কঠোর এমনকি কঠিন বাস্তবতায়ও বিবেক কথা বলে। বিবেক সবসময় কড়া নাড়ে; সচেতন করে। কিন্তু বিবেকের সেই কড়া নাড়া ও সচেতন করাকে কম মানুষই কাজে লাগিয়ে থাকে। আবার ভুল সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও বিবেক কিন্তু মনোজগতে প্রশ্ন জাগায় এবং বিবেকের ধংশন সয্য করে মোকাবিলা করতে হয় কঠোর বাস্তবতার। মানুষের বিবেক যত অষাঢ়ই হউক না কেন, বিবেকের ধংশন কিন্তু প্রতিনিয়তই সয্য করতে হয়। আমাদের দেশে এখন বিবেক অচেতন মানুষই বেশী আর যাদের বিবেক এখন জাগ্রত; তাড়া জড়াগ্রস্থ বা বহুমাত্রীক বিবেক ব্যবহারের কারণে অকার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তারপরও আমাদের কামনা বিবেক সুপ্রসন্ন হউক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, প্রত্যহিক কাজকর্মে, নিত্যদিনের চিন্তা ও চেতনায়।
বর্তমান সময়ে বিবেকের মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ নতুবা আমরা আমাদের উন্নয়ন ও আগ্রগামীতাকে কলুষিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবো না বা দ্বিধাগ্রস্থ হবো না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা আমাদের প্রয়োজন। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের ঘরের লোক দ্বারা সরকারেরই ঘরের লোকাক্রান্ত হয়ে আইনের ম্যারপ্যাচে জর্জরিত। এই বেভূলা দশা থেকে সরকার সময়োচিত পদক্ষেপ নিতে না পাড়লে হয়ত সামনে আমাদের দুর্দিনও দেখতে হতে পারে। তাই সরকারের এবং দলের ঘর গোছানোর এখন উপযুক্ত সময়। দলীয় কর্মী, সমর্থক এবং নেতাদের মতবিরোধ কমিয়ে আনা এবং কর্মীদের ও সমর্থকদের আইনি ঝামেলা বা তথ্যপ্রযুক্তি মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া আশু প্রয়োজন। কারণ এই কর্মীরাই বা সমর্থকরাই বিপদের কান্ডারী এবং রাজপথের পাহাড়াদার এমনকি দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র মোকাবেলার হাতিয়ার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দলের ও দেশের সুনাম বৃদ্ধির কারিঘর। কিন্তু তাদেরও অনেকেই আজ তথ্যপ্রযুক্তি আইন ব্যবহার করে পরিবারশুদ্দ হতাশা ও আতঙ্কগ্রস্থ করে রেখেছে যা আগামীর জন্য ভয়ঙ্কর এক দৃষ্টান্ত এমনকি বিপদেরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই সকল ঘটনাপ্রভাহে আওয়ামী রক্তও সঞ্চালিত হতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
যারা দলকে ভালবাসে তারা দলের কাছে কোন কিছু প্রত্যাশা করে না বরং দলের প্রয়োজনে জীবন বিসর্জন দিতেও কার্পন্য করে না। কিন্তু সেই লোকগুলোর বিচ্ছিন্নতা এবং দলবিমুখতা সৃষ্টিকরা দলের বিপর্যয় ডেকে আনা ছাড়া আর কি? যারা আজ দলের এবং সরকারের ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করে যাচ্ছেন তারাতো দলের দুর্দিনে রাজপথে কিংবা সাধারণ ভোটারের কাছে অথবা অর্থনৈতিক সহযোগীতার এমনকি মৌনতার অবস্থায় পর্যন্ত ছিলেন না। কিন্তু আজ দল ক্ষমতায় আর এই সুযোগে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ-সম্পদ এবং দুর্নামের বোজাটুকু চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে দল এবং সরকারের কাধেঁ। এহেন অবস্থায় দলের উচিত নেতাদের সম্পদের হিসাব নেয়া এবং গোয়েন্দা নজরদারীতে রাখা। যদি লাগাম টেনে ধরা না যায় তাহলে আগামীর অশনি সংকেত এখনই উপলব্দি করতে কোনরকম অসুবিধা হবে না। তাই বিবেক জাগ্রত করে দলের সুনাম বৃদ্ধি এবং দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সরকারের পাশে থেকে নিজেকে গর্বিত করুন। সরকারের কাঁধে আপনার দায় চাপানোর কাজ থেকে বিরত থাকুন। বিভিন্ন দল থেকে আগত এমনকি ঘাপটি মেরে নিউট্রাল ভুমিকা পালন করে আজ আপনি সরকারের ক্ষমতায় এসেছেন সুকৌশলে। কিন্তু যখন এসেছেন তখন একটু সমালোচনা সহ্য করুন এবং ধৈয্য ও ক্ষমা প্রদর্শন করে সরকারের কর্মকান্ডকে সম্প্রসারিত করুন। আগামীর ক্ষমতা নিশ্চিত করতে স্থিতিশীলতা এবং চলমান ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে বরং আরো জনবান্ধব হয়ে এগিয়ে যেতে সতর্ক হয়ে পথচলায় বিবেক জাগ্রত রাখুন।
দলের প্রয়োজনে কর্মীদেরকে মূল্যায়ন না করুন, অন্তত অপমান করবেন না বরং ক্ষমা এবং ভালবাসা প্রদর্শন করুন। কর্মীদের সুখে দু:খে পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তা আজ বিলীন কিন্তু লৌকিকতা ছেড়ে এখন বাস্তবতার মাঝে নিজেদেরকে রাখুন। কর্মী-সমর্থকরাই প্রাণ আর কর্মীদের বা সমর্থকদের কথা শুনুন। তবে আমাদের নেতারা, মন্ত্রী-এমপিরা এত ব্যস্ত-যে, এখন আর বিবেকের কথা শুনারও সময় নেই। যেখানে ওয়াদা করেন সেখানে স্তুপীকৃত ওয়াদার চাপে সবই ভুলে গিয়ে বিপরিমুখী আচরণে দৃশ্যমান থাকেন। মানুষ যখন কোথাও কোনরকম ভালবাসা, ক্ষমা এবং প্রয়োজনীয় অধিকারটুকু হারিয়ে ফেলে তখনই একমাত্র আল্লাহর স্মরণাপন্ন হন। আর তখন আরো পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে পড়েন এবং সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খোদার সাহায্যে বিপদ, ক্ষমা ও ভালবাসা এমনকি অধিকারবোধটুকু ফিরে পান। আজ অনেকেরই সেইরকম ত্রাহী ত্রাহী অবস্থার মুখাপেক্ষি। তবে এই ক্ষেত্রে মমতাময়ী জননী বিশ্ব মানবতার মা এখনও জাগ্রত রয়েছেন কিন্তু তাঁর কাছেতো এইসকল ঘটনা উপস্থাপিত হয়নি বা সবাইতো তার স্মরণাপন্ন হতে পারেননি; তাই হলো জামেলা। আর এই জামেলার জন্য মানুষ এখন সৃষ্টিকর্তার স্মরণাপন্ন বেশী হচ্ছেন। কারন সৃষ্টিকর্তার কাছে যাওয়া সহজ। সেখানো কোন প্রটোকল বা জটলা অথবা কোনরকম বৈশম্যের স্বিকারও হতে হয় না। সকল রাষ্ট্রনায়কের রাষ্ট্রনায়ক যিনি, সকল বিচারকের বিচারক যিনি, সকল রাজাদের রাজা যিনি; তিনিই হলেন আমাদের আল্লাহ; আর যার কাছে আমাদের সকলেরই প্রত্যাবর্তন হবে আর তাঁরই নিকট হইতে আমরা প্রকৃত সুখ ও শান্তির চিরস্থায়ী পুরস্কার পাব; অথবা যদি অকল্যাণের তরে জীবন অতিবাহিত করে থাকি তাহলে পাব সেই অকল্যাণের পুরস্কার চিরস্থায়ীভাবে দোযখে বসবাস করার অধিকার।
আসুন আমরা নির্যাতিত ও নিপিড়িতরা এখন সিদ্ধান্ত নেই কার স্মরণাপন্ন হবো! আমরা দোয়া করি যেন আল্লাহ আমাদের নেতাদের রহমত করেন এবং ওয়াদা রক্ষা করতে এমনকি মানবতার সেবায় নিজেদের সেবকের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ রাখেন। দলের কাছে মিনতি রাখি দলীয় সমর্থক ও কর্মীদের রক্ষা করুন এবং দলকে শক্তিশালী করুন। সরকারের কাছে মিনতি করি দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের ঝামেলাগুলো নিষ্পত্তি করে দলীয় এবং সরকারের যোগসূত্র আরো শক্তিশালী করুন। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রয়োজনে এখনই দল ও সরকার শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। যাতে করে এদেশের সকল মানুষই আগামীতে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকেন। আমার কাছে অনেক প্রমান আছে এবং আমি নিজেও আমার দল দ্বারা নিগৃহীত যা কাউকে বলতে চাই না বা বলবও না; দলকে ভালবাসি এবং সরকারকে ক্ষমতায় রাখার কারিঘরদের একজন হিসেবে নিজেকে গর্বিত দাবিদার মনে করি। আমি বলতে চাই যে; শুধু যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই সকল সমস্যার সমাধান করবেন তা কিন্তু নই, দলীয় নেতা, এমপি, মন্ত্রীরাও ঐসকল সমস্যার সমাধান করতে পারেন এবং আগামীর মজবুত দলীয় ভিত্তিকে পাকাপোক্ত করতে পারেন। কিন্তু সবই এখন দলীয় প্রধান এবং রাষ্ট্র প্রধানের কাধেঁ চাপিয়ে দিয়ে থাকেন। এটা ঠিক নয়। দলীয় ও রাষ্ট্রপ্রধান শুধু আমাদের দেখাশুনাতে ব্যস্ত না থেকে চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটাই আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যাশা।
তারপরও বলব দলীয় প্রধান এবং সরকার প্রধান এখনও বিবেকবান ও ন্যায়বিচারক; তাই আপনি আপনার মনোভাব এবং আদেশ বাস্তবায়নে দলীয় নেতা-কর্মী, এমপি-মন্ত্রীদের তদারকিতে রাখুন। তাদের মাধ্যমে আপনার ন্যায়বিচার এবং ভালবাসা ও ক্ষমা দলীয় সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের উপর পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যবস্থা নিন। আমাদের দরকার দেশোন্নয়নের পাশাপাশি দলীয় সমৃদ্ধি ও সম্পৃতি বজার রাখা এমনকি বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে পৃথিবীর কেয়ামতের আগপর্যন্ত রাষ্ট্রসেবায় নিয়োজিত থাকা। আমাদের মাননীয় মন্ত্রী ও দলের সাধারন সম্পাদক সাহেব মাঝে মাঝে সত্য উপলব্দি করে কথা বলে থাকেন কিন্তু তিনি যে তা বাস্তবায়ন করেন তা কিন্তু নয় বরং কথার ফুলঝুড়ি হিসেবেই ব্যবহার করে থাকেন। তারপরও বলব বিবেক জাগ্রত রাখার জন্য এবং বিবেকের তাড়না বোজার জন্য ধন্যবাদ। শুধু তাই নয় আমরা আমাদের বিবেকের তাড়নাই শত কষ্টের বোঝা নিজেদের কাধেঁ নিলাম আর লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গার আশ্রয় হলো বাংলাদেশে। কিন্তু বিশ্ব বিবেক ছিল এর বিরোধিতায় মুখর এবং এখনও তারা তাদের খোলস পাল্টে ঐ মহা সমস্যার সমাধানে কিছুই করতে পারেনি এবং আগামীতে পারার কোন সম্ভাবনাও জাগাতে পারেনি। সংসদে মানবকণ্ঠি মতিয়া আপনার বিবেক প্রসূত প্রতিবাদও আমাদেরকে আশান্বিত করে। বিবেক জাগ্রত রাখুন যাতে লুটে-পুটে খাওয়ার অভাবি স্বভাব দুর হয়। পরিবেশ রক্ষায়ও আমাদের বিবেককে কাজে লাগাতে হবে নতুবা আগামীর জন্য দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়া সম্ভব হবে না।
সেবার মান উন্নয়ন এবং তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেক জাগ্রত অবস্থান বজার রাখতে হবে। আগামীর জন্য সবার আগে আমাদের নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন বিবেকের অধিকারী হতে হবে; কাজে বড় হতে হবে, কথায় নয়। দুনিয়াবী রাজত্ব ত্যাগ করতে হবে এবং আখেরাতের কামীয়াবীর তরে এমনকি সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে নিমজ্জি¦ত থেকে মানব সেবায় নিজেকে সেবকের ভূমিকার রাখতে হবে। সকল ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন বিবেকের তাড়নার প্রকাশ ঘটাতে হবে। প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এই কথার মাহাত্ব্য অনুধাবন এবং বাস্তবায়ন কার্যকর করতে হবে। এই কঠিন রূঢ় বাস্তবতায় আমাদের বিবেক জাগ্রত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আর এই এগিয়ে যাওয়াই হউক আমাদের আগামীর নতুন কর্মোদ্যোগি চ্যালেঞ্জ।