মুক্তিযোদ্ধা জিয়া যেভাবে রাজাকার হলো

প্রশান্তি ডেক্স॥ মেজর জিয়াকে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা বলেন। একটা সময় পর্যন্ত আমিও বলতাম। এখন বলিনা। অনেকেই স্বাধীনতার ঘোষক বলেন। আমি তাতে স্পষ্টতই দ্বিমত করি। জেনেশুনে আমি আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভুল ইতিহাস শিক্ষা দিতে পারিনা। গতকাল ছিল ৩০শে মে, মেজর জিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু দিবস। একজন মানুষ হিসাবে আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।jeya
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর নানা ঘটনাবলি পেরিয়ে ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের এই সেক্টর কমান্ডার। এর ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের ৩০ মে সেনা বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি অংশ তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। বিরল চরিত্রের মানুষ ছিল মেজর জিয়া। পৃথিবীর ইতিহাসেও এমন চরিত্র বিরল। যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছিল, ক্ষমতায় বসে সেই চেতনাই পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল এই মেজর।
কোনো দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার সংগ্রাম প্রতিদিন সংঘটিত হয়না। হাজার বছরে ঘটে এমন ঘটনা। আর অতি সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সেই সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ পায়। তার সে সৌভাগ্য হয়েছিল। এদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল মেজর জিয়া। কিন্তু আশ্চর্য, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইতিহাসে মীর জাফরের পাশে নিজেকে দাঁড় করিয়ে গেল।
শুধু তাই নয়। একই ভূপ্রকৃতি, একই জাতি, একই ভূখন্ড, একই ভাষাভাষীর মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আজ বাঙালী জাতি স্পষ্টত দুটি ভাগে বিভক্ত। আর এর সূক্ষ্ম ও সুদক্ষ কারিগর মেজর জিয়া। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে দেশে স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তাদের নিয়ে যে রাজনৈতিক দল গঠন করে গেছে যা আজ ক্রান্তি কাল অতিক্রম করছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য তার সৃষ্ট রাজনৈতিক প্লাটফরমটি এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে। সময় এসেছে মেজর জিয়াকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার। আজ মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়ার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী মেজর জিয়ার পার্থক্য খুঁজে তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে দেশের মানুষ এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে।
তবে এ কথাও সত্যি, ইতিহাস আমরা কেউ চাইলেই বদলে দিতে পারবনা। আমি চাইলেই আগামী প্রজন্ম তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মেনে নিবে সে আশা করা মোটেও যুক্তিযুক্ত হবেনা। ইতিহাস সত্যকে ধারন করেই লিপিবদ্ধ হয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সেই শুদ্ধ ইতিহাসই শিখবে। আমার মনগড়া কল্পকাহিনী নিক্ষিপ্ত হবে আস্তাকুড়ে। মেজর জিয়া কিভাবে চিহ্নিত হবে এবং হচ্ছে ইতোমধ্যেই সে নমুনা শুরু হয়ে গেছে। এই প্রজন্ম বুঝতে পেরেছে একজন মুক্তিযোদ্ধা কেমন করে রাজাকারে রূপান্তর হয়ে জাতির পিঠে সওয়ার হয়েছিল।।
লেখকঃ উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published.