সেই প্রবাসীরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে কী পান,যাদের কারণে ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ

প্রশান্তি ডেক্স॥ রেমিটেন্স যোদ্ধা হীরা মিয়ার কথা মনে আছে? বাংলাদেশে নজিরবিহীন রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশে বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। হীরা মিয়ার মতো লক্ষ-কোটি প্রবাসী রয়েছেন বিদেশের মাটিতে; যাদের শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থ যাকে আমরা রেমিটেন্স কিংবা প্রবাসী মুদ্রা হিসেবে জানি, তা দিয়েই চরম অর্থনৈতিক মন্দার সময় ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ। অথচ সেইসব প্রবাসীরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে কী পান? দু:সময়ে রাষ্ট্র কি তাদের সহযোগীতা করতে পারে? তারা কি কাঙ্খিত সেবাটা পায় রাষ্ট্রের কাছে?bedashe
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ (বিএমইটি) ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, আশির দশক থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। লিবিয়া, সুদানসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও তখন থেকেই জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, মিশর, মরিশাসসহ কয়েকটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়। নতুন সহস্রাব্দে ব্রিটেন, ইটালি, জাপানসহ এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সৃষ্টি হয় জনশক্তির চাহিদা। বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ অ্যামেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত হয়েছে।
ইরাক, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, স্পেন, টিউনিশিয়া, চিলি, পেরুসহ শতাধিক দেশে বাংলাদেশ বর্তমানে জনশক্তি রফতানি করছে। রফতানি হওয়া এ জনশক্তির সিংহভাগই শ্রমিকের কাজ করে। আরও সহজ করে বলতে গেলে দিনমজুরের কাজ করে তারা। তবে ব্যতিক্রমও আছে। বিদেশে অনেক বাংলাদেশী ভালো অবস্থানেও কাজ করেন। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে উচ্চ পদে কাজ করছেন, ব্যবসা করছেন, করছেন গবেষণা এবং পড়াশুনা করছেন এ সংখ্যাও কম নয়।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশী এখন প্রবাস জীবনযাপন করছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসী কর্মীদের বিপুল অবদানের বিপরীতে তাদের জন্য রাষ্ট্র কী করছে?
বিএমইটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ৩৮টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলছে বাংলাদেশ। এছাড়া ৪২টি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী ও প্রত্যাগত কর্মীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু প্রবাসীরা মারা গেলে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। প্রবাসীরা কখনও কখনও চাঁদা তুলেও লাশ দেশে পাঠান। অথচ আমাদের দূতাবাসগুলো সে খবরও রাখে না।কিন্তু প্রবাসীদের কল্যাণে একটি ব্যাংক গড়ে উঠেছিলো বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে তার কাজ কী? প্রবাসীদের কোটি কোটি টাকা পড়ে আছে এখানে। প্রবাসীদের প্রশ্ন হলো- রাষ্ট্র কেন এখান থেকে অর্থ নিয়ে ক্ষীতগ্রস্থদের পাশে দাড়ায় না?
শুধু তাই নয়, এখান থেকে প্রবাসীরা তাঁদের চাহিদামতো ঋণও পান না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সম্পর্কে সৈৗদি আরব প্রবাসী মামুনুর রশীদ জুমবাংলাকে বলেন, আমি আবেদন করেও ওই ব্যাংক থেকে ঋণ পায় নাই। এই ব্যাংকটি করা হয়েছিল যাঁরা বৈধভাবে বিদেশে কাজের জন্য যাবেন এবং যাঁরা ফিরে আসবেন তাঁদের ঋণ সহায়তা দেয়ার জন্য। কিন্তু এই ব্যাংক আসলে প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।
জানা গেছে, প্রত্যেক কর্মীকে বিদেশে যেতে হলে প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয়। সেই টাকা থেকেই যাঁরা মারা যান, তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। অর্থাত্ৎে, কর্মীদের জমানো টাকাই কর্মীদের দেয়া হয়।কিন্তু বিদেশে গিয়ে প্রবাসীরা যখন বিপদে পড়েন, তখন কোনো সহায়তা পান না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.