প্রবাসীরাই রেমিট্যান্স আর্নার -“তাদের নিয়ে কৌতুক নয়, স্যালুট দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন”

প্রশান্তি ডেক্স॥ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার, আপনি দেশের আলোকিত মানুষের একজন বলেই সর্বজন গৃহীত। বড্ড মজা করে কথা বলেন আপনি। আপনার মুখ থেকে নিসৃত বাক্যে আপনার সামনের অডিয়েন্স অনেক মজা পায়, হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ে একে অন্যের ঘাড়ে। banladeshpress-আবদুল্লাহ-আবু-সায়ীদ-স্যার-5d010365c3b26
বিশ্বাস করুন ঐ একি নিসৃত বাক্য আমি বললে হাসিতো দূরে থাক, সাথে সাথেই পচা ডিম ছুটে আসবে আমার দিকে। বুঝতে পারছেন কি স্যার, পার্থক্য কোথায়?
স্যার আপনার পাশে, আপনার সামনে যারা বসে থাকে তাদের ক্লাস যাইহোক তারা যে বিত্তশালী এতে সন্দেহ নেই। তারমধ্যে আপনার তৈরি ছাত্র সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তারা এই সমাজের, এই দেশের কোন না কোন বিত্ত নিয়ন্ত্রনে বসে আছে।
স্যার, ফেজবুকে সিজান মাহমুদ নামে একজন ভদ্রলোক লিখেছেন মনের মধ্যে অনেক কষ্ট নিয়ে -“দেশের খেলাপী ঋণের পরিমান এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যারা ঋণ দেয় এবং নেয় তাদের মধ্যে হয়তো আপনার ছাত্রও আছে, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার!
প্রবাসী শিক্ষিত, প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না ক’রে এগুলো নিয়ে কথা বলুন স্যার! আপনার প্লেনের খরচ কে দেয় জানি না, কিন্তু এইসব শ্রমিকদের টাকা নানান পকেট, ব্যাংকে ঘুরে খেলাপীদের পকেটে যায়। তাদের দান খয়রাত আপনাদের কর্মকান্ডেও সাহায্য করে। দেশজুড়ে যে তাবেদার লেখক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ যারা আপনার চোখে অভিজাত, তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করলে দেশে পরিবর্তন আসবে। আর না হয় বিশ্রাম নিন।
ভাল থাকুন স্যার, যা দিয়েছেন তা অনেক। আর না দিলেও যা দিয়েছেন তা নষ্ঠ করবেন না, স্যার!!
স্যার, বুঝতে পারছেন তার কষ্ট কোথায়? এই কষ্ট শুধু তার নয়, আমাদের সকলের। কারণ আপনি এমন একটি বিষয় নিয়ে কৌতুক করেছেন দেশের বিত্তশালীদের সামনে, যে বিষয় তাদেরই বিত্তশালী করেছে।
স্যার, একবার মনে করেনতো সেই দিনের কথা, যেদিন জাতিরজনক দেশে ফিরে বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন সেদিন তিনি ১ টাকা রেমিট্যান্স এর জন্য চিৎকার করে বেড়িয়েছেন, হায় হায় করেছেন। তাৎক্ষনিক কয়েকটি দেশ সাহায্যে এগিয়ে না আসলে দূর্ভিক্ষের দৈর্ঘ আরো কতো লম্বা হতো সেটা আল্লাই জানেন। সেদিনের সেই সাহায্য এবং পরবর্তী সময়ে যে গরু ছাগলের দল, অশিক্ষিতের দল (আপনাদের কৌতুকের বিশেষত্ব অনুসারে) যদি বিদেশে না যেতো, ঘাম রক্ত আর বকেয়া রাখা ঘুমের বিনিময়ে অর্জিত রেমিট্যান্স এ দেশে না পাঠাতো তাহলে আজ যাদের সামনে বসে সেই কারিগরদের অশিক্ষিত বলে, বাংলাদেশে কখন পৌছাবে সেই আবেগ নিয়ে, তাদের পিরিহিত কোর্ট টাই নিয়ে কৌতুক করলেন তাদের কি অবস্থা হতো বলতে পারেন?
আপনার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র আদেরও কি ডানা মিলতো স্যার?
স্যার, যে প্রতিষ্ঠানে আপনি শিক্ষকতা করেছেন, যাদের তৈরি করেছেন, যারা আপনার কথায় হো হো করে হেসেছে তারা বা তাদের শিক্ষা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার যে ভর্তুকি দেয় সেই ভর্তুকি কার বা কাদের রেমিট্যান্স এ তৈরি স্যার?
না আপনি তাদের অপমান করেন নি, তবে তাদের দেয়া ফর্ম পূরণে আপনি তাদের প্রতি এই দেশের প্রতি যথেষ্ট দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছেন, তবে ব্যাপারটি কেমন জানেন স্যার – যাকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালেন, আবার খোটা(গ্রাম্য ভাষা) দিয়ে খাবার পেট থেকে বের করেও নিলেন।
মজার ব্যাপার হলো আপনার সামনে বসে তারাই হো হো করে হাসলেন যারা প্রায় প্রত্যেকে আজ এই দেশে সকল প্রকার দুর্নীতির সাথে যুক্ত না হয় সহায়ক।
প্রমাণ চান? দেখুন তাকিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে- চিৎকার করে মরছে, “দুর্নীতি থামাও”।
স্যার, কই আপনাকে তো বর্তমান প্রচলিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে, খাদ্যে ভেজাল নিয়ে, চারদিকে ধর্ষন নিয়ে, চাঁদা বাজিনিয়ে, প্রতিটি দপ্তরে সিন্ডিকেট নিয়ে কথা বলতে বা কৌতুক করতে দেখিনি।
কেন স্যার? আপনিতো এই দেশের আলোকিত মানুষ, আপনার একটা কথা আমাদের হাজার হাজার আর্টিকেল থেকেও অনেক ভারি। তবে কেন বলেন না? কেন সেই কৌতুক দিয়ে সমাজকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করেন না? আপনারতো ভয় থাকার কথা নয়!
স্যার, আমাদের দেশের সন্তানদের বিদেশে বসে মরতে হয়, গরুর মতো খাটতে হয়, রাতে ছাগলের পালের মতো ঘুমাতে হয়, হাজার ইচ্ছায়ও পারেনা নিজ সংসারের মুখ দেখতে। বিদেশি শাষনে শোষিত হতে হয়, কই আপনিতো কোনদিন তাদের একটু সুবিধার জন্য আমাদের দূতাবাসের আরো আন্তরিক হবার জন্য কৌতুক করেন নি।
ওরা যখন সব কিছু উজাড় করে দিয়ে মরছে, আপনি আর আপনার সামনের বিত্তশালী সমাজ তাদের রেমিট্যান্স এ আধুনিক আরাম আয়েসে ঘুমের জগতে চলে গেছে হাতে মদের বোতল নিয়ে। প্রায় শতভাগ বিত্তের ঘর আজ এক একটি বার তৈরি হয়েছে। যারা মদের নেশায় জানেও না, তারা বিশেষ মুহুর্তে স্ত্রীর সাথে আছে নাকি পরনারীর নিকটে আছে। অর্থাৎ স্ত্রী আর অন্য নারীর পার্থক্য করার মতো কোন জ্ঞান তার থাকে না।
আর তাদের সামনে নিয়ে আপনি আঘাত করছেন তাদের, যারা এই দেশটাকে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে নিয়ে যাচ্ছে? আপনি তাদের শিক্ষার যোগ্যতা নিয়ে হাসির বস্তু তৈরি করে অডিটোরিয়ামে নিজেকে পপুলার বানাচ্ছেন?
এরকি খুব দরকার ছিলো স্যার? আপনিতো এমনিতেই দেশের আলোকিত মানুষ, আর কতো আলো চাই স্যার? জানেনতো স্যার, আলো জ্বলে বৈদ্যুতিক নির্দিষ্ট হার্টসে, আপনি যদি হার্টস বাড়িয়ে দেন তাহলে আলোতো জ্বলবেই না বরং আলো নিভেগিয়ে অন্ধকার করে ফেলবে সব। এমনো হতে পারে বাতিটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
স্যার, আমরা অতি সাধারণ। আমাদের ভাষাও সাধারণ। তবে এটুকু বুঝি কোনটা কৌতুক আর কোনটা কটাক্ষ করা।
মনে হয় স্যার আপনি বুঝবেন কি লিখেছি। কি তার মর্মকথা।।

Leave a Reply

Your email address will not be published.