরকে বের হতে হবে আর এই যাত্রা শুরু করতে হবে এখনই। রমজানের পবিত্রতায় আমরা নিজেরাও পবিত্র হই এবং নিজেদের মন থেকে সকল অপবিত্রতা দূর করি ন্যায়-নিতির প্রয়োগ আমাদের কর্মকান্ডে প্রকাশ করি। নিজের বিবেককে জাগ্রত করি যেন ভেজাল, অন্যায় এমনকি দুর্নীতি মনের ডিজিটাল আয়নায় প্রকাশিত হয় এবং সেই প্রকাশ থেকে শিক্ষা ও দিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় যাতে করে ঐসকল ন্যাক্কারজনক ঘৃণার কর্মকান্ডগুলোকে মন,হৃদয় থেকে সর্বান্তকরণে বিদায় জানাতে পারি। মানুষ হিসেবে অপারগতায় নয় বরং পারগতায় বিস্তৃতি লাভে এগিয়ে যায়।
আসুন আমরা নিজেকে ভালবাসি এবং নিজের প্রয়োজনে সব পাপ-পঙ্কিলতা ত্যাগ করি, নিজেকে সুখী ও সম্মৃদ্দিতে ভরপুর করি; শুধু দুনিয়ার তরে নয় বরং আখেরাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তও পাকাপোক্ত করি। সুখ ও সম্বৃদ্ধিতে ভরপুর করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় যেন বেহেস্তি রাজ্যের জয় যাত্রা এই পৃথিবী থেকেই শুরু হয় এবং আখেরাতের নিশ্চয়তাটুকু এখান থেকেই নিজের জীবদ্ধশাতেই নিশ্চিত করি এবং আগামীর জন্য নির্ভার থাকতে পারি। প্রথমত নিজেকে রক্ষা করতে পারলে অন্যকেও রক্ষা করা যায়। নিজে প্রতিজ্ঞা নিলে যে যতক্ষণ আমি অন্য আরেকজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকব ততক্ষণ আমি কোন অন্যায় কাজে জড়াব না এমনকি অন্যকেও প্রলুব্দ করবো না অথবা উভয়েই ঐ সম্পৃক্ত সময়টুকু নিরাপদে থেকে নিশ্চিন্ত থাকব। একে অন্যকে রক্ষা করার এর চেয়ে বড় বা মহৎ আর কোন কাজ হতে পারে না। যদি এই কাজটুকু করতে পারি তাহলে অবশ্যই সমাজ নতুন করে বিনির্মিত হবে এবং পরিবার ও সমাজ থেকে সর্বোপরি দেশ থেকে ভেজাল, পাপ-পঙ্কিলতা এমনকি নেতিবাচকতা; মোট কথা ধর্মিয় আবরণে- অন্যায়, পাপ, খোদা (সৃষ্টিকর্তা) বিরোধী কাজ বন্ধ হবে এবং এখান থেকেই বেহেস্তি যাত্রা শুরু হবে।
বিজ্ঞানের ছোয়ায় পৃথিবী এখন এক উড়ন্ত গতির রকেটকেও অতিক্রম করে চলেছে। এই গতিময়তায় যেন কোন বিচ্যুতি না ঘটে সেইদিকে দৃষ্টিপাতা করা আমাদের প্রত্যেকের উচিত। যদি এই গতিময়তাই ছন্দপতন ঘটে তাহলে আমাদের পতন অবিশম্ভাবী হয়ে উঠবে। তবে কিয়ামতের হাত থেকে কারোরই রেহাই মিলবে না। যদিও কিয়ামতের আগেও অনেক মিনি কেয়ামত আমাদের সামনে ঘটে থাকে। যার থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় বা কোন হাত থাকে না। তবে যদি সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা করেন তাহলে রেহাই দেন। যেমন গত ফনি থেকে আমাদেরকে রেহায় দিয়েছেন। আর এর শুকরিয়া আদায় এখন সকল ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে করা উচিত। ঐ ফনি থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোন কৃতিত্ব নেই বরং কৃতিত্ব রয়েছে খোদার কারণ তিনি তাঁর বান্দাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করেছেন এবং রক্ষা করেছেন তাঁর সৃষ্টিকে।
দেশের সরকার এবং সম্মিলিত বিরোধীদল যে পথে এগুচ্ছে তা আনন্দের এবং আশার আলো দেখার এক নতুন দিগন্তের। যদিও কিছু কিছু দল বিরোধীদলে যুক্ত হয়ে নিভু নিভু প্রদীপকে ঝালিয়ে রেখেছিলো; সেই ঝালিয়ে রাখাতেই আরো শক্তি যোগার করেছে সদ্য যোগ দেয়া বিএনপির সংসদেরা। এই ক্ষেত্রেও নৈতিকতারই জয় হয়েছে। দেরিতে হলেও তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ঐক্যের শক্তি ও শান্তির মিছিলে যোগ দিয়ে এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তবে এই ইতিহাস আরো সমৃদ্ধি ও প্রসংশার দাবিদার হতো যদিনা তারা এতোদিন অপেক্ষা না করতো। সকল সংসদ; সরকার এবং সম্মিলিত বিরোধী দল যদি একসঙ্গে শপথ নিয়ে রাষ্ট্রিয় কাজে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করতো তাহলে হয়ত বাংলাদেশ পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্র শিখাতে পারতো। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বিচ্যুতি ঘটেছিল আমাদের অপেক্ষার প্রহর গুনার কারণে। আজ পরিপূর্ণতা পাচ্ছে দেশের গণতন্ত্র এবং সরকার পাচ্ছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সিড়ি এবং জনগণ পাচ্ছে দিশা।
সকল ক্ষেত্রে আমার ও জনগণের প্রত্যাশা ও শুভ কামনা থাকবে যেন সকল কাজ ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে পারে; পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে পারে আগামীর করণীয় সম্পর্কে। আমাদের নৈতিকতা এবং ধর্মের যোগসূত্রকে একত্রে গেঁথে এগিয়ে যাওয়ার পথে যার যার অবস্তান থেকে শরীক হয়ে দেশ, সমাজ, পরিবার ও সরকার এর যোগসূত্র পাকাপোক্ত হউক। যেন উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় কোন ছেদ না ঘটে বরং এর গতি পরিধির আরো ব্যাপ্তি প্রসারিত হয়। এগিয়েছে সকল কিছুই কিন্তু এগুয়নি এখন নৈতিকতার, ধার্মীকতার বিজয় এবং ধর্মীয় আবরণে মুল্যবোধের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি। তাই এই রমজানে আমরা এগিয়ে নিয়ে যায় আমাদের মূল্যবোধের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি। নৈতিকতা ও ধর্মীয় মুল্যবোধের যোগসূত্র একযোগে কাজ করুক আমাদের প্রত্যেকের জীবনে, পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে। ক্ষমায় উদ্ভাসিত হউক আমাদের সকল মানুষের জীবন। এই হউক আমাদের প্রতিদিনের অঙ্গিকার এবং নৈতিকতার ধর্মীয় লেবাস।