প্রশান্তি ডেক্স॥ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। এ মেলায় দেশের নামিদামি নার্সারি মালিকরা স্টলে গাছের পসরা সাজিয়েছেন। দেশি-বিদেশি প্রায় হাজার প্রজাতির গাছ স্থান পেয়েছে এ মেলায়। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা দামের গাছ রয়েছে এ মেলায়। শুক্রবার মেলার দ্বিতীয় দিনে অনেকেই দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় বৃক্ষ রোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে মেলা পরিদর্শনে দেখা গেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি ১৭২টি প্রতিষ্ঠান স্টল নিয়ে বসেছে। তারা নানা রকম উন্নত গাছের চারা, ফল, ফুল, চারা-কলম, বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ, যন্ত্রপাতি বই, তাজা ফুল, অর্কিড, ক্যাকটাস, বনসাই, ঘরের অর্নামেন্টাল ট্রি, মসলার চারা থেকে শুরু করে হাজার প্রকার দেশি-বিদেশি বনজ, ফলজ, ওষুধি গাছের সমাহার ঘটিয়েছে এ সব স্টলে।
বৃক্ষমেলায় স্টল নিয়েছে কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি। কথা হয় এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার খন্দকার শরিফুল আলম রানার সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রশান্তি নিউজকে তিনি বলেন, ফুল, ফল, সবজি, বনজ, ওষুধি মিলে এবার এক কোটি চারা তৈরি করেছি। মেলা ছাড়াও সারা বছর চারা বিক্রি করি। এ ছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাড়ির ছাদে ছাদ বাগান যারা করছেন তাদেরও আমরা গাছ সাপ্লাই দেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ স্টলে পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকার গাছ আছে।
পাঁচ লাখ টাকার গাছ কোনটি জানতে চাইলে ৭০ বছরের জিংসাং এর একটি বনসাই দেখিয়ে তিনি বলেন, এর দাম ৫ লাখ টাকা চাচ্ছি। একজন গ্রাহক গত বৃহস্পতিবারই আড়াই লাখ টাকা বলেছেন।
পাঁচ লাখ টাকাই নেবেন না কিছু ছাড় দেবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে গাছটি নেবেন তাহলে হয়তো ১০-২০ হাজার টাকা কমাতে পারি।
তিনি বলেন, প্রতি বছরই আমরা এ মেলায় অংশগ্রহণ করি। গত বছর আমরা ৯০ লাখ টাকার গাছের চারা বিক্রি করেছিলাম। গত বছর ভালো সাড়া পেয়েছি এবারও আশা করছি পাবো। এ মেলায় শুধু গাছ বিক্রিই নয়, অনেক অর্ডারও আমরা নিয়ে থাকি।
মেলার আরেকটি স্টলের নাম বরিশাল নার্সারি। এ স্টলে একটি চায়না বট বনসাই রয়েছে। এ গাছটির বয়সও প্রায় ৭০ বছর বলে জানান স্টলের একজন কর্মচারী। এটাও তারা ৫ লাখ টাকা হাঁকছেন। এ স্টলে আম, কাঠাল, বনজ, ওষুধি ছাড়াও ঝুলন্ত অর্কিড (যা টবের নিচ দিয়ে ঝুলে থাকে)। এ গাছটির মূল খাদ্য নারিকেলের ছোবা। এ ছাড়া এ স্টলে কিউজাই আম, সীডলেস গাব, পিচফল, ডুরিয়ান, লাল লংগান, লোকাটসহ প্রায় ৪০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এই স্টলে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় এসেছেন শাহরিয়ার আলম। মোহাম্মদপুরে পাঁচ কাঠা জায়গায় বাড়ির ছাদে তিনি ফলজ, ওষুধি ও সবজি বাগান করেছেন। উনি তিনটি আমগাছ কিনেছেন ২১ হাজার টাকা দিয়ে। ফজলি, রাজভোগ ও ব্যানানা ম্যাংগো। প্রতিটি গাছেই ১০ থেকে ১৫টি করে আম ঝুলে আছে। গাছগুলো যখন ভ্যানে তুলছিলেন তখন কথা হয় শাহরিয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে গাছগুলো আমার ছাদ বাগানে নেই সেই প্রজাতির গাছ আমি ক্রয় করছি মেলা থেকে। প্রতি বছরই কিছু না কিছু গাছ ক্রয় করি।
কথা হয় পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক খন্দকার মো. জাকারিয়ার সঙ্গে। মেলার তথ্য কেন্দ্রে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে মানুষ এখন অনেক সচেতন। আজ ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় দুটি সৌদি আরবের খেজুর গাছ বিক্রয় হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ১০২টি স্টল এবং ৭০টি প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১০ বছর আগেও মানুষ এত সচেতন ছিল না। নার্সারি মালিকদের ট্রেনিং দিয়ে সচেতন করা হয়েছে বলেই আজ বৃক্ষরোপণ অভিযানে বিপ্লব ঘটছে। আমরা আজ ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা কেজি দরে সুস্বাদু আম খেতে পারছি। বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই এই মেলার আয়োজন।