স্পোর্টস ডেক্স॥ ২০১৭ এর সেপ্টেম্বরে তে যখন ক্যারিবীয়দের জার্সি গায়ে তার ফিরে আসার মঞ্চ স্থাপিত হয়, ঠিক তখনই শুরু হলো ২০১৯ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। তারপর থেকে এ পর্যন্ত, জ্যামাইকান এ দৈত্য পার করছেন মধুময় বসন্ত।হারিয়ে যায়নি তার সুবিখ্যাত ‘স্ট্যান্ড স্টিল অ্যান্ড হিট’ ব্যাপারটা।
চিরচেনা সেই ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল কখনো ক্যারিবিয়ান সাগরের সীমানা পেরিয়ে, কখনো আটলান্টিক ডিঙ্গিয়ে নতুবা উপমহাদেশীয় জলবায়ুকে জয় করে- সর্বক্ষেত্রে দাপট দেখাচ্ছেন আপন মহিমায়। জীবনের ৪০তম বসন্তে এসেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজেই দুটি করে শতক-অর্ধশতকে ৪ ম্যাচে ৪২৪ রান করে হয়েছেন সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
স্মৃতির ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে এক লাফে চলে যেতে হবে ২০ বছর পূর্বে, ১৯৯৯ সালে। সে বছরের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে অভিষেক হয়েছিল এই জ্যামাইকানের। তারপর থেকে এ পর্যন্ত একে একে খেলে ফেলেছেন ৪ টি বিশ্বকাপ।
এবার ট্রেন্ট ব্রিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামলেই তার মুকুটে যুক্ত হবে আরেকটি রেকর্ডের পালক। ক্যারিবীয় কিংবদন্তী ব্রায়ান লারা এবং শিবনারায়ণ চন্দরপলের পর তৃতীয় কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে ৫টি বিশ্বকাপ খেলার অনন্য কীর্তি গড়বেন গেইল।
এমন এক কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে গেইল যেন বাস্তবতাকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলবেন এমনটা স্বপ্নেও ভাবেননি।
গেইল বলেন, ‘সত্যি বলতে কিছু বছর আগেও আমার মনে হয়নি আমি এই বিশ্বকাপ খেলব। অনেক খেলেছি,অনেক পেয়েছি। কিন্তু সমর্থকদের আবদার আর ফেলতে পারিনি। সমর্থকরাই আমাকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে এই জার্সিতে। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, আমি আশা করি সমর্থকদের ভাল কিছু ম্যাচ উপহার দিতে পারব এবং তাতে বিশ্বকাপ জেতার ভাল সম্ভাবনাও থাকবে।’
দীর্ঘ ২০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করা চাট্টিখানি কথা নয়। এর মাঝে বোর্ডের সাথে দ্বন্দে প্রায় আড়াই বছর (২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০১৭ সেপ্টেম্বর) ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে, খেলা হয়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
‘আমি কখনোই অতশত ভাবিনি। তবে সময় খুব দ্রুত বয়ে যায়। আমি কখনোই ভাবিনি এতোগুলো বিশ্বকাপ খেলব। কিন্তু এমনটাই হচ্ছে এবং এটাই প্রমাণিত হয় যে আমার ক্যারিয়ার কতোটা ধারাবাহিক। এতে আপনি অনেক প্রশংসা পাবেন, সম্মান পাবেন। গত কয়েক বছর আমার পরিশ্রম আমাকে সফলতা দেখিয়েছে। এখন সমর্থকরা আমাকে মাঠে দেখতে চায় এবং আমিও আমার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করব’ – বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলেন এই ক্যারিবিয়ান।
বিগত কয়েক বছর বোর্ডের সঙ্গে প্লেয়ারদের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, বিগত কয়েক মাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে সে ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী। নতুন দল সঠিক পথেই এগুচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। গেইল বলেন, ‘ক্রিকেট সবসময়ই ক্যারিবীয়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আশা করি নতুন দল ক্রিকেটকে তার পূর্বের জায়গায়ই ফিরিয়ে নিবে।’
মূলত ক্যারিবীয়দের স্বর্ণালী সময়ে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান দিয়েছেন এই কিংবদন্তী! আর নতুন এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম নিয়ে এটি অসম্ভব কিছু নয়। সেজন্য বোর্ডের সংস্কারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন গেইল। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও বোর্ডের কর্মকর্তা এবং প্লেয়ারদের সহযোগিতাই পারে ক্যারিবিয়দের সোনালী যুগ ফিরিয়ে দিতে, এমনটাই মনে করেন এ মারকুটে ক্রিকেটার।