প্রশান্তি ডেক্স॥ প্রকৃতির অপার অপরুপ রুপের লীলাভূমি আমাদের কক্সবাজার জেলা। কক্সবাজার জেলা নিয়ে কত গান কবিতা গল্প উপন্যাস ভ্রমণ কাহিনী লেখা হয়ে তার সঠিক হিসাব আমার জানা নেই।
বিখ্যাত কবি মোহাম্মদ রফিক, নির্মলেন্দু গুণ, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতা বাংলা ভাষা কে সমৃদ্ধ করেছে।
ধীরাজ ভট্টাচার্য, সুনিল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ুন আহমদ, নৃত্যাচার্য বুলবুল,শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কক্সবাজার জেলা কে নিয়ে লিখেছেন।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রাজর্ষী উপন্যাসে রামু হয়ে বার্মা ভ্রমণের উপাদান পাওয়া যায় বলে গবেষকেরা বলেন।
প্রেম প্রকৃতি দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সুমুদ্র পথে বার্মা ভ্রমণের সময় বেশ কিছু গান কস্তুরা ঘাটেই লিখেছেন বলে গবেষকেরা মন্তব্য করেন।
মহামতি গৌতম বুদ্ধের একটি দন্ত রামুর রামকোট বৌদ্ধ বিহারে সংরক্ষিত আছে এমন ইতিহাস ও পাওয়া যায়।
বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক শরত চন্দ্র তার পথের দাবি উপন্যাস টিও নাকি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্যে লেখার উপাদান বার্মা থেকে কক্সবাজার বিশেষ করে রামু হয়ে ফেরার পর লেখা।
এমন আরো অনেক তথ্য দেয়া যাবে। কিন্তু তথ্য ভারি হয়ে গেলে পাঠিকারা বিরক্ত হবেন,আমিও লক্ষ্যচ্যুত হবো।
সুপ্রিয় পাঠিকারা এবার আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই প্রেম ভালোবাসা আবেগ বেদনার নাম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
একদা আমাদের এই কক্সবাজার জেলা,সৈকত অঞ্চল ও শহর কে বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর নগরী বলা হতো। তাই বিখ্যাত ব্যাক্তিরা রোগাক্রান্ত হলে,স্বাস্থ্য জনিত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্যে রোগীদের ডাক্তারেরা কয়েকদিন কক্সবাজার ঘুরে ও যাপন করে আসার জন্যে পরামর্শ দিতেন। আমরাও আমাদের পরিবেশ পরিচিতি নামক হাই স্কুলের ভূগোল বইয়ে কক্সবাজার কে নিয়ে একটি চমৎকার গদ্য পড়েছি। এই গদ্য থেকে ৫নাম্বারের একটি প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করতে হতো। মনে পড়ে আপনাদের।
তো এসব মিলিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন কলকাতায় লেখা পড়া করতেন আর এক সমুদ্র সন্তান ভারত বর্ষের বিখ্যাত রাজনৈতিক তাত্ত্বিক নেতা,কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী চেতনার গুরু কমরেড মোজাফফর আহমদ এর সাথে সখ্যতা ছিলো। তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান (খোকা) কেই বৃটিশ উপনিবেশ এর একটি জলন্ত উদাহরণ হিসাবে সন্দিপ ও কক্সবাজার সম্পর্কে উৎসাহিত করেন।
সেই প্রেরণা ও নিজের চিন্তা ধ্যান জ্ঞান কর্মে পরিনত করার জন্যে তিনি সমগ্র বাংলাদেশ নিয়েই তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পরিকল্পনা। বাস্তব মুখি স্বপ্নমুখর শেখ মুজিবুর রহমান প্রাকৃতিক খনিজ,গ্যাস,পাহাড,লবন,খনিজ লবন,কাঁচ বালি,বিভিন্ন মৌল পদর্থের উৎস ভূমি কক্সবাজার জেলা।
আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক কারনে কক্সবাজার অসম্ভব একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল
পাহাড় নদী সাগর মেখলা প্রকৃতির এই লীলাভূমি আছে পাহাড়ি দ্বীপ, পাথুরে দ্বীপ আর স্বাভাবিক পলিজমা দ্বীপ।
এ জেলা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক গুলি স্বপ্ন দেখতেন,নিয়েছিলেন কিছু কিছু উদ্যোগও। সেই সব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরন্তর চেষ্টা করছেন।
১৯৫৪ সনে পাকিস্তান সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন শেখ মুজিবুর রহমন। আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রী সভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব নেন।
যুক্তফ্রন্ট সরকার যে ক’দিন স্থায়িত্ব লাভ করে সেই ক’মাসের মধ্যে তিনি সমুদ্র শহর কক্সবাজার বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থকর নগরী ও পর্যটন বান্দব নগরে পরিনত করতে মনস্থির করেন।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে কিছু কর্মসূচি হাতে নেন।
ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে কক্সবাজার কে রক্ষার জন্যে প্রথমেই সৈকতে ঝাউ বাগান সৃজন করেন।আর দ্বীপাঞ্চলের মানুষ ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্যে মুজিবকিল্লা তৈরি করনে।
আজ মুজিবকিল্লার নিদর্শন গুলি হারিয়েগেছে। যা মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও অন্যান্য ইউনিয়নে থাকার কথা। ঐ অঞ্চলের ময়মুরুব্বি যারা এখনো বেচে আছেন তারা বলতে পারবেন। এই মুজিব কিল্লা তিনি শুধু মহেশখালী নয় কুতুবদিয়া, সন্দিপ ও বরিশাল ভোলায় গড়েতুলেন।
কালের আবর্তে ও রাজনৈতিক কলহ বিদ্ধিষে তার আজ কোন স্মৃতি চিহ্ন আছে কিনা আমি জানিনা। এবং আমার পক্ষে সেই সুযোগও নাই।
লিখতে বসছি কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন নিয়ে ফিরে আসি সেই দিকে।
কক্সবাজার কে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ একটি দৃষ্টি ও ভাবনা ছিল তা আমরা তাঁর কর্মসূচি গুলি দেখলেই বুঝতে পারি।
আজকের যে হিলটপ সার্কিট হাউস এটিও তারই উদ্যোগ। যুক্তফ্রন্ট সরকার যদি পশ্চিমা সামরিক হায়েনারা যদি ভেঙ্গে নাদিত আজকের ইটের জঙ্গলের কক্সবাজার তা হতো পরিবেশ বান্ধব স্বাস্থ্যকর পর্যটন শহর।
কক্সবাজার কে একসময় বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর নগরী বলা হতো।এখন হরিলুটের ইটের জঙ্গল বলা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুক্তফ্রন্ট সরকারের বানিজ্য মন্ত্রী তখন এই মন্ত্রণালয়ের অধিনে পর্যটন অধিদপ্তরও ছিলো। যা মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলাদা করে এটি কে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠন করা হয়।যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যোগাযোগ ও পর্যটন খাতটি পরিচালিত হতো।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন নীতিমালা অনুযায়ী একটি পুরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়।
কিন্তু কক্সবাজার জেলা প্রশাসনও পর্যটন কর্পোরেশনের নেতৃত্বে যে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কয়েক জনের কাছে আমি জানতে চাইলাম,বঙ্গবন্ধুর খসড়া পর্যটন নীতিমালা সম্পর্কে,তারা কিছু জানেন কি না।তারা এ নিয়ে বিব্রতবোধ করেছেন।
এসব কারনে কক্সবাজার পর্যটন ব্যবস্থাপনায় চলছে অরাজক পরিস্থি
সামনে আওয়ামীলীগ নেতা নেপথ্যে জামাত বিএনপি ও বিভিন্ন মাদক সিন্ডিকেট।
এখান থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতি ও শেখ হাসিনার সরকার ব্যবস্থাপনা কে রক্ষার উদ্যোগ নেই। শেখ হাসিনা যাকেই বিশ্বাস করেন তাকেই ঘিরে ধরে অপরাধী চক্র। বদনাম হয় আওয়ামীলীগের বদনাম হয় শেখ হাসিনা সরকারের। অপরাধীরা পেয়ে যায় পার।
আজ এ পর্যন্তই।
১৩জুন০১৯
লেখক: নব্বইয়ের নির্যাতিত ছাত্রনেতা ও কবি। কক্সবাজার