কোথায় আজ মানবতা

Vector-Smart-Object-1-300x127[1]মানবতা বিসর্জনের চ’ড়ান্ত দৃষ্টান্ত হলো অন্যায়কে মৌনতা দিয়ে সমর্থন জানানো। স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার মাধ্যমে মানবতা বিপর্যয়ের বিস্ফোরণ এর চুড়ান্ত রূপ বিশ্বাবাসী দেখেছে। মানুষ দাঁড়িয়ে দেখেছে দৃশ্য আর কেউ কেউ ভিডিও ধারন করেছে কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি এমনকি জীবন বাঁচাতে এগিয়েও আসেনি। এটাই কি আমাদের প্রাপ্য ছিল; আরো কতো কিছু দেখার প্রত্যাশায় এখন বোবা জাতি। বোবা বললেও ভুল হবে- কারণ বাক স্বাধীনতা হারিয়েছে এমনকি প্রতিবাদের ভাষাটুকুও হারিয়ে নূয্য এবং ভারাক্রান্ত এই জাতি। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে প্রায় বিকলাঙ্গ ভাব প্রদর্শন করেছে ঐ দৃশ্যমান ঘটনার বহি:প্রকাশে। আসলেই কি আমরা এমন ছিলাম? যদি না থাকি তাহলে এখন এই উন্নয়ন এবং মানব সূচকের সার্বিক দিকগুলির ক্রমোন্নতির ভরপুর সময়ে আমাদের এই মনোবল হারানোর অধপতন কেন তা খতিয়ে দেখা উচিত।
যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে মানবতার উদাহরণ সৃষ্টি করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এবং বিশ্ব শিক্ষার পাঠ্যক্রমে এই শিক্ষাকে অন্তর্ভূক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন বিশ্ব শিক্ষালয়গুলো সেখানে আমাদের কেন এই বেহাল দশা। কোথায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, চেতনার ধারক ও বাহক আজ কোথায়? মানবতার বিপর্যয় দেখার পর আমাদের সরকার এবং সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের টনক নড়ে এবং বিভিন্ন অভয়বানী শোনানো থেকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে জনমনে স্বস্তি আনয়নের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিচারের মাধ্যমেই কি সবকিছু শেষ অথবা আশ্বাসের মাঝেই কি সবকিছুর সমাধান। শক্তিশালী ও গঠনমূলক সমালোচনার বিকল্প নেই এমনকি প্রতিবাদের ভাষা ও চর্চার কোন বিকল্প নেই। যখনই প্রতিবাদহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে তখনই সকল ইতিবাচক ফলপ্রসুতার ভঙ্গুরতা প্রত্যক্ষ হবে এবং নেতিবাচকতার জয়জয়াকার চারিদিকে দেখা যাবে।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখন ভেঙ্গে পড়েছে, ন্যায় নীতি ও আদর্শের ধারাবাহিকতা মলিন হয়ে বিসর্জিত হচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতেই মানবতা পলায়নপর অবস্থায় বিরাজমান রয়েছে। ভীতি সঞ্চারের জয় জয়াকারের অবস্থান দৃশ্যমান আর তাই সামাজিক মেরুদন্ড বিকলাঙ্গতায় পর্যবসীত হয়েছে। ধারাবাহিক নেতিবাচক ঘটনার পরম্পরাই নতুন আঙ্গিকে ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে কিন্তু এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কেন? কোথায় আমাদের বসবাস এবং আগামীর গন্তব্য? জাতি হিসেবে যেখানে আমাদের গর্ব করার সকল সুযোগ উন্মোচিত সেখানে কেন আমাদের মাথা নোয়াবার কার্যক্রম দৃশ্যমান। আসুন আমরা এর প্রতিবন্ধক দিকগুলো একে একে চিহ্নিত করি এবং দ্রুত অপসারন করে আগামীর কল্যাণের তরে এগিয়ে যায়।
ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করি, আইনের শাসনের অপব্যবহার বন্ধ করি, কৌশলী ভুমিকার চর্চায় যবনীকাপাত টানি, অন্যকে ক্ষমা করার প্রবনতায় গতি সঞ্চার করি। হয়রানি এবং বাক-স্বাধীনতা হরণকারী গোপন কার্যক্রমের ইতি টানি। সরকারের মুখোজ্জ্বল করি এমনকি আগামীর ইতিবাচক করনীয়তে মনযোগী হই। প্রত্যেকের কৃতকর্মের ভার সৃষ্টিকর্তার দরবারে সোপর্দ করি এবং তাঁরই কাছ থেকে পুরস্কার এবং তিরস্কার পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। নিজে থেকে অন্যের ক্ষতির চিন্তা না করি এবং অন্যকে ঘায়েল করার জন্য নিজেকে হারাপ কাজে যুক্ত না করি। আজকের দিনটা আমাদের আর আগামীকালটা যেন আমাদের থাকে সেইজন্য সতর্কতার সহিত অগ্রসর হই। অন্যের দিনকে নিজের দখলে নেয়ার জন্য যেন কিছু না করি আর যদি করেও থাকি তাহলে এখন থেকেই যেন এর ইতি টানি। নতুবা ভয়ঙ্কর এর পরিণতির অপেক্ষার প্রহর গুনার আগেই সমস্ত অহমিকা এবং আত্মতৃপ্তি ধুলিসাৎ হয়ে যাবে।
উপরে একজন আছেন যাকে দেখা না গেলেও তিনি সদা উপস্থিত এবং সকল কিছুই তিনি দেখছেন এবং যার যার কৃতকর্মের প্রতিফল দিতে প্রস্তুত আছেন এবং আমাদের তাঁরই নিকট ফিরে যেতে হবে; এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় আর অবশিষ্ট নেই। তাই যাই করি না কেন তা হয় সকলের মঙ্গলের জন্য, অপকারের জন্য নয়। ইতিবাচক এবং ভালগুণ বা মানবিক গুণাবলী গুলো সবই আমাদের সৃষ্টিকর্তার আর তিনি এই গুনগুলি বা তাঁর সমস্ত গুনাবলীই আমাদেরকে দিয়েছেন যেন তাঁরই মত হয়ে সকলের কল্যাণের তরে ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু কি আমরা সকলের কল্যাণের তরে ব্যবহার করছি ? না কি অকল্যাণের তরে ব্যবহার করছি। এখনই ভেবে দেখার বিষয় এবং সেই অনুযায়ী সিদ্দান্ত নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়।
আসুন আমরা আমাদের মানবিক গুণাবলীগুলোকে জাগ্রত করি এবং চর্চার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে ঝাপিয়ে পড়ি। এখন যা অবশিষ্ট রয়েছে তা আর বিলীন হতে দেয়া যায় না। বরং এই বিলীনতা থেকে রক্ষা করাই এখন আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। জয় হউক মানবিক গুণের এবং মানবিকতার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.