প্রশান্তি ডেক্স॥ নড়াইলজুড়ে এখন রোহিঙ্গা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গুজব উঠেছে রোহিঙ্গারা মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শিশুদের হত্যা করে মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা আতঙ্কে গ্রামের শিশুরা এখন বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
অনেক দরিদ্র পরিবারের লোকজন এখন রাতে বারান্দায় রাত যাপন বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো কোনো গ্রামের নারীরা ভয়ে রাতে রমজান মাসে পবিত্র রোজা রাখবার জন্য সেহরির রান্নাও বন্ধ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ এবং অনুষ্ঠানের মাইকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। গ্রামে, হাট-বাজারে নতুন কোনো মানুষ দেখলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্দেহ হলে বা ঠিকমতো জবাব দিতে না পারলে তাদের মারধর করে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়া হচ্ছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ মে সদরের মুলিয়া বাজার থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে জসিম নামে এক যুবককে এলাকাবাসী গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে সদর থানা পুলিশের ওসি মো. ইলিয়াছ হোসেন জানান, সে রহিঙ্গা নয়, মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। রোববার (১৯মে) রাত ১০টার দিকে কালিয়া-নড়াইল সড়কে আখলিয়া বাজার থেকে ষাটোর্ধ এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে এলাকাবাসী ধরে মারধর করে স্থানীয় একটি ক্লাবে আটকে রাখে। পরদিন তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
চাঁচুড়ী ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস মুন্সী বলেন, গত শুক্রবার (১৭মে) বেলা ১১টায় স্থানীয় আমবাড়ি মসজিদ থেকে ঘোষণা করা হয়, রোহিঙ্গারা শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই যার যার ছেলেমেয়েদের সাবধান রাখতে বলা হয়।
কালিয়ার মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজের আয়া পুরুলিয়া গ্রামের পলি বেগম বলেন, তিনি রোহিঙ্গাদের ভয়ে রাতের সেহেরির রান্না পর্যন্ত করছেন না।
সদরের টাবরা গ্রামের বাসিন্দা একটি কলেজের লাইব্রেরিয়ান নিউটন মল্লিক বলেন, গ্রামে গুজব ছড়ানো হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে ৮০টি মানুষের মাথার প্রয়োজন। এ কাজে রোহিঙ্গাদের দয়িত্ব দেয়ায় তারা বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে সুযোগ বুঝে মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
শহরের ভাদুলিডাঙ্গা এলাকার এক কলেজ শিক্ষক মায়া রানী অধিকারী জানান, সদরের মুলিয়া ইউনিয়নের বনগ্রামে গত ১৬ মে এক মেলায় মাইকে ঘোষণা করা হয়, রোহিঙ্গারা ছেলে-মেয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আপনারা সন্তানদের সাবধানে রাখবেন। একা একা কোথাও যেতে দেবেন না।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, রোহিঙ্গা আতঙ্ক গুজব। তিনি এ নিয়ে খামোখা কান না দিতে জনগণকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন মসজিদের ইমামের মাধ্যমে জুম্মা নামাজের পূর্বে সবাইকে সচেতন করা যায় কিনা পরামর্শ করবো।