ব্যাংক থেকে বড় ঋণের পরিকল্পনা

প্রশান্তি ডেক্স॥ আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশই থাকছে। আকারে অতীতের চেয়ে সবচেয়ে বড় বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবারও তারল্য সংকটে চলা ব্যাংক খাত থেকে ৪৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে।bank theke boro
গত বছর বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার ঘোষণা ছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে সেখান থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
তবে ঘাটতি পূরণে সরকার সবচেয়ে বেশি ভরসা করবে বিদেশি ঋণ ও সহায়তার ওপর। মোট ৭১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে দুই থেকে আট শতাংশ সুদে ৭১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে দুই থেকে ১১ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছে।’
আজ প্রথমবারের মতো বাজেট দিতে যাচ্ছেন কামাল। গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ের পর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া এই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের টানা দুই মেয়াদে ১০টি বাজেট দেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিতের তুলনায় মুস্তফা কামাল কী নতুনত্ব নিয়ে আসেন, এ নিয়ে আলোচনা আছে।
মুহিতের মতোই কামালও বাজেটের আকার বাড়াচ্ছেন। আর তার অনেক কিছুই আগেভাগে এসেছে গণমাধ্যমে। জানা যাচ্ছে, উচ্চসুদের সঞ্চয়পত্রের প্রতি নির্ভরতা কমাতে চাইছেন কামাল। আর এ কারণেই ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা বাড়বে।
তবে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ঋণ বাড়ালে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে টান পড়বে কি না এ নিয়েও আশে শঙ্কা। আর তাই এই বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এত বড় ঘাটতি ঠিক না। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত ঝুঁকিতে পড়বে। আর এই ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে বড় ঋণ নিলে সেটা আরও অগ্রহণযোগ্য। কারণ, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে। এ অবস্থার মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে চাপ পড়বে। বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সরকারকে ঋণ দিতে মানি সাপ্লাই বাড়ায় তবে মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়বে।’
বাজেট ঘাটতি গত বছর ছিল এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এবার ঘাটতি বাড়ার কারণ বাজেটের আকার আর ডিজিপির আকার বৃদ্ধি। বরাবর বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকে। এবারও এই হার অতিক্রম করছে না।
সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ খাতের বদলে বিদেশের দিকে নজর দেওয়ার পক্ষে। বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থ অভ্যন্তরীণ খাত থেকে না নিয়ে দাতা সংস্থাদের কাছ থেকে নেওয়ার পক্ষে। এতে প্রকল্পের মানও ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ, অর্থ দিলে বিদেশিরা প্রকল্পের গুণাগুণ মানও পর্যবেক্ষণ করে।
নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় এবার ঘাটতি ১৬ দশমিক চার শতাংশের বেশি হবে। তবে তা জিডিপির তুলনায় পাঁচ শতাংশের মধ্যেই থাকতে পারে। আর তাতে সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্রে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে না সরকারকে। ফলে ঘাটতি টাকার অংকে বাড়লেও সরকারের ওপর চাপ কমবে।’
সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি
এতদিন যে কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারত। তবে উচ্চবিত্ত এমনকি প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্র কিনছে- এমন প্রমাণ পেয়ে চলতি অর্থবছর থেকেই নানা কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে। সেগুলো হলো- সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে, এক লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরটি সার্টিফিকেট (টিআইএন) লাগছে। এই কড়াকড়ি আগামী অর্থবছরেও রাখছেন মুস্তফা কামাল।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের তুলনায় সুদ বেশি হওয়ায় মানুষ ব্যাংকে জমার বদলে সঞ্চয়পত্র কিনছে। এতে সরকারের ওপর সুদের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। সঞ্চয়পত্র প্রবীণ, একা নারী আর যারা বিনিয়োগ করতে পারবে না, তাদের জন্য রাখা উচিত।’
নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, ‘সংশোধিত বাজেটের তুলনায় সরকার ৪০ শতাংশ ঋণ কম নেবে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে। অর্থ বিভাগ এখন সঞ্চয়পত্র বিক্রির আইন ঠিকঠাক করছে। সরকার আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে।’
চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটে এটি দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তবে জুলাই থেকে মার্চ মাসে বিক্রি হয়েছে ৬৮ হাজার ৯৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রের সুদ হার সর্বোচ্চ ১১ দশমকি ৫২ শতাংশ হারে বাড়ায় বছরের শেষ দিকে ব্যাপকহারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.