ভজন শংকর আচার্য্য,কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় পাহাড় ধ্বসে মাটি চাপায় কেফায়েত উল্লাহ (১৩) নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে পাহাড় কাটায় নিয়োজিত তিন শ্রমিক। নিহত কেফায়েত উল্লাহ উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের কালসার গ্রামের মো.জালাল মিয়ার ছেলে। সে জয়নগর লিয়াকত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়তো।
জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত গোপিনাথপুর ইউনিয়নের বিষ্ণাউড়ি গ্রামে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে পাহার কেটে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছিলো সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনের ভাই যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন। ফলে পাহাড়ের মধ্যে গভির গর্তের সৃষ্টি হয়। গত শনিবার (১৮মে)উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের বিষ্ণাউড়ি গ্রামে পাহাড়ের গর্তের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় পাহাড় ধ্বসে মাটি চাপায় মারা যায় কেফায়েত উল্লাহ। এ সময় আরো ৩ শ্রমিক মাটি চাপায় পড়ে। স্থানীয় জনগন গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়। অপরদিকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক কেফায়েত উল্লাকে মৃত ঘোষনা করেন। পুলিশ নিহতের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত করে নিহত শিশুর পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। নিহত কেফায়েত উল্লাহ তার খালার বাড়ি বিষ্ণাউড়ি গ্রামে থেকে জয়নগর লিয়াকত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়তো।
এঘটনার খবর পেয়ে কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার মো.জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান; যুবলীগ নেতা জাকিরের বিরুদ্ধে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার বিষয়ে একটি গোপিনাথপুর ইউনিয়ন তহশিলাদার থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে হয়তো এ দুর্ঘটনাটি ঘটতোনা।
কসবা থানা উপ-পরিদর্শক রুবেল মীর সাংবাদিকদের জানান; তহশিলদার হেলাল উদ্দিন ত্রুটিপূর্ন অভিযোগ দেয়ায় তাকে সাতবার ফোন করেও থানায় আনতে পারিনি। ফলে অভিযোগটির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ঘটনায় নিহত কেফায়েত উল্লাহ’র বাবা জালাল মিয়া ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে কসবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-৩২, তারিখ:১৮-০৫-১৯) পুলিশ ইতোমধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো বিষ্ণাউড়ি গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের পুত্র মো.হুমায়ুন কবির ও মৃত আবুল হাসেমের ছেলে ইকবাল হোসেন। এদিকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাটি কাটায় ব্যবহৃত একটি ড্রেজার ও পাইপ ঘটনাস্থলে পুড়িয়ে ফেলেছেন। অন্য একটি ড্রেজার ও পাইপ আলামত হিসেবে জব্দ করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় শুধু গোপিনাথপুর ইউনিয়নেই প্রায় শতাধিক অবৈধ ড্রেজার চালু করে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ সকল ড্রেজারের মালিকগন অত্যন্ত ক্ষমতাধর এবং রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ফলে প্রশাসন তাদের কাছে অসহায়।
কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ আবদুল মালেক সাংবাদিকদের সাথে বলেন; সকল মহলের সদিচ্ছা থাকলে এ সকল অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন বন্ধ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।