প্রশান্তি ডেক্স। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন নুসরাতের প্রবাসী ভাই আরমান। পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন- ‘আসসালামুয়ালাইকুম, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি যে আমি নুসরাত জাহান রাফির হতভাগা মেজ ভাই আহমুদুল হাসান আরমান, কুয়েত প্রবাসী। আপনার কঠোরতম হস্তক্ষেপে ও অক্লান্ত পরিশ্রমে অল্প সময়ে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
শুধু গ্রেফতারের মধ্যে সমাপ্ত নয়। আমার প্রিয় বোনকে যেভাবে নৃশংসভাবে, যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। আমি মনে করি আর দীর্ঘায়িত না করে অতিদ্রুত ফাঁসি কার্যকর করা হোক। খুনিদের যেন দ্রুত ট্রাইব্যুনালের বিচারের আওতায় নিয়ে এনে আদালত রায় প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আকুল আবেদন যেন স্বল্পসময়ের ভেতর তা কার্যকর করা হয়।
আজ সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে আমার বোনের হৃদয় কাঁপানো এই নির্মম হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার দেখবে বলে…। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এক বুক চাপা কষ্ট নিয়ে আপনাদের প্রতি আকুল আবেদন রইল…!
প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, একমাত্র বোন নুসরাত জাহান রাফিকে হারিয়ে নিজেকে বড্ড একা মনে হচ্ছে, চোখের পানিগুলো যেন অঝরে ঝরতে থাকে। মায়ের কাছে যখন ফোন দিই মায়ের বুকফাটা কান্না যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে, কি বলে সান্তনা দিব মাকে…?
পরিশেষে এটাই বলতে চাই- একটা স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো অপরাধী অপরাধ করে পার না পায়, সেই বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সকল দেশবাসীর কাছে আমার বোনের জন্য দোয়া প্রার্থী। আমার বোনকে যেন আল্লাহতায়ালা জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করে এবং খুনিদের যেন দ্রুত ট্রাইব্যুনালের বিচারের আওতায় নিয়ে এসে আদালত যে রায় প্রদান করেন।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এক বুক চাপা কষ্ট নিয়ে আপনাদের প্রতি আকুল আবেদন রইল…!
আহমুদুল হাসান আরমান হতভাগা নুসরাতের মেজ ভাই।
উল্লেখ্য, নিহত নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।
এর পর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়।
গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাইয়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন।
১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ২২ আসামিকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।