ক্ষমা ও ভালবাসা

Vector-Smart-Object-1-300x127[1]ক্ষমা ও ভালবাসা একসূত্রে গাঁথা; যদিও দুটি সম্পূর্ণ আলাদা শব্দ এবং আলাদা বিষয়। কিন্তু সময়, বাস্তবতা এবং কালের পরিক্রমায় এমনকি যুগের চাহিদায় সর্বোপরী খোদা বা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এই দুটি শব্দকে আলাদা করা দূরুহ। দুটি মিলেই একটি শব্দ এবং এই শব্দের বা তথ্যের ও অর্থের মিলনে দুটি শব্দ যময উপাধি পাওয়ার যোগ্য দাবিদার। মাহে রমজান ক্ষমা (রহমত ও বরকত এবং মাগফিরাতের)। এই মাসেই দেখা যায় অতিতের গুনাহ এবং অপরাধ ক্ষমা করা হয় যেমনি সৃষ্টিকর্তা থেকে তেমনি তাঁর সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত রূপী মানবক’ল থেকে। আমরা ক্ষমা পেয়েছি এবং ক্ষমা করেছি যেন মানব সমাজ পরিবর্তন হতে পারে ক্ষমা এবং ভালবাসার বন্ধনটুকু একত্রে কাজে লাগিয়ে আগামির তরে ক্রমোন্নতি ঘটিয়ে নুতন এক নি:ষকলুষ সমাজ বিনির্মান করতে।
পৃথিবীতে আগত আমরা সবাই পাপি আর এই পাপের হাত থেকে রেহাই দেয়ার জন্যই বিভিন্ন নবী ও রাসুল আগত হয়েছিলেন এবং সৃষ্টিকর্তার চিরস্থায়ী বিধান আমাদের জন্য উন্মুক্ত। যারাই আমরা ঐ বিনামূল্যের বিধানে বিশ্বাস স্থাপন করব এবং মুখে স্বীকার করব তখন আমরা খোদার সান্নিধ্য লাভ করে চিরস্থীয় আবাসভ’মি জান্নাতে নিজের জায়গা করে নিব। আসুন আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের পাপ স্বিকার করি এবং অন্যের অপরাধ ক্ষমা করে নিজেরা আখেরাতের চিরস্থায়ী আবাসভ’মিতে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করি। খোদার বিচার হলো স্থায়ী এবং আসল ও সঠিক বিচার। আর সেই বিচারের আশায় আমরা আমাদের দ্বারা বিচারের ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল না হই অথবা কাউকে শাস্তি দিতে চেষ্টায় লিপ্ত না হই; বরং দুনিয়াবী বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে সংশোধনের ব্যবস্থা করি। যাতে করে আমরা নিজেরাও আখেরী বিচারের সম্মুক্ষীণ না হই। খোদা তায়ালা আমাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন সেই বিচারের সম্মুখ্খীন না হওয়ার; আর তা এখান থেকেই করে যেতে হবে নতুবা বিচারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় অবশিষ্ট থাকবে না। নাম, যশ, খ্যাতি, অর্থ, সম্পদ, সন্তান, সন্তুতি, আত্মীয়স্বজন কেউই কোন কাজে আসবে না। বরং জীবদ্দশার করা ভাল কাজগুলো এবং ক্ষমা ও ভালবাসার বহি:প্রকাশগুলোই আমাদেরকে শেষ বিচারের কঠিন ও মুখোমুখি অবস্থা থেকে রেহাই দিবে। তাই দাম্বিকতা, ক্ষমতা এবং অর্থের মোহকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমা এবং ভালবাসার মাধ্যমে নিজেদেরকে সাজিয়ে তুলি এবং ভবিষ্যতের নিশ্চিত শান্তি এবং আনন্দের স্থান পাকাপোক্ত করি।
বিচারের ক্ষেত্রে বিচার প্রার্থী অথবা অপরাধি উপয়েরই ক্ষমা পাওয়া যুক্তিযুক্ত। কারণ এই বিচারই শেষ নয় বরং আরো বিচার রয়েছে এবং সেই বিচারই স্থায়ী এবং পাকাপোক্ত বিচার। কারণ সকল বিচারকদের একজন বিচারক রয়েছেন এবং তিনিই সকল ন্যায় বিচার করে যার যার প্রাপ্য তাকে বুঝিয়ে দিবেন। আর ঐ বিচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য: ক্ষমতা ব্যবহার করার, সম্পদ, অর্থ, এমনকি সুপারিশের ব্যবহার সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়বে। কারণ ঐদিন স্বয়ং আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু তায়ালা বা সৃষ্টিকর্তা নিজেই বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন। তাঁর কাছে পৃথিবীর সকল মানুষ সমান, নেই কোন উচু নিচু ভেদাভেদ বরং তিনি নির্যাতিত, নিপিড়িত এবং অসহায়দের পাশে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়াবেন। ক্ষমা চেয়েও যারা ক্ষমা পাচ্ছেন না বরং ক্ষমার জন্য হা হা কার করে যাচ্ছেন সেই মানুষগুলোর দিকে তাকান এবং নিজেদের ভাগ্য সুপ্রসুন্ন করুন। ভালবাসার জন্য কাতর মানুষগুলোর দিকে তাকান এবং ভালবাসা প্রদর্শন করুন যেন নিজেদের ভাগ্যে ভালবাসা সুপ্রসন্ন হয়। ক্ষমাহীন ও ভালবাসাহীন ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসুন মোট কথা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসুন এবং ক্ষমা ও ভালবাসায় পূর্ণ সমাজ, পরিবার এবং দেশ গড়ে তুলুন। ভয়ের রাজ্য থেকে বের হয়ে এসে নির্ভয়ের রাজ্যে পদচারনা করুন।
ক্ষমা এবং ভালবাসায় পূর্ণ হয়েই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শত বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে এই দেশে ফিরে এসেছিলেন এই মাসের ১৭ তারিখ। সেইদিন থেকে তিনি তার ভালবাসা প্রকাশ করে গেছেন এবং ক্ষমাশীল দৃষ্টি অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু সেই ক্ষমা এবং ভালবাসাকে দুর্বলতা ভেবে একটি সমাজ ও গোষ্টি চালিয়েছেন একের পর এক নারকিয় যঙ্গ। কিন্তু সেই যঙ্গের বলি এখন নিজেরাই। তাই যদি আমরা কেউ ক্ষমা এবং ভালবাসা পেয়ে থাকি এবং পেতে আশা করি তাই যেন সেই ক্ষমা এবং ভালবাসা পেয়ে সম্পূর্ণরূপে নিজেদেরকে পরিবর্তন করি। কোনভাবেই ঐ ক্ষমা এবং ভালবাসাকে দুর্বলতা না ভাবি এমনকি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে না উঠি। ক্ষমাশীলদের আল্লাহ পছন্দ করেন এবং ক্ষমাকারীদের আল্লাহও ক্ষমা করেন। তাই দুইয়ের সমন্বয়ে যেন আমরা অতিত ভুলে সামনে এগিয়ে যাই নতুন এক নিষ্কলুষ শান্তি ও স্থিতিশীল সম্ভাবনার দিকে।
ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে আমরা আমাদের সমাজ বিনির্মানে এগিয়ে যায়। সোসাল মিডিয়া এবং প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে প্রতিদিন যে সকল নেতিবাচক সংবাদ দৃষ্টিগোচর হয় তা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ এই ঘটনাগুলো থেকে আমরা কেউই কোন শিক্ষা নিইনি। অতিতেও এই ঘটনা ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে। যদি আমরা অতীতের ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিতাম এবং দিতাম তাহলে আজ আর তা শুনতে ও দেখতে হতো না। ভালবাসা এখন মৃত আর ক্ষমা এখন অবাঞ্চিত। তাই মৃত ভালবাসাকে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং সেই ভালবাসা দিয়েই মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে; গড়ে তোলতে হবে নতুন সমাজ। ভালবাসাবিহীন সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচকতার কোন গুরুত্ব বহন করে না বরং নেতিবাচকতার ঘৃণ্যতম বহি:প্রকাশই দৃশ্যমান থাকে। তবে ঐ ভালবাসার সঙ্গে ক্ষমার একটি সমন্বয় অতিব জরুরী। এই ভালবাসা এবং ক্ষমার যোগবন্ধন পরিবার এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল কাজ-কর্মে দৃশ্যমান চর্চায় পর্যবসিত করতে হবে; নতুবা নতুন আগামীর অমংগলের আলীংগন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। আসুন আমরা ক্ষমা এবং ভালবাসাকে একত্রে সমন্বয় সাধন করে আগামীর লক্ষ্যে চর্চায় অব্যাহত রাখি। তাহলেই আমাদের আগামীর সম্ভাবনা আরো উজ্জল হবে এবং নতুন সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটে এই দেশ হবে শান্তি এবং নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার এক নবদিগন্ত।
ক্ষমা এবং ভালবাসার চর্চায় মাধ্যমে একটি দেশকে যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার উদাহরণ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সকল অপবাধ, অপরাধ, অকল্যাণ এবং অসহযোগীতাকে ভ’লে বা পাশ কাটিয়ে নিজের ইতিবাচক গুণের চর্চায় রত থেকে আজ আমাদেরকে এক অতি উচ্ছ অবস্থানে দ্বার করিয়েছেন। আর আমরা সেই অবস্থানে থাকতে অনেকেই অপারগতা প্রকাশ করছি। কারণ আমরা নিজেদেরকে এখনও প্রস্তুত করতে পারছি না। বরং নেতিবাচক চর্চায়ই ডুবিয়ে রাখতে চাচ্ছি। তারপরও বলব ক্ষমা এবং ভালবাসার প্রায়োগিক চর্চায় পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের সমাজ এবং পারিবারিক ব্যবস্থা; যার ছাপ পড়ছে আমাদের রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থায়ও। আসুন আমরা এগিয়ে যাই আমাদের সকল ইতিবাচক গুনের সমন্বয়ে।
এই রমজান মাসে আমরা আমাদের সকল অপকর্মকে অপসারণ করি, আন্যায় আবদারকে বিতারিত করি, লোভ-লালসাকে ত্যাগ করি, ক্ষোভ ও ঘৃণাকে পরিত্যাগ করি, হিংসা-নিন্দাকে বর্জন করি, অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকি; সর্বোপরি প্রকারান্তরে অন্যের উপকারের নেশায় মত্ত থাকি, নিজেকে শুদ্ধ করার নিমিত্তে নিয়োজিত থাকি, সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভে চেষ্টারত থাকি, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, ভালবাসা এবং ক্ষমায় পরিপূর্ণ হই। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আকাঙ্খা এবং আমাদের প্রতি অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যায়। যেহেতু মাসটি রমজান তাই রমজান সম্পর্কে কিছু বলাও প্রাসঙ্গিক। রমজান নামটা আরবী মূল শব্দ রামিদা বা অর- রামাদ থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ প্রচন্ড উত্তাপ ও শুস্কতা, বিশেষভাবে জমি বা ভ’মির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেই একই মূল শব্দ থেকে এসেছে রামাদা, যার অর্থ হল, সূর্যকিরণে উত্তপ্ত বালু এবং সেই বিখ্যাত প্রবাদ বাক্য “কাল মুস্তাজীর মীনার রামাদা বিন্নার” অর্থাৎ মন্দ অবস্থা থেকে আরও মন্দ অবস্থায় পড়া (কড়াই থেকে লাফিয়ে জলন্ত আগুনে পড়া)। কিছু কিছু লোক বলে থাকেন যে এরকম নামকরণ করার কারণ হল এই যে, সূর্য যেমন ভ’মিকে দগ্ধ করে তেমনি রমজান সৎকর্ম দিয়ে পাপকে দগ্ধ করে দেয়। রমজান সব বয়সী ইসলাম ধর্মানূসারীদের মধ্যে আবেগ, উত্তেজনা এবং ধর্মীয় উগ্যোগ বয়ে নিয়ে আসে। রোজা হলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। এই রমজান মাসকে ত্যাগ ও উদারতার মাসও বলা হয়।
এই রোজা সম্পর্কে পূর্ববর্তী নবীদের কিতাবেও লিখা ছিল:- মাবুদ বলেছেন, জোরে চিৎকার কর, সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার কর; শিংগার আওয়াজের মত জোরে আওয়াজ কর। আমার বান্দাদের কাছে তাদের অন্যায়ের কথা আর ইয়াকুবের বংশের কাছে তাদের গুনাহের কথা জানাও। তাদের দেখলে মনে হয় দিনের পর দিন যেন তারা আমার ইচ্ছামত চলছে আর আমার পথ জানার জন্য তাদের আগ্রহ আছে; তারা যেন এমন একটি জাতি যারা ঠিক কাজ করে আর তাদের আল্লাহর হুকুম ত্যাগ করে না; তারা আমার কাছে ন্যায় বিচার সম্বন্ধে জানতে চায় আর যেন আল্লাহর কাছে আসতে আগ্রহী। তারা বলে, আমরা রোজা রেখেছি আর তুমি তা চেয়ে দেখলে না কেন? আমরা কষ্ট স্বীকার করেছিলাম তুমি তা লক্ষা করলে না কেন? কিন্তু দেখ, তোমাদের রোজার দিনে তোমরাতো নিজেদের সন্তষ্ট করে থাক, আর তোমাদের সব কর্মচারীদের উপর জুলুম করে থাক। রোজা রাখবার ফলে তোমরা ঝগড়া আর বিবাদ করে থাক এবং ঘুষি মেরে একে অন্যকে আঘাত করে থাক। তোমরা এইভাবে রোজা রাখলে আশা করতে পারবে না যে, আমি তোমাদের কথা শুনব। আমি কি এইরকম রোজা চেয়েছি? তোমাদের রোজাতো কেবল নিজেদের কষ্ট দেওয়া, তা কেবল নল-খাগড়ার মত মাথা নোয়ানো আর ছালার চটের ও ছাইয়ের উপর শুয়ে থাকা। এটাকে কি তোমরা রোজা আর মাবুদের রহমত দেখাবার দিন বল?
রোজা সম্পর্কে আল্লাহ এও বলেছেন:- “তোমরা যখন রোজা রাখ তখন ভন্ডদের মত মুখ কালো করে রেখোনা। তারা যে রোজা রেখেছে তা লোকদের দেখাবার জন্য তারা মাথায় ও মুখে ছায় মেখে বেড়ায়। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। কিন্তু তুমি যখন রোজা রাখ তখন মাথায় তেল দিয়ো ও মুখ ধুয়ো, যেন অন্যেরা জানতে না পারে যে, তুমি রোজা রাখছ। তাহলে তোমার মালিক, যিনি দেখা না গেলেও উপস্থিত আছেন, কেবল তিনিই তা দেখতে পাবেন, তোমার আল্লাহ, যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তিনিই তোমাকে পুরস্কার দেবন।”
কিতাবে এও উল্লেখ আছে:- আসলে আমি এই রকম রোজা চাই: তোমরা অবিচারের শিকল আর জোয়ালের দড়ি খুলে দাও, অত্যাচারিতদের মুক্তি দাও আর প্রত্যেকটি জোয়াল ভেংগে ফেল, খিদে পাওয়া লোকদের তোমাদের খাবার ভাগ করে দাও, ঘুরে বেড়ানো গরীব লোককে নিজের ঘরে আশ্রয় দাও, উলংগকে দেখলে তাকে কাপড় পরাও, আর নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। এই সব কাজ করাই হলো আসল রোজা। আরো অনেক। আশা করি এই রোজার মাসে আমরা সবাই বিচার ও বিবেচনাবোধ এবং সৃষ্টিকর্তার দেয়া জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে রোজার তাৎপর্যকে নিজেদের জিবনে চর্চায় পরিণত করব। ক্ষমা এবং ভালবাসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সূদূর আগামীর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ক্ষমা এবং ভালবাসায় নিমূল করি সকল অমংগল, অনিশ্চয়তা এবং অকল্যাণকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.